ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জীবন রক্ষার ওষুধ নিয়ে ফার্মিকে’র তামাশা!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৪
জীবন রক্ষার ওষুধ নিয়ে ফার্মিকে’র তামাশা! ছবি: সোহেল সরওয়ার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: টোকাইদের কাছ থেকে পুরাতন বোতল সংগ্রহের পর সেগুলোতে ঢোকানো হচ্ছে সিরাপ।   মেয়াদোত্তীর্ণ ট্যাবলেট খোসা ছড়ানোর পর ফের ঢুকছে নতুন খোসায়।

ওষুধের মোড়কে লেখা লেখা ‘আলো থেকে দূরে, স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখুন’, কিন্তু সেগুলো মজুদ করা হয়েছে প্রচন্ড তাপমাত্রার আলো-বাতাসহীন কক্ষে।

মানুষের জীবন রক্ষার ওষুধ নিয়ে এমনই প্রতারণা করে আসছে ফার্মিক ল্যাবেরটরি ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘ব্রাদার্স’।


বৃহষ্পতিবার সকালে কারখানাটিতে অভিযান চালায় র‌্যাব-৭।   অভিযানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সরবরাহের কর্মকাণ্ড হাতে-নাতে ধরা পড়লে কারখানার সকল ওষুধ জব্দ করার পাশাপাশি কারখানাটির ব্যবস্থাপক ও প্রায় ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্বদানকারী র‌্যাব-৭ এর এএসপি এস এম মোবাশ্বের হোসাইন জানান, গোপন সূত্রে কারখানাটির এ কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে খবর পাওয়ার পর তারা জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানান।   পরে, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

বিকাল তিনটায় তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অভিযানে প্রাথমিকভাবে কারখানার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এক ব্যবস্থাপককে আটক রাখা হয়েছে। কারখানাটির ওষুধ-পত্র জব্দ করা হয়েছে, মালিককে খুঁজে পাওয়ার পর এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জব্দ তালিকা প্রস্তুত হয়নি বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বাংলানিউজকে জানান, ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নিবন্ধন ছাড়া ফার্মিকের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই।   তারা নিয়ম বর্হিভুতভাবে অনেক ওষুধ উৎপাদন করছে, যেগুলোর অনুমোদন তাদের নেই।

তিনি বলেন, কারখানা দু’টির উৎপাদন ও মোড়কজাত প্রক্রিয়া খুবই উদ্বেগজনক।   নোংরা পানিতে পুরোনো বোতল ধুয়ে তারা পুনরায় ব্যবহার করে আসছে, ওষুধ উৎপাদনের কোন পরিবেশই কারখানা দু’টিতে নেই।  

চট্টগ্রামে এর আগে ওষুধ কারখানায় এত বড় জালিয়াতি আর ধরা পড়েনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর খুলশী মার্টের পেছনে একটি পাঁচতলা ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে ফার্মিক ও ব্রাদার্সের  উৎপাদন চলছে।   কারখানাটির মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধগুলো রাখা হয়েছে চতুর্থ ও পঞ্চম তলায়।

চতুর্থ তলায় বেশ কয়েকটি বালতিতে মেয়াদোত্তীর্ণ সিরাপ ঢালছে কারখানার নারী শ্রমিকরা। তাদের শরীরে মাস্ক, অ্যাপ্রন বা গ্লাবসের মতো সুরক্ষাজনিত কোন ব্যবস্থা নেই। মেঝেতে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ওষুধের খালি খোসা।

পঞ্চম তলায় সব কয়টি কক্ষেই পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা নেই। সেখানে বিভিন্ন ওষুধ ও খালি বোতল, পুরাতন খোসা মজুদ রাখা হয়েছে।

এছাড়া, তৃতীয় তলার একটি কক্ষে খোলা স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে অসংখ্য ক্যাপসুল।

ফার্মিকের উৎপাদিত ওষুধের প্রতিটি প্যাকেটে ‘আইএসও ৯০০১:২০০৮ সার্টিফাইড কোম্পানি’ লেখা রয়েছে।   উৎপাদিত ওষুধের মধ্যে সিপ্রোফ্লক্সিন, ফলিক অ্যাসিড, ওমিপ্রাজল, ওরস্যালাইন-এন, হাইপেইন টিআর প্যাকেটজাত করতে দেখা গেছে।

কারখানার ব্যবস্থাপক সাধন বিশ্বাসকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও খালি বোতলে পুনরায় মোড়কজাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বলে তা যেখানে সেখানে ফেলে দেয়া যায় না।   যথাযথভাবে ফেলে দেওয়ার জন্যই সেগুলো মজুদ করা হয়েছে। সিরাপের পানিগুলোও ফেলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বালতিতে ঢালা হচ্ছে।

তিনি বলেন, খালি যেসব প্যাকেট দেখিয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে মেয়াদের তারিখ দেওয়া হয়নি।   সেগুলো প্যাকেটজাত করার পর সিল লাগানোর জন্য প্রস্তুত  করে রাখা হয়েছে।

সাধন বিশ্বাস জানান, ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদন নিয়েই তারা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কারখানাটিতে প্রায় ২০টির মতো ওষুধ উৎপাদন হয়। তারা ৩৭ প্রকারের ওষুধ তৈরীর জন্য আবেদন করেছিলেন।

সবগুলো ওষুধই ফার্মিক তৈরী করে। তবে, ব্রাদার্স’র নামে শুধু সিভিট ও ওরস্যালাইন তৈরী হয়।

অনুমোদনের বাইরে ওষুধ তৈরীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলেন, আমাদের অনেক ওষুধের অনুমোদন রয়েছে কিন্তু আমরা বাজার চাহিদা না থাকার কারণে উৎপাদন করি না।

কারখানাটির পরিচালনায় ডা. আহমেদ রবিন ইস্পাহানী নামে এক ব্যক্তি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।