চট্টগ্রাম: বন্দরটিলা এলাকার গৃহিনী আয়েশা। তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত স্বামীর চাকরির ব্যস্ততায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বের হয়েছেন ঈদের কেনাকাটা করতে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এ গৃহিনীর সঙ্গে কথা হয় নগরীর জহুর হকার্স মার্কেটের ফুটপাতে।
তিনি বলেন, স্বামীর আয় সীমিত।
একইদিনে নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলী ফুটপাতে কেনাকাটার সময় কথা হয় হালিশহর এলাকার মো. রাশেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, বড় শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটা করার সামর্থ নেই। তাই ফুটপাত থেকেই বেশিরভাগ কেনাকাটা করেছি।
রাশেদ বলেন, ফুটপাতের দোকানগুলোতেও এখন গুণগত মানের পোশাক পাওয়া যায়। তবে আগের তুলনায় দাম কিছুটা বাড়তি দিতে হচ্ছে।
শুধু আয়েশা কিংবা রাশেদই নয়। নগরীর নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের ঈদের কেনাকাটার নির্ভরতার স্থান হয়ে উঠেছে ফুটপাতগুলো।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে নগরীর নিউমার্কেট, রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকা, আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, ফকিরহাট, বন্দরটিলা, ইপিজেড, কাটগড়, ২ নম্বর গেইট, মুরাদপুর, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতগুলোতে লেগে আছে ক্রেতাদের ভিড়।
এসব এলাকায় বছরের অন্যান্য সময়ে কিছু দোকান থাকলেও ঈদকে ঘিরে বসেছে নতুন নতুন দোকান।
নগরীর নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতের দোকানগুলোতে গেলেই শোনা যায় হকার্সদের হাঁক-ডাক- এক দাম দেড় শ’, যা নেবেন দেড় শ’ বা এক দাম এক শ’, বাইছা লন এক শ’।
নগরীর বিভিন্ন ফুটপাত ঘুরে দেখা গেছে, সব দোকানই নতুন পোশাকে ভরপুর। ছোট বাচ্চা, নারী-পুরুষসহ সকল বয়সী মানুষের পোশাকের প্রদর্শনীতে জমে উঠেছে ফুটপাত। পাঞ্জাবি, শার্ট, শাড়ি, জুতা, স্যান্ডেল, বাচ্চাদের কাপড়, প্রসাধনীসহ প্রয়োজনীয় সব পণ্য মিলছে ফুটপাতে।
বিক্রেতারা বলছেন, নিম্মবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও এখন ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন। বেচাবিক্রিও ভালো চলছে।
তবে, বিশ রমজানের পর বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তারা।
নিউ মার্কেট এলাকার ফুটপাত দোকানদার মো. মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, নারী পুরুষের সব রকম পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। মেয়েদের পাখি, লুঙ্গি ফ্রক এর চাহিদা এবার বেশি। এসব পোশাক ২৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
ছোট ছেলেদের পাগলু, ১০০% লাভ শার্ট এর কদর রয়েছে বলেও জানান মহিউদ্দিন।
ফুটপাত ঘুরে দেখা গেছে, ছেলেদের শার্ট ও প্যান্ট পিস বিক্রি চলছে সমানতালে। বাহারি শার্ট পিস মিলছে দেড়শ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকায়। প্যান্ট পিস পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। তৈরি শার্টও পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়।
শার্ট বিক্রেতা জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শার্ট পিসের চেয়ে রেডিমেড শার্টের চাহিদা বেশি। তাছাড়া কম দামে এখানে সব বয়সীদের শার্ট আছে যার কারণে ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নিউমার্কেট ও আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে ফুটপাতের দোকানগুলোতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন। এখানে অনেক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে মানসম্মত পাঞ্জাবি। ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় মিলছে বাহারি আর নয়নকাড়া পাঞ্জাবিগুলো। কথা হয় পাঞ্জাবি বিক্রেতা করিমের সঙ্গে।
তিনি জানান, কমদামে অনেক ভালো পাঞ্জাবির কালেকশন আমাদের রয়েছে। সাদা ও রঙ-বেরঙের শ্বৈল্পিক পাঞ্জাবি দু’টিই ভালো চলছে।
এদিকে, জুতা, স্যান্ডেল, প্রসাধনীসহ প্রায় সব প্রয়োজনীয় পণ্যও মিলছে ফুটপাতের দোকানে। একশ’ থেকে দুইশ’ টাকায় মিলছে বাহারি ডিজাইনের স্যান্ডেল। আর জুতা মিলছে দুইশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকায়। টুপি, টি শার্ট, লুঙ্গি, চুড়ি, দুল, সুগন্ধি, লিপিস্টিক, পারফিউমসহ বিভিন্ন প্রসাধনীও পাওয়া যাচ্ছে।
প্রসাধনী বিক্রেতা বজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দোকানের খরচ কম হওয়ায় বিদেশি প্রসাধনী ও পারফিউম কম দামে আমরা বিক্রি করতে পারছি। যার কারণে ক্রেতারাও ফুটপাতমুখী হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৪