চট্টগ্রাম: ক্রেতার আনাগোনায় চট্টগ্রামের কোরবানির গরুর বাজার এখনও মুখর না হলেও থেমে নেই বিক্রেতার হাঁকডাক। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চট্টগ্রামে আসতে শুরু করেছে বড় আকারের গরু।
চট্টগ্রামের হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে পশু আসতে শুরু করেছে।
এরইমধ্যে বাজারগুলোতে বিদ্যুৎ, পানি ও নিরাপত্তাসহ সব ধরণের সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজারাদাররা। সোমবার থেকে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে বলে আশাবাদি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিক্রেতারা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন প্রান্তে এবার মোট আটটি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে দু’টি স্থায়ী ও ছয়টি অস্থায়ী। স্থায়ী গরুর বাজার দুটি হলো- সাগরিকা ও বিবিরহাট বাজার। চলতি বছরের এপ্রিলে এই দুটি বাজার ইজারা দেওয়া হয়। এছাড়া অস্থায়ী বাজারগুলো সেপ্টেম্বরে ইজারা দেওয়া হয়।
অস্থায়ী বাজারগুলো হলো- কর্ণফুলী হাট, সল্টগোলা রেল ক্রসিং হাট, পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, পোস্তার পাড় উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, স্টিলমিল হাট ও কমল মহাজন হাট।
সেপ্টেম্বরে অস্থায়ী পশুর হাটগুলো নিলামের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ইজারা দিয়েছে করপোরেশন। করপোরেশন ছয়টি অস্থায়ী হাটের ইজারা দিয়েছে দুই কোটি ৮০ লাখ ৩৫ হাজার ৭৭৭ টাকায়। স্থায়ী পশুর হাট সাগরিকা বাজার ৬ কোটি ৪৫ লাখ ও বিবিরহাট ২কোটি ৪৫ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়।
রোববার সাগরিকা ও বিবিরহাট গরু বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা এখনো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে আসছেন। বাজারে ক্রেতা তেমন চোখে পড়েনি। হাতেগোণা কয়েকজন ক্রেতার দেখা মিললেও তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্রেতা হাট ঘুরে গরু দেখছেন। দু’একজন ক্রেতাকে পশুর দাম যাচাই বাছাই করতে দেখা গেছে।
সাগরিকা গরু বাজারের ইজারাদার সাইফুল হুদা মো. জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে জানান, জামালপুর, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, পিরোজপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারি বিক্রেতারা পর্যাপ্ত গরু নিয়ে এসেছে। সোমবার থেকে পুরোদমে বাজার জমে উঠবে বলে আমরা আশা করছি।
গত বছর ঈদের দুইদিন আগে বাজারে গরু সংকট দেখা দিয়েছিল জানিয়ে চট্টগ্রামের সর্ব বৃহৎ এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বাজারের ইজারাদার বলেন, এবছর যাতে গরুর অভাব না হয় সে ব্যবস্থা করছি। ব্যবসায়ীরা প্রচুর পরিমাণে গরু আনছেন।
এবার গরুর দর-দাম কেমন জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর বলেন, ক্রেতা কম। তাই এখনো পর্যন্ত গরুর দাম সম্পর্কে অনুমান করা যাচ্ছে না। সোমবার থেকে বাজার জমতে শুরু করবে। ক্রেতা ও বিক্রি দু’ই বাড়বে। তখন গরুর দাম কেমন হবে বলা যাবে।
পিরোজপুর থেকে আগত ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ১৬টি গরু নিয়ে তিনি সাগরিকা বাজারে এসেছেন। এখনো পর্যন্ত একটিও বিক্রি হয়নি।
সাগরিকার মতো অন্য হাটগুলোরও একই অবস্থা। বিবিরহাট, কর্ণফুলী, স্টীল মিলসহ করপোরেশনের স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলোতে এখনো পর্যন্ত গরু ও অন্যান্য পশু বেচাকেনা তেমন নেই।
বিবিরহাট বাজারের ইজারাদার মঞ্জুরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
তবে এখনো পুরোদমে বিক্রি হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, শনিবার বাজার গেলেও খুব বেশি বেচা-বিক্রি হয়নি। আগামী মঙ্গলবার থেকে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে বলে আশা করছেন তিনি।
নগরীর বাজারগুলোতে গরুর পাশাপাশি মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার সরবরাহ পর্যাপ্ত। কুমিল্লা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্রেতারা এসব পশু নিয়ে এসেছেন।
কর্ণফুলী হাট ইজারাদার আবদুর রহিম সওদাগর বাংলানিউজকে বলেন, বাজারের সব ধরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গরুর সরবরাহও ভালো। এখন শুধু বিক্রির অপেক্ষা।
নগর পুলিশের ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) হাসান মোল্লা জানান, কোরবানের পশুর হাটকে কেন্দ্র করে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রত্যেকটি বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এছাড়া পুলিশের ভ্রাম্যমাণ টহল থাকবে। রাস্তায় যাতে গরুর হাট বসতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাজার ইজারাদানকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আহমদুল হক বলেন, করপোরেশনের পক্ষ থেকে যেসব সুবিধা প্রদানের কথা তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
অনুমোদিত হাট বাদে যাতে নগরীর অন্য কোথাও পশুর হাট বসতে না পারে তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এরপরও কোথাও অবৈধভাবে হাট বসানো বা পশু বিক্রির খবর পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৪