চট্টগ্রাম: রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে কর্মরত ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ। অবৈধ এ কর্মকাণ্ড রোধের দায়িত্ব যাদের সেই রেল পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্যও জড়িয়ে পড়েছেন এ অপরাধে।
রেলওয়ের ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৪৮ জন বর্তমানে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনকেন্দ্রিক টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য-প্রমাণ আছে নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের নিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের এ অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সন্তোষ কুমার চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, ৪৮ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা আমরা তৈরি করেছি। তাদের মধ্যে কয়েকজন কারাগারে আছেন। বাকিদের আমরা গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।
রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত তারা হলেন, রেল পুলিশের জেনারেল শাখার এএসআই জসীম উদ্দিন ও এএসআই সোলায়মান, হাবিলদার শাহীন ও রফিক, নায়েক জসীম, আকতার ও ইউসুফ আলী, প্রহরি মাহফুজুর রহমান ও আলমগীর, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অস্ত্র শাখার নায়েক শোয়েব ও হাফিজ, বুকিং সহকারী কাজী মতিনুল ইসলাম রায়হান, আরাফাত ও নয়ন এবং রেলওয়ের স্টাফ সুমন দত্ত।
এছাড়া ৪৮ জনের তালিকায় বাকিরা হলেন- চৈতন্য গলির মো. উছমান, মাদারবাড়ির রণি, স্টেশন রোডের গণি আবাসিক হোটেলের গলির ভেতরের ডিমের আড়তের দোকানের কর্মচারী হিরণ, এনায়েতবাজার গোয়ালপাড়ার আবু তালেব, স্টেশন রোডের এলেন হোমিও হলের পূর্ব পাশের একটি ফ্যাক্সের দোকানের কর্মচারী আলাউদ্দিন, স্টেশন রোডের গণি আবাসিক হোটেলের গলির ভেতরের কবির, গণি হোটেলের টেবিলবয় আল আমিন, ঝাউতলা বিহারি কলোনির সেলিম, রেলওয়ে স্টেশন কলোনির তছলিম ও ইয়াছিন, বিআরটিসি’র পান দোকানদার হেলাল উদ্দিন, স্টেশন রোডের সবুর টেলিকমের সোহেল, স্টেশন রোডের গ্রিন লাইন কাউন্টারের রকিব উদ্দিন ও সুমন, স্টেশন কলোনির সালাউদ্দিন, আদালত ভবনের বাপ্পি, স্টেশন রোডের রুস্তম, তামাকমুণ্ডি লেনের স্টাইল কালেকশনের লুৎফর রহমান জোয়েল, স্টেশন রোডের খাজা টেলিকমের সুমন, নিহান ট্রেডার্সের মালিক সরোয়ার ও কর্মচারী সরোয়ার, হাছান ওরফে দেলু, রিয়াজউদ্দিন বাজারের রানা এন্টারপ্রাইজের মাহমুদ, মানসী স্টোরের সিরাজ, আসমানী শাড়ির জসীম, এবিএস গার্মেণ্টসের ইউসুফ, নাবিল ফ্যাশনের এরশাদ, ছোবহান হোটেলের আনোয়ার ও রফিক, জাহাঙ্গীর ওরফে টাকু, জসিম, ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন এবং চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের ইছহাক।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক সূত্র মতে, গত বছর রেল মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের বিষয়ে তদন্তের জন্য নগর গোয়েন্দা পুলিশকে অনুরোধ জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে চলতি বছরের গত সাত মাস অনুসন্ধান চালিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রাথমিক তালিকাটি তৈরি করেছে।
তালিকাটি তৈরির পর ইতোমধ্যে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, রেলওয়ের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম তালিকায় এসেছে, তারাই মূলত টিকিট সরবরাহকারী। তারা তালিকায় থাকা অন্যান্যদের কালোবাজারির মাধ্যমে বিক্রির জন্য টিকিট দেন। টিকিট বিক্রির টাকা থেকে তারা ভাগ পান। আর তালিকাভূক্ত ব্যক্তিরা ৪-৫টি সিন্ডিকেটে ভাগ হয়ে কালোবাজারি করছেন বলে তথ্য আছে নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক তাফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তালিকা তৈরির বিষয়টি ইতিবাচক। এতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমাদের জন্যও সহজ হবে। টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে যে-ই জড়িত থাকুক না কেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৪