ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অর্ধেকে নেমে এসেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন

ইফতেখার ফয়সাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৪
অর্ধেকে নেমে এসেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম: গ্যাসের অভাবে চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামে অর্ধেকে নেমে এসেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন।

চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি ১৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৬টি ইউনিটের উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ২০৩ মেগাওয়াট হলেও গত শুক্রবার উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৫৮৯ মেগাওয়াট।



গ্যাস সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা।

কর্ণফুলী গ্যাস ড্রিস্টিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সার কারখানা কাফকো ও সিইউএফএল-এ গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না।


কবে নাগাদ এ চার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে ‍তা ও বলতে পারছেন না প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

এদিকে, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামে লোডশেডিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে । এতে বিপাকে পড়েছে নগরবাসী।

পিডিবি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে গত শুক্রবার সাতটি ইউনিটে কোন উৎপাদন হয়নি।   গ্যাসভিত্তিক চারটি ইউনিটের পাশাপাশি কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন তিনটি ইউনিট বন্ধ ছিল।

এ দিন ৮টি কেন্দ্রের ১২টি ইউনিটে ৫৮৯ মেগাওয়াট উৎপাদন হয়।   এর মধ্যে কাপ্তাই জল-বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট থেকে ২৩৪ মেগাওয়াট, তেলভিত্তিক জুলধা থেকে ২১, দোহাজারী পিকিং থেকে ১০২, হাটহাজারী পিকিং থেকে ৮৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।

এছাড়া, পতেঙ্গা ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৩৭, ‍রাউজান ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২৬, শিকলবাহা (আরপিপি) থেকে ২৫, বারবকুণ্ড থেকে ২২ ও মালঞ্চ থেকে ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।

পিডিবি কর্মকর্তারা জানান, গত জুলাই থেকেই একে একে গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হওয়া শুরু করে।

শিকলবাহা এসটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয় ৩ জুলাই।   পরে, গত ১৩ আগস্ট ও ২৫ আগস্ট রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিট এবং সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর শিকলবাহা জিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়।

গ্যাসভিত্তিক এ চার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৫৫০ মেগাওয়াট।

চট্টগ্রাম তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী স্বপন কান্তি চক্রবর্ত্তী বাংলানিউজকে বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে গ্যাস নির্ভর সবগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।   গ্যাস পুনরায় সরবরাহ না করা পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র চারটির জন্য ১৩১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেলে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উৎপাদন গড়ে এক হাজার মেগাওয়াট রাখা সম্ভব হতো।

তবে, চলতি বছর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে পুনরায় উৎপাদন শুরু করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, সম্প্রতি সার কারখানা ও বাসা-বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস না দিতে নির্দেশনা দেয় পেট্টোবাংলা।

এ নির্দেশনাকে কেন্দ্র করেই বিদ্যুৎ অক্টোবরের শেষের সপ্তাহ থেকে সার কারখানা কাফকো ও সিইএফএলকে গ্যাস সরবরাহ শুরু করে কেজিডিসিএল।

সার কারখানা দু’টির ১১৫ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে গত শনিবার ৯৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে।

কেজিডিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর আবদুল মতিন জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সামনের শুষ্ক মৌসুমে দেশে প্রচুর পরিমাণ সারের দরকার।   তাই সরকার এই মুহুর্তে সার তৈরির দিকে গুরুত্বারোপের নির্দেশনা দিয়েছে।   পরে নির্দেশনা পেলে পুনরায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা আমাদের সক্ষমতার দ্বিগুন।   রেশনিং করা ছাড়া সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব নয়।

এদিকে, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামে লোডশেডিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।   দিনের বেশীরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ না থাকায় আবাসিক গ্রাহকদের পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

লোডশেডিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করে পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, চট্টগ্রামে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট।   এর মধ্যে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে।   তবে, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তা কিছুটা কমে এসেছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ার কোন প্রভাব পড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে উৎপাদন কমলেই যে চট্টগ্রামে লোডশেডিং হবে বিষয়টি এমন নয়।   জাতীয় গ্রিড থেকে বরাদ্দ অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। তবে এটাও ঠিক, উৎপাদন কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বরাদ্দের উপর প্রভাবটি পড়ে।  

বাংলাদেশ সময়: ০০৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।