চট্টগ্রাম : বছর ঘুরে আসে ঈদ। ঈদ মানে অনাবিল আনন্দ।
নগরীর বায়েজিদ থানার চন্দ্রনগর এলাকার বাসিন্দা শাকিল(১৬)কে ঘর থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় গ্রেফতার করে পুলিশ। আটকের পর তাকে আসামী করা হয় ধর্ষন মামলায়। পরবর্তীতে আরো পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে একই মামলায়। ওই আটককৃতরাও সে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে বললেও গ্রেফতারের পর এখনো জেলে শাকিল।
ঈদের দিন সকালে শাকিলকে জেলখানায় দেখতে এসেছেন মা আমেনা বেগম। একমাত্র পুত্রের জন্য সঙ্গে এনেছেন ভাত,পোলাও,মাংস,তরকারি,সেমাইসহ অন্যান্য খাবার। জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খাবার পাঠিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছেন দেখা করার জন্য।
কারাগারের সামনে আমেনা বেগমসহ তার বোন পারভীনের কথা হয় । আমেনা বেগম বলেন,নোয়াখালী জেলার রায়পুর উপজেলার সোনাপুরে তাদের বাড়ী। স্বামী মারা যাওয়ার পর একমাত্র সম্বল শাকিলকে নিয়ে পাড়ি জমান চট্টগ্রামে। কাজ শুরু করেন স্থানীয় একটি গার্মন্টসে। এক সময় পুত্রও কাজ করেন একই কারখানায়।
আমেনা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, ‘শাকিল ছাড়া অন্য কোন অবলম্বন নেই আমার। ১৬ বছরের ছেলেটিকে অন্যায়ভাবে এরকম একটি মামলায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। প্রায় এক বছর শাকিল কারাগারে রয়েছে। ছেলেকে ছাড়া কিভাবে ঈদ করি। তাই ঈদের দিন কিছু খাবার নিয়ে এসেছি। সকাল থেকেই বসে আছি। আমার ছেলেকে যারা ফাঁসিয়েছে আল্লাহ তাদের বিচার করবে। ’
কর্ণফুলী থানার লক্ষীছড়া থেকে মা হালিমা ছেলেকে দেখতে এসেছেন। ছেলে ইলিয়াছকে জায়গার বিরোধ নিয়ে সৎভাইদের মামলায় আটক করা হয় প্রায় সাত মাস পূর্বে। অনেক চেষ্টা করেও জামিন হয়নি। পদ্মা সেলে আছে ইলিয়াছ ।
ছেলেকে ছাড়া কোন ঈদ কাটাননি মা হালিমা। এবারই হয়েছে ব্যতিক্রম। হালিমাকে দেখার কেউ নেই। তিনি বলেন, ‘এ সাত মাস অনেক কষ্ট করে কাটিয়েছি। মেয়েদের বাড়ীতে গিয়ে থেকেছি। আর এ জ্বালা সহ্য করতে পারছি না। আল্লাহ কি গরীবের সহায় হয় না’ ? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘দোয়া করিও যেন ঈদের পর আমার ছেলে জামিন পায়। তখন ঈদের আনন্দ মা -ছেলে ভাগ করে নিব। ’
মাদক মামলায় ছেলেকে দেখতে আসা মোগলঠূলী এলাকার আয়েশা বেগম বলেন, রমজান মাসের ১৮ তারিখ তার ছেলেকে ষড়যন্ত্র করে ইয়াবা দিয়ে এলাকার কিছু লোকজন পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে। ছেলে ঈদের জন্য নতুন পোশাক কিনেছিল। কিন্তু জেলে থাকার কারনে পড়তে পারেনি। তাই এসব নতুন পোশাক দিতে এসেছি। সঙ্গে তার পছন্দের কিছু খাবারও নিয়ে এসেছি।
আয়েশা বেগম জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন,‘ ছেলের কাছে নতুন কাপড় পৌঁছলেও আমার দেওয়া খাবারগুলো দেয়নি তারা। কেন দেয়নি জিজ্ঞেস করতে গেলে তারা উল্টো আমাকে ধমক দেয়। ’
জেল খানার দর্শনার্থী প্রবেশ পথের সিঁড়িতে মনখারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে আমান উল্লাহ। বাড়ী উত্তর হালিশহর। কারাগারে ছোট ভাই আজাদকে দেখতে এসেছেন। প্রায় চার বছর পূর্বে আজাদকে নারী ও শিশু নির্যাতম মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এখনো পর্যন্ত দেখা হয়নি তাই মনটা খারাপ।
আমান উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এবারসহ পাঁচটি ঈদ আমার ছোট ভাই ছাড়া কাটাতে হয়েছে। এর চেয়ে কষ্ট আর কিছু হতে পারে না। তাই প্রতিবছর নামাজের পর অন্য ভাইগুলোসহ তাকে দেখতে এখানে চলে আসি। ’
শুধু আমেনা, হালিমা, আয়েশা ও আমান নয় এরকম আরও মা,বাবা,ভাই,বোন,স্ত্রী ঈদের দিন সকাল থেকেই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি স্বজনদের দেখতে ভিড় করছেন।
কারাগার সূত্র জানায়,ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সকালে বন্দিদের সেমাই ও মুড়ি দেয়া হয়েছে। দুপুরের খাবারে দেয়া হয়েছে ভাল মানের চাউলের তৈরি সাদা ভাত, ডিম ও ইলিশ মাছ এবং রাতের ম্যানুতে আছে পোলাও, গরু অথবা খাসির মাংস, পান-সুপারি ও মিষ্টি এবং একটি কোমল পানীয়। যারা মাংস খাননা তাদের জন্য ডিম রাখা হয়েছে ।
** চট্টগ্রাম কারাগারে এক কাতারে সব বন্দি
বাংলাদেশ সময় : ১৬৩০ ঘন্টা,জুলাই ২৯,২০১৪