ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সাইফ পাওয়ারটেককে ছাড় দিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ!

তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৪
সাইফ পাওয়ারটেককে ছাড় দিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ! ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: দায়িত্ব নিয়ে চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করে আইন ভঙ্গ করলেও বেসরকারি অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে বরাবরই উদাসীন বন্দর কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু আইন লঙ্ঘন করার পরও বন্দরের নীরব ভূমিকা রহস্যজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।   

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আইনের নানা মারপ্যাঁচ দেখিয়ে অনেককে বন্দর কর্তৃপক্ষের হয়রানির শিকার হতে হয়।
অথচ সাইফ পাওয়ারটেকের বিষয়ে ভিন্ন চিত্র। সুস্পষ্ট আইন লঙ্ঘন হলেও নির্বিকার বন্দর কর্তৃপক্ষ।
 
চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে চুক্তির ১৮ মাস পরও ঢাকার কমলাপুর কনটেইনার ডিপো পরিচালনার কাজ শুরু করেনি সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, চুক্তির পর সাত মাসের মধ্যে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে সব যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।

এ সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে না পারলে প্রতি মাসে চুক্তিমূল্যের ১ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হবে। জরিমানার হার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হলে চুক্তি বাতিল এবং জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে।

বন্দর সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ১৮ জুন ঢাকার কমলাপুর কনটেইনার ডিপোতে যন্ত্রপাতি কিনে ১০ বছর পরিচালনার দরপত্র জমা নেওয়া হয়। সেখানে  যোগ্য সর্বনিম্ন দরদাতা হয় সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয়। এরপর ১৮ মাস পার হলেও ওই প্রতিষ্ঠান এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, কাজ শুরু করতে না পারায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ছয় কোটি ৯২ লাখ টাকা জরিমানা হিসেবে পাওনা রয়েছে। জামানত হিসেবেও ছয় কোটি ৯২ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করার সুযোগ আছে বন্দর কর্তৃপক্ষের। জরিমানা ও বাজেয়াপ্ত মিলে প্রায় ১৪ কোটি টাকা বন্দরের তহবিলে যোগ হওয়ার কথা।

অথচ এসব টাকা আদায়ে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে পাবলিক প্রকিউরম্যান্ট রুলস‘র দরপত্র মূল্যায়ন ধারা ৯৮ উপধারা ৩(ক) অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা কাজ করতে ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দিতে পারে।

পিপিআর অনুযায়ী চুক্তি সম্পাদনের নোটিশ জারি ও চুক্তি স্বাক্ষর সংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘন করার পরও ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

শুরুতেই অনিয়ম:
২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এই ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করা হলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন শেষে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর অনুমোদনের বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। ওই চিঠিতে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।  

গণখাতে ক্রয়বিধি ১০২ ধারা অনুযায়ী, চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব অনুমোদনের এক সপ্তাহের মধ্যে কৃতকার্য দরপত্রদাতার কাছে চুক্তি সম্পাদনের নোটিশ জারি করবে ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ।

তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ চুক্তি সম্পাদনের জন্য নোটিশ জারি করে ২১ দিন পর, ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর। ক্রয়বিধি অনুযায়ী, নোটিশ জারির পর প্রতিষ্ঠানটি সাত দিনের মধ্যে সম্মতি প্রদান করতে হবে। কিন্তু সম্মতি প্রদান না করায় দ্বিতীয় দফায় গত বছরের ২১ জানুয়ারি আবারও প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে নোটিশ (নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড) জারি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই নোটিশে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, ২৮ জানুয়ারির মধ্যে চুক্তি সই করতে হবে। এর পরও বন্দর নিজেই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি সই করে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি।

পিপিআর ১০২ (৪) ধারায় বলা হয়, বর্ণিত সময়সীমার মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে কোনো সম্মতি প্রদান না করলে উক্ত দরপত্রদাতার দরপত্র জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দরপত্রদাতাকে চুক্তি সম্পাদনের জন্য আহ্বান জানাতে হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব নিয়ম মানেনি।

তদন্তে দুদক:
কমলাপুর কন্টেইনার ডিপো পরিচালনার দরপত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদক সূত্র জানায়, দুদক চট্টগ্রাম-১-এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক তদন্ত করছেন। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুর কন্টেইনার ডিপো পরিচালনার দরপত্রসহ যাবতীয় নথি এরইমধ্যে সংগ্রহ করেছে দুদক।

মোহাম্মদ সিরাজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, কমলাপুর কন্টেইনার ডিপো পরিচালনার দরপত্রে অনিয়ম হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। এরইমধ্যে যাবতীয় নথি সংগ্রহ করেছি আমরা। সংশ্লিষ্টদের পর্যায়ক্রমে বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে।  

বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কমলাপুর আইসিডি ইয়ার্ডের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে সময় চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে রেলওয়ে সম্প্রতি ইয়ার্ডের মেরামত কাজ শেষ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, কাজ শুরু করার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হবে।

শর্ত ভঙ্গের বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, এ বিষয়ে বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।