চট্টগ্রাম: সফরসঙ্গী প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করেন না বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়ার দায়ে অভিযুক্ত স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে নিউইয়র্কে যাওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, দুই-একজন মন্ত্রীকে সফরসঙ্গী করার বিষয় হয়ত প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করেন। বাকিদের বিষয়ে স্ব স্ব মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেন।
স্বাস্থ্য সচিবের বিষয়ে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি চেয়ারে আছেন ততক্ষণ পর্যন্ত তো তাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জেলখানায় থেকেও তো অনেকে নির্বাচন করেন। যেহেতু তিনি সচিব পদে বহাল আছেন তার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তো তাকে পালন করে যেতে হবে।
ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়া পাঁচ সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দিয়েছি, তারা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। আমি আশা করছি দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিশ্চয় তাদের বিচার হবে। একটু সময় দরকার।
শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধে ৭ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার শহীদ মেজর নাজমুল হকের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। পরে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
স্মরণ সভায় মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ঝাঁটা মেরে বিদায় করার জন্য। আমি উপর থেকে এ কাজ শুরু করেছি। আমি ক্ষমতাধরদের উপর আঘাত করেছি।
তিনি বলেন, ২০ বছরের মধ্যে যেসব মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেয়া হয়েছে আমরা সেগুলো যাচাইবাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুব শিঘ্রই উপজেলা পর্যায়ে আমরা এ কাজ শুরু করব। প্রকাশ্য দরবারে যাচাইবাছাই হবে। যিনি মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেয়েছেন তাকে প্রমাণ করতে হবে তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন, কোন অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করেছেন। ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করার পর তাদের কারা সনদ ইস্যু করেছেন তাদেরও চিহ্নিত করা হবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৯ ধরনের টেকনোলজি ব্যবহার করে সনদ বানানো হচ্ছে। টাকা নকল করা যাবে, মুক্তিযোদ্ধা সনদ নকল করা যাবেনা।
তিনি বলেন, আগামীতে বিসিএস পরীক্ষায় একশ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে মুক্তিযুদ্ধের উপর। বিসিএস পাশ করতে হলে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে। আগামী জুলাই থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ১০ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া হবে। চিকিৎসা সুবিধা, বাস-ট্রেনের ভাড়া ফ্রি করে দেয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে মাদ্রাসা হোক, প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল কিংবা কলেজ হোক, জাতীয় পতাকা তোলা হবেনা কিংবা জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবেনা, সেই প্রতিষ্ঠানে তালা মেরে দেয়া হবে। বাংলাদেশের ভাত খেতে হলে বাংলাদেশের গান গাইতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সারাদেশে বিজয়স্তম্ভ করব। একইসঙ্গে ঘৃণাস্তম্ভও করব। যাতে বিশেষ দিনে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি ঘৃণা জানিয়ে সবাই ঘৃণাস্তম্ভে জুতা, থুতু নিক্ষেপ করতে পারে।
এ কে খন্দকারকে কুলাঙ্গার আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। বর্ণচোরারা এভাবে ঘাপটি মেরে দলের ভেতরে থাকে। বঙ্গবন্ধু খন্দকার মোস্তাক, জিয়াউর রহমানদের চিনে যেতে পারেননি। শেখ হাসিনা এ কে খন্দকারের রূপ দেখতে পেলেন। দুধ কলা দিয়ে যাদের আমরা পুষি, সময় পেলে তারা ছোবল মারে।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেদারুল আলম বেদার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭,২০১৪