চট্টগ্রাম: নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী, সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চট্টগ্রামের তারকা রাজনীতিবিদরা। ঈদের দ্বিতীয় দিনে বুধবার নেতাদের বাসায় ঢল নেমেছে মানুষের।
রাজনীতিবিদরা নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষকে বুকে টেনে নিচ্ছেন। কখনও মেতে উঠছেন হাসি, ঠাট্টায়।
ঈদুর ফিতর উপলক্ষে ভিআইপি ব্যাংকুইট হলে এবার দশ হাজার মানুষকে আপ্যায়ন করছেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান। বিএনপিসহ ১৯ দলীয় জোটের নেতাকর্মী, নোমানভক্ত সাধারণ মানুষ, পেশাজীবীদের ঢল নেমেছে সকাল থেকেই। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অনেকেই এসেছেন।
সাদা ভাত, গরুর মাংস, শুটকির তরকারি আর ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য মাছ, মুরগির রোস্ট দিয়ে চলছে আপ্যায়ন। নোমানের ব্যক্তিগত সহকারী নূরুল আজিম হিরু বাংলানিউজকে জানান, ৩০ মণ গোশত, দুই মণ শুটকি, দুই মণ মাছ, বেগুন কেনা হয়েছে। রকমারি খাবার দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হচ্ছে।
টেবিলে টেবিলে গিয়ে নোমান সবার খাওয়াদাওয়ার খোঁজখবর নিচ্ছেন। আবার নেতাকর্মীদের পেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের অহিংস আন্দোলনের বার্তাও পৌঁছে দিচ্ছেন।
আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদে আমি নেতাকর্মী, দলমত নির্বিশেষে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী সবাইকে নিয়ে একদিন সময় কাটাই। এবারও সবাই এসেছেন, আমি নেতাকর্মীদের সবাইকে বলছি, ঈদের পর আমরা অহিংস আন্দোলন করব। তবে সেই আন্দোলন হবে তীব্র থেকে তীব্রতর। ’
সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর চশমা হিলের বাসায় যেন জনস্রোত। মহিউদ্দিনের বাসার খাবার টেবিলে সবসময় অতিথি থাকেন আর সবসময় তার মেজবানি খাবার থাকে। তবে এবারের ঈদে যেন অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগসহ দলের নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, উকিল, দরিদ্র মানুষজনের আনাগোণায় মহিউদ্দিনের বাসা হয়ে উঠেছে এক টুকরো মিলন মেলা। আর তাদের জন্য মহিউদ্দিনের আয়োজন-পোলাও কিংবা সাদা ভাত, গরুর মাংস, মুরগির রোস্ট আর জর্দ্দা ভাত।
মহিউদ্দিন আর ছেলে ব্যারিস্টার চৌধুরী মহিবুল হাসান নওফেল টেবিলে টেবিলে গিয়ে অতিথিদের বসিয়ে দিচ্ছেন, খাবার তুলে প্লেটে দিচ্ছেন। আবার কেউ টেবিলে বসতে অপরাগতা জানালে রেগে যাচ্ছেন মহিউদ্দিন।
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাসায় সবসময় ঈদ থাকে। সবসময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকতে আমি পছন্দ করি। আমার দরজা সবসময় সবার জন্য খোলা।
নগরীর মেহেদিবাগে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসাও সরগরম। ঈদের ছুটিতে নগরী ফাঁকা অথচ খসরুর বাড়ির গেটের সামনের সড়ক থেকে বাসা পর্যন্ত গাড়ির দীর্ঘ সারি। একইভাবে নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষে ঠাসা পুরো বাড়ি প্রাঙ্গণ।
টেবিলে বসা লোকজনকে কখনও নিজের হাতেই পরটা আর গোশত তুলে দিচ্ছেন আমির খসরু। আবার কখনও টেবিলে পরটার প্লেট খালি দেখে চিৎকার দিচ্ছেন, এই এখানে আরও পরটা দিচ্ছনা কেন ? আরও পরটা দাও।
এর মাঝেই বাবার হাত ধরে আসা ছোট শিশুটি যখন তাকে সালাম করছেন তার হাতে গুঁজে দিচ্ছেন সেলামী। কাউকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখছেন অনেকক্ষণ, নিবিড় মমতায় বলছেন, ভাল আছ তো ?
আমির খসরু বাংলানিউজকে বলেন, ‘সবাই আসছেন, কোলাকুলি করছেন, খাচ্ছেন এটা যে কত বড় আনন্দ সেটা বলে বোঝানো যাবেনা। নেতকর্মীদের বলেছি, আন্দোলন করতে হবে। ’
একইভাবে সরগরম সিটি মেয়র এম মনজুর আলমের কাট্টলীর বাসভবনও। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের বিএনপির নেতাকর্মী, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাধারণ মানুষ আসছেন দলে দলে।
বুধবার দুপুরে সবার জন্য ভোজের আয়োজন করেছেন মেয়র। আইটেম রেখেছেন সাদা ভাত আর গরুর গোশত।
মেয়র এম মনজুর আলম বাংলানিউজকে বলেন, একদিন আমি সবাইকে আমার বাসায় খাওয়াতে পারছি, আমি নিজে সবার সঙ্গে বসে খেতে পারছি-এটাই আমার আনন্দ।
তবে ঈদের আয়োজনে কিছুটা ব্যতিক্রম নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নূরুল ইসলাম বিএসসি ও খোরশেদ আলম সুজন।
নূরুল ইসলাম বিএসসি বাসায় অতিথিদের আপ্যায়ন করছেন। তাদের আপ্যায়নে কোন ত্রুটি রাখছেন না। কিন্তু তার সব মনযোগ নগরীর বিভিন্ন বস্তির দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য। ভ্রাম্যমাণ স্কুলের মাধ্যমে সাবেক সাংসদ বিএসসি খুবই গোপনে তাদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন খাবার। একইভাবে বস্তিতে বস্তিতে তিনি রমজানের সময় বিলি করেছেন ইফতার সামগ্রী, ঈদবস্ত্র।
নূরুল ইসলাম বিএসসি বাংলানিউজকে বলেন, আমি রাজনীতির জন্য বস্তির মানুষকে সাহায্য করিনা। আমি বিশ্বাস করি, সমাজের দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে বুকে টেনে নেয়ার মধ্যেই ঈদ পুর্নমিলনীর সার্থকতা। সুবিধাবাদী গোষ্ঠী, যারা রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত তাদের বুকে টেনে নেয়ার মধ্যে আহামরি কিছু নেই।
আর খোরশেদ আলম সুজন ঈদুল ফিতরের মত সার্বজনীন ধর্মীয় উৎসবকে রাজনীতির মোড়কে রাখতে আগ্রহী নন। তার মতে, হাজার হাজার মানুষকে খাওয়ানো, লোকদেখানো বিভিন্ন আচার স্রেফ রাজনীতি। এখানে ধর্মীয় সার্বজনীনতার কোন স্থান নেই।
এরপরও সুজনের কাট্টলীর বাসায় ঈদের দিন সকাল থেকেই নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ীদের ঢল নেমেছে। ঈদের দিন সর্বশেষ অতিথিকে বিদায় দিয়েছেন রাত পৌনে ২টায়। বুধবার সকালেও নেতাকর্মীরা আসছেন। সুজন তাদের নিজ হাতে তুলে সেমাই, খেজুরসহ ঘরোয়া খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করছেন। কথায় কথায় দিচ্ছেন আদর্শের পাঠও।
খোরশেদ আলম সুজন বাংলানিউজকে বলেন, আমি রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মেশায়না, ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মেশায়না। আমি গরীব মানুষ। এরপরও যারা আসছেন তাদের সাধ্যমত আপ্যায়ন করছি। ধর্মের যে আদর্শ, রাজনীতির যে আদর্শ সেটাকে ধারণ করাই আমার নীতি।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাবার পর প্রথম ঈদ করছেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। এবার তার বাসায়ও ঢল নেমেছে নেতাকর্মীদের। ছাত্রলী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তো আছেই, ঢল নেমেছে সাধারণ শুভানুধ্যায়ী আর ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরও। বিরিয়ানি, গরুর মাংস, জর্দ্দা ভাত, সেমাই আর কোমল পানীয় দিয়ে আ জ ম নাছির তাদের আপ্যায়ন করছেন।
আ জ ম নাছির বাংলানিউজকে বলেন, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আমার বাসায় আসছেন। এটাই ঈদ উৎসবের সার্বজনীনতা। আমাদের বাঙালী সংস্কৃতিতে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান যে সার্বজনীনভাবে পালিত হয় এটাই তার প্রমাণ। এ ধরনের উৎসবের মাধ্যমে সমাজে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ঘণ্টা, জুলাই ৩০,২০১৪