চট্টগ্রাম: গ্যান্ট্রি ক্রেনের অপারেটর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়োগ পাওয়া সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড’র কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে গোটা বন্দর।
প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে সিসিটি, এনসিটির একটি অংশ পরিচালনা করছে।
অনিয়মের মাধ্যমে একের পর এক কাজ বাগিয়ে নিতে পারায় বেপরোয়া হয়ে উঠে প্রতিষ্ঠানটি।
অভিযোগ রয়েছে, নৌ মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম বন্দরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ প্রতিষ্ঠানের অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করতে চাইলে উল্টো ওই কর্মকর্তাই হয়রানিতে পড়ছেন। এমনকি সাইফ পাওয়ারটেক’র ফাইল দ্রুত ছাড় না দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বদলির নজিরও রয়েছে।
সূত্র জানায়, বদলি ঠেকাতে কর্মকর্তারা সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড’র ফাইল বিদ্যুৎ গতিতে ছাড় দিতেন। সম্প্রতি পায়রা বন্দরে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ কারণেই বদলি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সিবিএ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করে যাচ্ছে সাইফ পাওয়ারটেক।
একটি মহলের ছত্রছায়ায় কর্মর্তা-কর্মচারীদেরও বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের অবৈধ ফাইলের কাজ করতে না চাইলে কর্মকর্তাদেরও বদলি করে দেওয়া হয়।
এদিকে বন্দরে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের ফলে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বন্দরকে ধ্বংসের পায়তারার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে বন্দর রক্ষা পরিষদ।
বুধবার বিকেল তিনটায় বন্দর ভবনের গেইটে শ্রমিক-জনতার সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে। সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।
সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বন্দর রক্ষা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাইফ পাওয়ারটেক’র অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরেন পরিষদের আহ্বায়ক নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
তবে সংবাদ সম্মেলনে সাইফ পাওয়ারটেকের অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরা হলেও যাদের সহযোগিতায় এসব অনিয়ম করে যাচ্ছেন সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।
সাইফ পাওয়ারের ক্ষমতার দাপটে বন্দর কর্মকর্তারা এসব অনিয়ম দেখেও না দেখার ভান করছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, এই প্রতিষ্ঠান বন্দর কর্মকর্তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও বদলির ভীতি দেখিয়ে বন্দরে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাদের সহযোগিতায় সাইফ পাওয়ারটেক চট্টগ্রাম বন্দরে অনিয়ম-দুর্নীতির সাহস পাচ্ছে তাদের আড়াল করে আন্দোলন করলে সুফল আসবে না। এতে করে ওই প্রতিষ্ঠানের ভিত আরো মজবুত হবে।
নৌ-মন্ত্রণালয় ও বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আন্দোলনের কৌশলগত কারণে অনেক সময় কিছু বিষয় গোপন রাখতে হয়।
তবে বন্দর ধ্বংসে যেই জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড চট্টগ্রাম বন্দরকে জিম্মি করে অনিয়ম, দুর্নীতি ও চুক্তিভঙ্গের মাধ্যমে সরকারি অর্থ লুটপাট করে চলেছে অভিযোগ করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে একটি প্রতিষ্ঠান বন্দরে কাজ করে যাচ্ছে। বার বার চুক্তি ভঙ্গ করেও ইচ্ছেমতো সরকারি টাকা লুট করছে। তাদের কারণে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক এবং বন্দর ব্যবহারকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
‘এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। তাদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। জিম্মিদশা থেকে বন্দরকে রক্ষা করতে হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪