ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নির্বাচন হবে, তবে অপেক্ষা করতে হবে: সুরঞ্জিত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪
নির্বাচন হবে, তবে অপেক্ষা করতে হবে: সুরঞ্জিত ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন,‘নির্বাচন অবশ্যই হবে। সংবিধান অনুযায়ী হবে।

তবে অপেক্ষা করতে হবে। কারণ রাজনীতিতে ভুল করলে মাশুল দিতে হয়।
নির্বাচনে ‍অংশ না নিয়ে বিএনপি যে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে তার জন্য ‍তাদের মাশুল দিতে হবে। ’

শনিবার নগরীর হোটেল আগ্রাবাদের ইছামতি হলে ফোরাম ফর পিপলস ভয়েস আয়োজিত ‘‘সাংবিধানিক সংস্কার: গণতন্ত্র ও সুশাসন’’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র ভয় অমূলক উল্লেখ করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন,‘‘আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। কোন গায়েবি বা সামরিক ফরমানে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নির্বাচন বিষয়ে বিএনপির হতাশ হওয়ার কিছু নাই”। নির্বাচন কমিশনের অধীনে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ‍তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি নয়। ’
 
বিএনপি’র মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন,‘‘কেন মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে তা আগে ডিফাইন করে বলতে হবে। ’’

এ প্রবীণ রাজনীতিবিদ বলেন,‘‘গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক হলো ধর্ম এবং জঙ্গীবাদ। এটা কেউ বলেন না। গণতন্ত্রের মধ্যে ধর্ম ও জঙ্গীবাদ ঢুকে গেছে। সম্প্রতি আল কায়েদা নেতা জাওয়াহিরি যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরো ঝুঁকির মুখে পড়েছে। দেশে যারা গণতন্ত্র বিশ্বাসী, ভোটাধিকারের বিশ্বাস করেন, স্বাধীনতার মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন তাদের সবাইকে উগ্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ’ জঙ্গীবাদের উত্থান রুখে দিতে বিএনপিসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ’

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন,‘‘১৯৭২ সালের সংবিধানে যা ছিল তাই কেবল ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ‘বিভিন্ন সামরিক ফরমান বলে সংবিধানে এ বিষয়ে যা সংযোজন এবং বিয়োজন করা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে মাত্র। ’

তিনি বলেন,‘‘বিচারপতিদের অভিসংশন ক্ষমতা কখনো সংসদের হাতে ছিল না। এখনও এ ক্ষমতা নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। সংসদ শুধুমাত্র একজনকে অভিসংশন করতে পারেন। তিনি হলেন রাষ্ট্রপতি। বিচারপতি নিয়োগ এবং অপসারণে সংসদ কিছুই করে না। কেননা রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দান করে এবং তিনিই আবার তাদের অপসারণ করেন। ’

প্রবীণ এই আইন প্রণেতা বলেন, বিচারপতি বিচার কাজ পরিচালনায় অসমর্থ হলে এবং কোন অসদাচরণ করলে তাদের রাষ্ট্রপতি অপসারণ করতে পারবে। তবে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তের পর তদন্ত কমিটি তা সংসদে পাঠাবে। সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য একমত হলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। তারপর রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ’

এ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরো সুদৃঢ় হয়েছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এ উপদেষ্টা বলেন,‘আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের এ তিনটি অঙ্গের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে। ’

সংবিধানের ৭০অনুচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘‘সংবিধানে দু একটি বাধা এখনো আছে। এগুলো ক্ষণস্থায়ী। গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেলে নতুন প্রজন্ম এগুলো দূর করবে। ’’’

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন,‘‘‘আমরা কথায় কথায় ইংল্যান্ডের গণতন্ত্রের কথা বলি। ইংল্যান্ডে সংসদীয় গণতন্ত্র আসতে পাঁচশ বছর সময় লেগেছে। আমাদের এখনো কয়দিন হয়েছে। সুতরাং হতাশার কিছু নেই। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললে হয় না। গণতন্ত্র দেখাতে হয়। ’

গোলটেবিল আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন,‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য ও বিচারকদের মানসিক চাপে রাখার জন্য ষোড়শ সংশোধনী করা হয়েছে। ’

তিনি বলেন,‘‘১৯৭২ সালের সংবিধানে কেবল উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা ছিল না; নিম্ন আদালতের নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির বিষয়টিও সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগের সব ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়। বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ব্যক্তি, তথা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। এরপর জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করেন। এতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতির সমন্বয়ে এই কাউন্সিল গঠিত হবে এবং কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ বা অক্ষমতার অভিযোগ এলে তদন্তপূর্বক রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবেন। ’’’

প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন,‘এখন যে পদ্ধতিতে বিচারক নিয়োগ হয়, সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বলছি, বিচারক নিয়োগের নীতিমালা করুন। সরকার সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না; বরং মীমাংসিত বিষয় নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। মীমাংসিত বিষয় এ কারণে যে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক যখন পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন, তখনো কিন্তু তিনি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে হাত দেননি। অর্থাৎ তিনি বিচারক ও আইনজীবীদের অনুভূতিকে সম্মান জানিয়েছিলেন। আর এর সঙ্গে কেবল বিচারক বা আইনজীবীদের মর্যাদা নয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নও জড়িত। ’

তিনি বলেন,‘‘‘সংসদের হাতে বিচারকদের অভিশংসনের দায়িত্ব দেওয়ায় তারা রাজনৈতিক চাপে থাকবেন। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না। বিচারকদের মধ্যে কি এখন এটা কাজ করবে না?  ক্ষমতাসীনদের দলের বিরুদ্ধে যদি রায় দেয় তাহলে তারা আমাকে ছেড়ে দিবে না। ‘’’

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন,‘‘উচ্চ আদালতে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা না থাকলে আর কিছুই থাকে না। মানুষের সর্বশেষ আস্থার স্থল আজ প্রশ্নবিদ্ধ। ’’

তিনি বলেন,‘‘‘‘সংবিধান যারা সংশোধন করেছে তারা কারা? তাদের সে সুযোগ আছে কি না তাও দেখতে হবে। সংবিধান সংশোধন জনগণের জন্য। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা সংবিধান সংশোধন হবে। কোন অবৈধ সংসদ দ্বারা সংবিধান সংশোধন হতে পারে না। ’’

তিনি বলেন,‘এর একমাত্র সমাধান অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। ’

আলোচনায় অংশ নিয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পৃথিবীর কোন সংবিধানে নেই। এ অনুচ্ছেদ দিয়ে দলকে সুশৃঙ্খল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা কি আদৌ করা গেছে? ষোড়শ সংশোধনী বিল পাস করার আগে তাড়াহুড়ো না করে আলাপ আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন এ বিশেষজ্ঞ।

গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান। ষোড়শ সংশোধনীর কারণে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা আরো নিরঙ্কুশ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের দাবিও জানান তিনি।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফোরাম ফর পিপলস ভয়েসের সভাপতি ড. মনজুর-উল-আমিন চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।