ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ডিসি সাইফুলের ১৮ মাসে বছর !

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৪
ডিসি সাইফুলের ১৮ মাসে বছর ! ডিসি সাইফুল ইসলাম

চট্টগ্রাম: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তরের বিশেষ আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে নগরীর কর্ণফুলী থানাধীন কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) এলাকায় একটি তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল সিএমপি। এজন্য সিএমপি সদর দপ্তর থেকে মতামতসহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব চাওয়া হয় সংশ্লিষ্ট বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সাইফুল ইসলামের কাছে।



কিন্তু গত এক বছরেও ডিসি সাইফুল ইসলাম এ সংক্রান্ত মতামত সিএমপি সদর দপ্তরে পাঠাতে পারেননি। সদর দপ্তর থেকে কয়েক দফা তাগাদাপত্র দিলেও পাত্তাই দেননি ক্ষমতাধর এ কর্মকর্তা।
তার গাফিলতিতে তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের পুরো প্রক্রিয়া এখন ঝুলে গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ কমিশনার (বন্দর) সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কোরিয়ান ইপিজেড তদন্ত কেন্দ্র করার জন্য আমাকে যে জমি দিচ্ছে, সেটা আমার পছন্দ হচ্ছেনা। জমি না পেলে হাওয়ার উপর তো আমি কোন মতামত দিতে পারব না।

জমি না পাওয়ার বিষয়টি গত এক বছরে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- না, জানানো হয়নি। আমি এক বছরে কোন সলিউশনে আসতে পারলাম না, এটা আমি কিভাবে জানাব?

সিএমপি কমিশনারের নির্দেশে কয়েক দফা তাগাদাপত্র প্রদানকারী উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মাসুদ-উল-হাসান বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক দফা তাগাদাপত্র দিলেও একবারও কোন জবাব পাইনি।

কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্ব তীর লাগোয়া আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থানা এলাকায় ২৫ হাজার একর জমি নিয়ে স্থাপিত হয় দেশের একমাত্র বিদেশি মালিকানাধীন বেসরকারি ইপিজেড। বর্তমানে সেখানে প্রায় ২০টি কারখানায় উৎপাদন চলছে। এছাড়াও ১০টি ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এবং কর্মচারীদের ১২টি ডরমিটরিসহ আরো বিভিন্ন প্রকল্প ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি বিনিয়োগকারী এ ইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১০ সালের ১৪ অক্টোবরের স্মারক মূলে (স্ব:ম:(পু-৩)/থানা-৮/২০০৫/৬৪৭) এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্বাহী সেলের একই বছরের ৯ নভেম্বরের পত্রমূলে (০৩.৪৫১.০১৮.০২.০০.০২৩.২০০৮-২১০) এলাকাটিকে কর্ণফুলী থানার অধীনে নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপন জারির তিন বছর পর ২০১৩ সালের মার্চ মাসে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ সেখানে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের আবেদন করে। কেইপিজেড এলাকায় শিল্প কারখানা ও শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এ প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে নেয় পুলিশ সদর দপ্তর ও সিএমপি।

এরপর ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি কোরিয়ান ইপিজেডে রক্তক্ষয়ী শ্রমিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে এক নারী শ্রমিক নিহত এবং চার পুলিশসহ অর্ধশত শ্রমিক আহত হন। এরপর ওই বছরের ২ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তর তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টিতে আরও গুরুত্ব দিয়ে সার্বিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সিএমপি সদর দপ্তরকে একটি পত্র (স্মারক নং-ওএল্ডএম/৭৩-২০১২/৪৮৩ -৭৪) দেয়।

সূত্রমতে, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠির প্রেক্ষিতে তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য মতামতসহ স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব চেয়ে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই সিএমপি সদর দপ্তর থেকে উপ কমিশনার (বন্দর) সাইফুল ইসলামের কাছে একটি পত্র দেয়া হয়। ১৭ জুলাই (স্মারক নং-১৬৩৫) বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে আরও একটি পত্র দেয়া হয়। ১১ সেপ্টেম্বর (তাগিদ পত্র নং-২২৫৬) সাইফুল ইসলামকে প্রথম দফা তাগাদা পত্র দেয়া হয়।

সূত্রমতে, এক বছর পর গত ২ জুলাই সিএমপি কমিশনারের নির্দেশে সাইফুল ইসলামের কাছে আরেক দফা তাগাদা পত্র দেয়া হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ার পরও অদ্যাবধি কোন প্রস্তাব/প্রতিবেদন না পাওয়ায় পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। ’

শেষ দফা তাগাদাপত্রে মতামতসহ স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব পাঠানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন উপ পুলিশ কমিশনার (সদর)। তবে ২১ জুলাই বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে ডিসি (বন্দর) সাইফুল ইসলাম কোন তাগাদাপত্র পাননি বলে জানান।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য কোরিয়ান ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার হাসান নাছিরের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করননি। মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা দিলেও সাড়া মেলেনি।

কোরিয়ান ইপিজেডের অপর এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, প্রথম দফা চিঠি পেয়ে সাইফুল ইসলাম কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও পরবর্তীতে তা অব্যাহত রাখেননি। তাদের কার্যালয়ের দক্ষিণে সাইফুল ইসলাম যে জমি পছন্দ করেছেন তা দিতে আগ্রহী নয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে প্রথমদিকে হাতেগোণা দু’বার চিঠি চালাচালি হলেও পুলিশের তোড়জোড় না থাকায় এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর পুলিশের উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, ডিসি সাইফুল ইসলামের দাপ্তরিক কাজে আগ্রহ কম। এর চেয়ে তিনি থানার এস আই, এএসআই, কনস্টেবলদের বদলিতে বেশি গুরুত্ব দেন। গত এক বছরে ডিসি সাইফুল ইসলাম ২১ জন এসআই এবং ৮ জন এএসআইকে দুই মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন থানায় বদলি করেছেন। ১০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্যকে তিনি জোন থেকে বদলি করেছেন।

এ নিয়ে বন্দর জোনের অধীন চার থানা এবং অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা পশ্চিম জোনের চার থানায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ আছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

এসব বিষয়ে বাংলানিউজের কাছে কোন বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন উপ পুলিশ কমিশনার (বন্দর) সাইফুল ইসলাম।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৩,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।