ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ভিসা জটিলতায় চাকরির বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশি নাবিকরা

মো.মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪
ভিসা জটিলতায় চাকরির বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশি নাবিকরা

চট্টগ্রাম: কোনভাবেই সমাধান হচ্ছে না বাংলাদেশি নাবিকদের ভিসা জটিলতা। একারণে নিয়োগ পেলেও বিশ্বের খ্যাতনামা শিপিং কোম্পানীর চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না বাংলাদেশি নাবিকরা।



ভারত, সিঙ্গাপুর, হংকং, সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশি নাবিকরা দীর্ঘদিন ধরে ভিসা জটিলতায় ভুগছেন। ফলে সংকুচিত হয়ে পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম এ খাত।


মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, অন্যান্য দেশের নাবিকরা সিঙ্গাপুরে অনায়াসে বিশেষায়িত ভিসা পেলেও বাংলাদেশিরা পাচ্ছেন না। বাংলাদেশি নাবিকদের সাধারণ ভিসা নিয়েই সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে যেতে হয়।

সংকট থেকে উত্তরণে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশি নাবিকদের চাকরির বাজার হারাতে হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় ছয় হাজার প্রশিক্ষিত নাবিক এবং তিন হাজার ক্রু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাহাজে চাকরি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠান। অথচ এখন ভিসা জটিলতার কারণে বাংলাদেশি নাবিকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাতায়াতে বাধার সম্মুখিন হচ্ছেন।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন জিল্লুর রহমান ভূঁইয়া বাংলানিউজকে জানান, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ব্রাজিলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাবিকরা ভিসা জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন।

তিনি বলেন, বিশ্বের খ্যাতনামা সব শিপিং কোম্পানী দুবাই, সিঙ্গাপুর ও হংকংভিত্তিক। ফলে ভালো কোনো শিপিং কোম্পানীতে চাকরি পেতে হলে সিঙ্গাপুর, দুবাই কিংবা হংকং হয়েই জাহাজে উঠতে (সাইন ইন) হয়। কিন্তু এসব দেশের ভিসা জটিলতার কারণে বাংলাদেশিরা ভালো চাকরি পাচ্ছেন না।

নাবিকদের ভিসা সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর জাকিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসব দেশের সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসব দেশে চিঠিপত্র লেখা হচ্ছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়েও বিষয়টি জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশের ইমেজ সংকটের প্রভাব নাবিকদের চাকরিতে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইমেজ সংকটের কারণে এসব দেশ ছাড় দিতে চায় না।

বিদেশি জাহাজে নাবিক নিয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার (মেনিং এজেন্ট) মালিকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সৌদি সরকার দুই বছর আগে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সৌদি আরবের সব ট্রাভেল এজেন্ট এবং শিপিং কোম্পানীকে বাংলাদেশি কোনো নাবিকের 'সিম্যান ডিসচার্জ বুক' গ্রহণ না করার নির্দেশ দিয়েছে। এতে করে বাংলাদেশি নাবিকরা মধ্যপ্রাচ্যের জাহাজগুলোয় চাকরির সুযোগ হারাচ্ছেন।

এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বাংলাদেশ মেনিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) নীতিমালা অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশে গিয়ে যেকোনো নাবিকের সাইন ইন কিংবা সাইন আউট (জাহাজে যোগদান কিংবা চাকরি ছেড়ে আসা) করার অধিকার আছে। কিন্তু সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা তা পাচ্ছেন না।

সম্প্রতি সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, ওমান, ইক্যুয়েডর, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, ব্রাজিল, তুর্কিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের ভিসা না পাওয়ায় জাহাজের চাকরিতে যোগ দিতে পারেনি অনেক নাবিক।   

এ বিষয়ে মেনিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টি আমরা নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে বলে আসছি। কিন্তু এরপরও দিনদিন এ সমস্যা বাড়ছে।

তিনি বলেন, জাহাজ মালিকরা সাধারণ বোম্বে, সিঙ্গাপুর ও আরব আমিরাত থেকে নাবিকদের জাহাজে তুলতে চান। অথচ এইসব দেশে বাংলাদেশি নাবিকরা ভিসা পাচ্ছে না।

ভিসা জটিলতার কারণে বিশ্বের জাহাজ মালিকদের কাছে বাংলাদেশি নাবিকদের গ্রহণযোগ্যতা কমছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,  এতে করে আমরা চাকরির বাজার হারাচ্ছি। এ বিষয়ে সরকার উদ্যোগী না হলে নাবিক চাকরি বন্ধ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।