ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দুর্ভোগ মাড়িয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৪
দুর্ভোগ মাড়িয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ ছবি: সোহেল সরওয়ার/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: স্বজনদের সঙ্গে আন্দন্দের ভাগাভাগি করতে পথে পথে নানা দুর্ভোগ মাড়িয়ে বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। তবু নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার আনন্দ এসব মানুষের চোখে মুখে।



হুড়োহুড়ি করে বাসে ওঠা কিংবা লঞ্চ ও ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় বসে থাকা যাত্রীদের মধ্যে তেমন বিরক্তি লক্ষ করা যায়নি। বরং অনেক যাত্রীই বলেছেন,
সবশেষে তাঁরা যে বাড়ি ফিরতে পারছেন, এই আনন্দটাই তাঁদের কাছে বড় পাওয়া।


বুধবার সরকারি অফিস-আদালত খোলা থাকায় বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় কম থাকলেও বৃহস্পতিবার রেল, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।

নগরীর বটতলী রেল স্টেশন ও বাস স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই স্টেশনে উপস্থিত হয়েছেন যাত্রীরা। এদের বেশিরভাগই আগে টিকেট কেটেছেন। তবে উপস্থিত টিকেট কেটেও গাড়িতে উঠতে দেখা গেছে অনেককে। অন্যদিকে রেল স্টেশনে ট্রেন ছাড়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত স্ট্যান্ডিং টিকেট বিক্রি করা হয়েছে।

তবে আগে থেকে যারা টিকেট নিতে পারেননি তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। ছুটতে হয়েছে এই স্টেশন থেকে ওই স্টেশনে। তবু থেমে নেই কেউ।

চাঁদপুরের বাসিন্দা ছগির মিয়া নগরীতে শ্রমিকের কাজ করেন। ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যাওয়ার জন্য স্টেশনে এসেও টিকেট পাননি তিনি। কিন্তু বাড়ি যেতে হবে তাকে। তাই গোধূলী ট্রেনের ইঞ্জিন কক্ষে প্রচণ্ড গরমে দাড়িয়ে আছেন।

১০০ টাকার বিনিময়ে সেখানে দাঁড়ানোর অনুমতি পেয়েছেন শ্রমিক ছগির মিয়া। এরপরও বাড়ি যাওয়া নিশ্চিত হওয়ায় আনন্দের ঝিলিক তার চোখে-মুখে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সংসার চালাতে সারা বছর চট্টগ্রামেই থাকি। বছরের দুই ঈদে বাড়ি যাই। এছাড়া বিশেষ কোন প্রয়োজনে যাওয়া হয়। তাই কষ্ট হলেও ঈদে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করি।

শুধু আরিফ নয় তার মতো শতাধিক যাত্রী বসে ও দাঁড়িয়ে আছেন ওই কক্ষে। একইভাবে খাবার গাড়ি, নামাজের বগি, গার্ডদের আসনে বসে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ।

ঢাকাগামী গোধূলী ট্রেনের যাত্রী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আরিফুর রহমান। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রায় একঘন্টা আগেই স্টেশনে উপস্থিত হয়েছেন। ঝুঁকি এড়াতেই কিছুটা সময় হাতে নিয়ে বের হয়েছেন বলে জানালেন তিনি।

বাংলানিউজকে আরিফ বলেন, কোরবানি উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গরুর বাজার। ফলে অতিরিক্ত যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন এলাকায় সড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হচ্ছে। তাই সময় হাতে নিয়েই রওয়ানা দিলাম।

‘একঘন্টা স্টেশনে এসে বসে থাকলে কোন সমস্য নেই। যদি কোন কারণে ট্রেন মিস করি তাহলে বাড়ি যাওয়াটাই মাটি হয়ে যেতে পারে। ’ 

চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, বুধবার থেকে অগ্রিম টিকেট নেওয়া যাত্রীরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। প্রথমদিন ভিড় কম থাকলেও বৃহস্পতিবার যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল।

যাত্রীদের সামাল দিতে রিতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্রেন ছাড়ার আগেও স্ট্যান্ডিং টিকেট দেওয়া হয়েছে। এরপরও অনেকে ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠে গেছে। অনেকে টিকেটও নেয়নি। এরপরও আমরা যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি।

শুক্রবার থেকে ঈদ উপলক্ষে স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালু হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরা নির্বিগ্ন করতে রেলে অতিরিক্ত বগি যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। আন্ত:নগর ট্রেনগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে কম কোচ নিয়ে পরিবহন শুরু করছে।  

এতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে হিমশিম খেতে হচ্ছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগকে। তারা বলছেন, অতিরিক্ত বগি যুক্ত করার বিষয়টি শুভঙ্কারের ফাঁকি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।