ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ডিসিসি’র পথেই এগুচ্ছে চসিক!

আবদুল্লাহ আল মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪
ডিসিসি’র পথেই এগুচ্ছে চসিক! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: আকস্মিকভাবে সীমানা বাড়ানোর ত‍ৎপরতা শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এ নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটি সীমানা বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

নির্বাচনের মাত্র ৮মাস আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এ তৎপরতায় নগরবাসির মধ্যে প্রশ্ন এবং কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।


করপোরেশন পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে,  নাগরিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ও অধিক সংখ্যক মানুষকে শিক্ষা, চিকিৎসা ও নাগরিক সুবিধার আওতায় নিয়ে আসতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে অনেকেই বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, নির্বাচন পেছাতে করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মেয়র এ উদ্যোগ নিয়েছে।

করপোরেশন সূত্র জানায়, গত ২১ আগস্ট করপোরেশনের ৫০তম সাধারণ সভায় করপোরেশনের সীমানা সম্প্রসারণে ১৯৯৭ সালের সরকারি গেজেট
বাস্তবায়নের প্রস্তাব তুলেন ৩২ নং আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী। তার এ প্রস্তাব আমলে নিয়ে সভার সভাপতি সিটি মেয়র এম মনজুর আলম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের আহবান জানান। প্রস্তাব বাস্তবায়নে তৎপরতা চালাতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। কমিটির প্রধান করা হয় প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ হোসেনকে।

কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বাংলানিউজকে বলেন, সীমানা বাড়াতে ১৯৯৭ সালে মন্ত্রণালয় থেকে একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল। বর্তমান মেয়রের পাঁচ বছর পার হলেও সরকারের এ গেজেট বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই গেজেট বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছিলাম সাধারণ সভায়। এছাড়া নগরীর উত্তর আগ্রাবাদ, দক্ষিণ হালিশহর ও শুলকবহর। এসব ওয়ার্ডে এক লাখের উপর ভোটার রয়েছে। কিন্তু তারা বরাদ্দ পাচ্ছে অন্যান্য ওয়ার্ডের সমান। তাদের অভিযোগ ছিল, তারা নাগরিক সুবিধা সমানভাবে পাচ্ছে না। তাই এসব ওয়ার্ড ভেঙ্গে নতুন ওয়ার্ড করাও দরকার।

তিনি বলেন, সীমানা বাড়ানো হলে আরো বেশি নগরায়ণ হবে। চট্টগ্রামবাসির সুযোগ সুবিধা আরো বাড়বে। এছাড়া শহর সম্প্রসারিত হলে শহরের উপর চাপ কমবে।

প্যানেল মেয়র-১ মোহাম্মদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন,‘সরকারি গেজেট বাস্তবায়নে কয়েকদিনের মধ্যে কমিটির সভা আহবান করা হবে। এরপর ঢাকায় গিয়ে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হবে। চট্টগ্রাম শহর জনবহুল এলাকায় পরিণত হয়েছে। সীমানা সম্প্রসারণ হলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা বাড়বে পাশাপাশি যানজটও  কমে আসবে। ’  

জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চাহিদা না থাকলেও বর্তমান সীমানা ৬০ বর্গমাইল থেকে বাড়িয়ে ১২০ বর্গমাইলে সম্প্রসারণ করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ১৯৯৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর গেজেট প্রকাশ করেছিল। এতে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পারের চরপাথরঘাটা, শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা, জুলদা ও বড়উঠানসহ ছয়টি ইউনিয়ন (দুটি সম্পূর্ণ ও চারটির আংশিক) এবং সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, বোয়ালখালী ও আনোয়ারা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নকে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

বাসিন্দাদের আপত্তি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আদালতের শরণাপন্ন হলে মন্ত্রণালয় ১৯৯৯ সালের ১৩ মে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে।

গেজেট বাতিল না হওয়া পর্যন্ত সীমানাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হলেও প্রায় এক বছর নির্বাচন হয়নি। ফলে তখন মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়াদের অতিরিক্ত এক বছর দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৯ সালে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ের পাঁচটি ‌ইউনিয়নকে আবারো সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভূক্ত করার তৎপরতা চালান তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। দক্ষিণ পাড়ে করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয় করে কাজও শুরু করেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ না করায় অন্তর্ভূক্ত করা সম্ভব হয়নি।

এ নিয়ে তৎকালীন চট্টগ্রাম-১২ (আনোয়ারা ও পটিয়ার একাংশ) আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ আখতারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরোধ দেখা দেয়। সেসময় তিনি গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘শুনেছি মেয়র দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাঁচ ইউনিয়নকে কেন্দ্র করে একটি গ্যাঞ্জাম লাগিয়ে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চান। ’

এরপর এ নিয়ে আর কোন তৎপরতা ছিল না করপোরেশনের। ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বিষয়ে একটি চিঠি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থ‍ানীয় সরকার সচিব বরাবর পাঠানো হয়। ২০১০ সালের ২০ জুলাই বর্তমান মেয়র মনজুর আলম দায়িত্ব নেওয়ার পর সীমানা বাড়ানো নিয়ে এছাড়া আর তেমন কোন তৎপরতা ছিল না।

এ প্রসঙ্গে সিটি মেয়র এম মনজুর আলম বাংলানিউজকে বলেন,‘নগরবাসীর কথা চিন্তা করে সীমানা বাড়ানোর বিষয়টি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে আরো বেশি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। এখানে আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। ’

নির্বাচন ঘনিয়ে আসার পূর্বে এ ধরণের তৎপরতা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন,‘এতদিন কেউ এ বিষয়ে প্রস্তাব তুলেনি। তাই কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখন প্রস্তাব উঠায় বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ’

বর্তমান মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মেয়াদ আগামী বছরের ২৫ জুলাই শেষ হচ্ছে। আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিন পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।

কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন পেছানোর উদ্দেশ্যেই সিটি করপোরেশনে সীমানা বাড়ানোর তৎপরতা শুরু করা হয়েছে। একইভাবে সীমানা জটিলতার কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় বছর পরও ঢাকা সিটি করপোরেশন(ডিসিসি) নির্বাচন করতে পারেনি সরকার।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১৭ জুন চসিকের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২১ জুন গেজেট প্রকাশিত হয়।   প্রথম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় ২৬ জুলাই। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) ২০০৯ অনুযায়ী প্রথম সাধারণ সভা থেকে মেয়রের কার্যকাল শুরু।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।