ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সিডিএ চেয়ারম্যান ছালামের ‘নজিরবিহীন অনিয়ম’

তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৮ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৪
সিডিএ চেয়ারম্যান ছালামের ‘নজিরবিহীন অনিয়ম’ আবদুচ ছালাম

চট্টগ্রাম: প্রকল্প পরিচালকের অজ্ঞাতসারে আউটার রিং রোড প্রকল্পের ১১০ কোটি টাকা বেসরকারি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) করেছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। রাষ্ট্রায়াত্ত সোনালী ব্যাংকে হিসাব বন্ধ করে দিয়ে বেসরকারি পুবালী ব্যাংকে শত কোটি টাকা স্থানান্তর  করা হয়।



কোন প্রকল্পের পুরো টাকা বেসরকারি ব্যাংকে রাখার নিয়ম নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এই অনিয়ম নজিরবিহীন।


অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের টাকায় স্থায়ী আমানত করে ওই ব্যাংকে টাকার যোগান দিয়ে ব্যাক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ সুবিধা নিয়েছেন সিডিএ চেয়ারম্যান।

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, আউটার রিং রোড নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৬৫ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পরে সংশোধিত ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪৯৬ কোটি ৩৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা। তবে এই ব্যয় আরও বাড়তে পারে। তিনটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ প্রকল্পের অর্থায়ন করবে। এর মধ্যে সরকার দেবে ৬৯৮ কোটি ২৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা, জাইকা ৭১৫ কোটি ৫৮ লাখ ২৩ হাজার ও বাকি ৮২ কোটি ৪৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা দেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।


২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে দুই কিস্তিতে এডিপি বরাদ্দের ৮৮ কোটি টাকা ছাড় দেয় সরকার। ওই টাকা রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের কে সি দে রোড শাখায় আউটার রিং রোড প্রকল্পের হিসাবে জমা ছিল। গত ১২ জানুয়ারি সিডিএ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোনালি ব্যাংকে হিসাব বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুবালী ব্যাংক লিমিটেড সিডিএ শাখায় নতুন হিসাব(নং-৭০৭) খুলে ওই টাকা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুবালী ব্যাংকে এক কোটি টাকা করে ৭৫টি তিন মাস মেয়াদি স্থায়ী আমানত করা হয়।

পরে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে আরো ৩৫ কোটি ছাড় দেয় অর্থমন্ত্রণালয়। ছাড়কৃত অর্থ ৫ কোটি টাকা করে একই ব্যাংকে এক মাস মেয়াদি ৭টি স্থায়ী আমানত করা হয়।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি যে কোনো প্রকল্পের টাকা ৮০ শতাংশ রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকে ও ২০ শতাংশ টাকা বেসরকারি ব্যাংকে রাখার নিয়ম রয়েছে। পুরো টাকা বেসরকারি ব্যাংকে রাখার কোনো নিয়ম নেই। সরকারি টাকা এফডিআর করে রাখারও কোনো সুযোগ নেই।

একই রকম অভিমত করেছেন সরকারি নিরীক্ষা বিভাগের এক উর্ধ্বতন কর্মকতার। তার মতে, এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে থাকলে এটা শুধু অনিয়ম নয়, নজিরবিহীন অনিয়ম।

২০১৩ সালের ১৬ নভেম্বর জারিকৃত অর্থমন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, স্বায়ত্তশাসিত/ আধাস্বায়ত্তশাসিত সংস্থা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এডিপির আওতায় সরকার থেকে প্রাপ্ত তহবিলের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা দশ বা ততোধিক বছর যাবৎ বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবসায় নিয়োজিত বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখতে পারবে।

নির্দেশিকায় রয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক/বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন, স্থানান্তরের বা পরিশোধের সকল আদেশে প্রকল্প পরিচালকের স্বাক্ষর এবং এমবোস সীল সম্বলিত হতে হবে।

আউটার রিং রোডের তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক ও চউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বাংলানিউজকে বলেন, কে সি দে রোডের সোনালী ব্যাংকে প্রকল্পের নামে হিসাব ছিল জানতাম। অন্য ব্যাংকে টাকা স্থানান্তরের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পের টাকা পুবালী ব্যাংকে স্থায়ী আমানত করে বিপুল পরিমাণ অর্থের যোগান দেওয়ার বিনিময়ে ব্যাংকটি থেকে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান ওয়েলগ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সানজি টেক্সটাইলের নামে প্রায় ২০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পুবালী ব্যাংকের সিডিএ শাখার উপ-মহা ব্যবস্থাপক ফাইজুল হক শরীফ বাংলানি‌উজকে বলেন, ‘সিডিএর চেয়ারম্যান ব্যক্তিগতভাবে ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেন নি। ’

সিডিএ চেয়ারম্যানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সানজি টেক্সটাইলের নামে কোনো ঋণ সুবিধা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘এটা প্রতিষ্ঠানের বিষয়। সুতরাং এভাবে বলা যাবে না। ’ 

এ প্রসঙ্গে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক নিয়ে বিভিন্ন কথা ওঠার পর আমরা পুবালী ব্যাংকে নতুন করে হিসাব খুলেছি। সোনালি ব্যাংকের হিসাব একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। ’

প্রকল্পের পুরো টাকা বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এধরণের কোনো নিয়ম নেই। যেখানে ইন্টারেস্ট বেশি সেখানে রাখা যায়। ’

প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার না করে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওয়েলগ্রুপ ছোট প্রতিষ্ঠান নয়। সিডিএ’র সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৮ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৪


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad