চট্টগ্রাম: নগরীর কোন বিলবোর্ড বৈধ, আর কোনটা অবৈধ তা ঠিকমতো জানেন না সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা। এ সুযোগে অসাধু বিলবোর্ড ব্যবসায়ীরা যেমন নকল স্টিকার লাগিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন, তেমনি উচ্ছেদ অভিযানে চালাতে গিয়ে বিভ্রান্তির মুখে পড়ছেন সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তারা।
রোববার এ ধরণের বিভ্রান্তির মধ্য দিয়েই শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও নগর পুলিশের (সিএমপি) যৌথ উচ্ছেদ অভিযান। দ্বিতীয় দিনের এ অভিযানে মাত্র দু’টি বিলবোর্ড ও চারটি খুঁটি অপসারণ করা হয়।
পাঁচ ঘণ্টার অভিযানে সিদ্ধান্তহীনতায় নষ্ট হয়েছে অধিকাংশ সময়। অভিযানের কোন মুহুর্তে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একবার একটি বিলবোর্ড কাটার নির্দেশ দিচ্ছেন তো পরেই বলছেন এটা বৈধ, কাটা যাবে না।
এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে নাজিয়া শিরিন বলেন, মাঠে এসে স্টিকার দেখেই আমরা অবৈধ বিলবোর্ড সনাক্ত করছি। ফলে অনেক সময় কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। হয়তো একটি বিলবোর্ড কাটতে বলেছি, কিন্তু কেউ এসে বৈধ কাগজপত্র দেখালে কাজ বন্ধ করতে বলতে হয়েছে।
দ্বিতীয় দিনের অভিযানে অপসারণ করা দুইটি বিলবোর্ডই নগর যুবলীগের সদস্য মো. আলীর। চারটি খুঁটির মধ্যে তিনটি কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রকাশনা ও গ্রন্থনা সম্পাদক শহীদুল হক রাসেল এবং একটি নগর যুবলীগের সদস্য সনৎ বড়ুয়ার।
সকাল ১১টার দিকে শুরু হওয়া অভিযানের প্রথমেই টাইগার পাস এলাকায় নগর ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আরশেদুল আলম বাচ্চুর একটি বিলবোর্ড অপসারণের নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বোর্ডটির কিছু অংশ কাটতেই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক শেখ জাফর আহমদ মুজাহিদ এটাকে বৈধ দাবী করে ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় ম্যাজিস্ট্রেট বিলবোর্ডটি কাটা বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
শেখ জাফর আহমদ মুজাহিদ বাংলানিউজকে জানান, তিন বছর ধরে তারা বিলবোর্ডটির জন্য সিটি কর্পোরেশনকে কর দিচ্ছেন। কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে ম্যাজিস্ট্রেট এটা কাটার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কাগজপত্র দেখানোর পর কাটা বন্ধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেছি, যেহেতু কাগজপত্র সব বৈধ এটি কাটা যাবে না। আর যদি কোন কারণে সিটি কর্পোরেশনের বিলবোর্ডটি উচ্ছেদের প্রয়োজন হয় তাহলে নোটিশ ইস্যু করে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অন্য জায়গায় শিফট করে কাটতে হবে। ’
বিলবোর্ডটি কাটার সময় আরশেদুল আলম বাচ্চুর প্রতিষ্ঠান অ্যাড ফিল্ম’র নামে ১২ হাজার টাকা জরিমানা নিজেদের খাতায় এন্ট্রি করেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা। কিন্তু পরে, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জরিমানার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
অভিযান চলাকালে এ বিলবোর্ডটি ছাড়াও নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর মালিকানাধীন একটি এবং হাফিজুল্লাহ আমিনের মালিকানাধীন একটি বিলবোর্ড কাটার নির্দেশ দেয়া হলেও পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শামসুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তিনদিনের টানা মাইকিংয়ের পরও অবৈধ বোর্ড উচ্ছেদ না করায় দ্বিতীয় দিনে দু’টি বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান থেকে বিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরমধ্যে মো. আলীর মালিকানাধীন বেস্ট অ্যাড থেকে ১০ হাজার এবং শৈলী ক্রিয়েশন থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়।
এদিকে অভিযানের গতি বাড়াতে কোন উদ্যোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া শিরিন বলেন, শিগগিরই আরো পাঁচটি রেকার যুক্ত করার পাশাপাশি বেশী জনশক্তি কাজ করবে। এছাড়াও, অন্য কোন উদ্যোগ নেয়া যায় কিনা তা পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
অভিযানের শুরুতে বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্টপলিটন পুলিশের কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডল উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
এর আগে রোববার নগরীর ওয়াসা মোড় থেকে লালখান বাজার মোড় পর্যন্ত অভিযান চলে। এসময় ছয়টি অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৪
** যুবলীগ-ছাত্রলীগের বাধার মুখে বিলবোর্ড উচ্ছেদ
** চট্টগ্রামে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ শুরু
** বিলবোর্ড জাপটে ধরেছে মসজিদের মিনার