ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রমজানে বেপরোয়া ছিনতাইয়ের আশংকা

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩১ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৪
রমজানে বেপরোয়া ছিনতাইয়ের আশংকা

চট্টগ্রাম: রমজান শুরুর পর বেপরোয়া ছিনতাই শুরুর আশংকা করছে পুলিশ। এক্ষেত্রে শুধু চট্টগ্রাম নয়, বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকেও বন্দরনগরীতে এসে পেশাদার অপরাধীরা বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হতে পারে বলে তথ্য আছে নগর পুলিশের কাছে।



এ অবস্থায় রমজানে ছিনতাই প্রতিরোধে সতর্কাবস্থায় থাকার এবং এলাকায় ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দিয়ে থানাগুলোতে চিঠি দিয়েছে নগর পুলিশ। এছাড়া ছিনতাইপ্রবণ স্পট এবং সদ্য জামিনপ্রাপ্ত ও জেলের বাইরে থাকা ছিনতাইকারীদের তালিকা তৈরি করছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।


চট্টগ্রামের বাইরে থেকে ছিনতাইকারীরা এসে যাতে নগরীতে আশ্রয় নিতে না পারে সেজন্য হোটেল এবং বস্তি এলাকাগুলোকে বিশেষ নজরদারির আওতায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, রমজানের মধ্যে কেনাকাটা করে মার্কেট থেকে বাসায় যাওয়ার পথে সাধারণ মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হতে পারেন বলে আমরা আশংকা করছি। অলি-গলিতে এ ধরনের ছিনতাই প্রতিরোধ করা আমাদের জন্য কিছুটা সমস্যার হতে পারে। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে রমজান পালন করতে পারে সেজন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এলাকাভিত্তিক ছিনতাইকারীদের তালিকা পাঠানোর জন্য নগরীর ১৬ থানার ওসিকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার।

এদের মধ্যে কারাগারে থাকা, সদ্য জামিন পাওয়া এবং কারাগারের বাইরে থাকা ছিনতাইকারীদের আলাদা করে তালিকা তৈরির জন্য নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার বাবুল আক্তারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ছিনতাইপ্রবণ স্পট এবং পেশাদার ছিনতাইকারী গ্রুপের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্যও নগর গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার বাবুল আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ছিনতাইপ্রবণ ৮০টি স্পট এবং কমপক্ষে এক’শ পেশাদার ছিনতাইকারীর নাম ও ঠিকানাসহ তালিকা আমাদের হাতে আছে। এখন এলাকাভিত্তিক যেসিব তালিকা আসবে তার সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন তালিকা করে দ্রুত অভিযানে নামতে হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর আগ্রাবাদ মোড়, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, ছোটপুল, বড়পুল, হালিশহর, কাস্টমস সেতু, বন্দর ফটক, ইপিজেড, অলংকার, টাইগারপাস, সিআরবি, পুরাতন রেলস্টেশন, নতুন রেলস্টেশনের মুখ, নিউমার্কেট, কোতয়ালি, লালদীঘির পাড়, প্রবর্তক, কাতালগঞ্জ, শহীদ মিনারের সামনের সড়ক, বক্সিরহাট বিট, ষোলশহর, জিইসির মোড়সহ ৮১টি ছিনতাইপ্রবণ পয়েন্টের তালিকা পুলিশের কাছে আছে।

তবে এসব মূল স্পটের বাইরে যেসব অলি-গলিতে ছিনতাইকারী, মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য আছে সেগুলোকে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তালিকাভুক্ত স্পটগুলোতে পুলিশের টহল জোরদার থাকবে বলে জানান নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিল, মে এবং চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন থানায় ২৭টি ছিনতাইয়ের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। নগরীতে বর্তমানে হামকা গ্রুপ, গামছা পার্টি, ব্যাগ টানা পার্টি, বিভিন্ন নামে প্রতারক চক্রসহ ৭-৮টি পেশাদার ছিনতাইকারী গ্রুপ সক্রিয় আছে।  

এছাড়া গত তিন মাসে অর্ধশতাধিক পেশাদার ছিনতাইকারী জামিনে বের হয়েছে বলে তথ্য আছে পুলিশের কাছে। জামিনে মুক্ত হয়ে আইনুল হক, আবুল কাশেম, রিয়াজ, শাহীন, আলম, শাহাদাত, নিজাম উদ্দিন, আবুল কালাম, মিরাজ, এমরান হোসেন, বেলাল, মনির, বোরহান উদ্দিন, বাকের হোসেন, বাচ্চু, আমির হোসেন, আবু সিদ্দিক,  শাহাব উদ্দিন, ফেরদৌস, কাউসার, আসিফ, হানিফ, কিরণ, আলতাফ, ইকবাল, প্রবীর, গোলাম সরওয়ার, ইমন, বিশু, লিটনসহ আরও কয়েকজন ছিনতাইকারী অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে বলেও তথ্য আছে পুলিশের কাছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার বাবুল আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, পেশাদার ছিনতাইকারী গ্রুপগুলোর সদস্যরা যে শুধু ছিনতাই করে তা নয়, চুরি-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে এরা জড়িত। আবার কিছু আছে অপেশাদার ছিনতাইকারী। এদের কাছে ঈদ-রমজান কোন বিষয় নয়। নেশার টাকার জন্য এরা সবসময় ছিনতাই করে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর রোজার আগে ঢাকা, বরিশাল, ভোলা ও নোয়াখালী থেকে কয়েকটি চক্র এসে নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে উঠে। এরা প্রথমে বিভিন্ন বিপণি বিতান ও ব্যাংক-বীমা পর্যবেক্ষণ করে। এরপর কৌশল ঠিক করে নিয়ে ছিনতাই শুরু করে।

সূত্রমতে, নগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রমজান শুরুর আগেই তারা একটি হালনাগাদ তালিকা তৈরি করবেন। রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের একাধিক টিম তৈরি করে ছিনতাইকারীদের ধরতে জোরালো অভিযান শুরু করা হবে। পুরো রমজানজুড়ে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখতে চায় পুলিশ।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ছিনতাই প্রতিরোধে জোরালো অভিযান চলবে। তালিকা হালনাগাদ হলেই আমরা অভিযানে নামব।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ঘণ্টা, জুন ২৪,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।