ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কয়েদির মৃত্যু

কারা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ, চারজনের জবানবন্দি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৪ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৪
কারা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ, চারজনের জবানবন্দি ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: জেল সুপার, জেলারসহ কয়েকজন কারা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উঠা কয়েদি হত্যার অভিযোগ অনুসন্ধানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কুসুম দেওয়ানসহ পুলিশের একটি টিম।

এসময় তারা এক কারারক্ষীসহ চারজনের ১৬১ ধারায় জবানবন্দি নিয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন জেল সুপার, জেলারসহ কারাগারের কয়েকজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও কারারক্ষীকে।

মঙ্গলবার দুপুরে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে যান।
সঙ্গে ছিলেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার বাবুল আক্তার এবং অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ।

গত ৩ জুন রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রাম কারা হাসপাতালের তৃতীয় তলায় সিঁড়ির রেলিংয়ে মো. জাকির হোসেন (৩০) নামে এক কয়েদির মৃত্যু হয়। কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, জাকির গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। তবে শুরু থেকেই তার পরিবার অভিযোগ করে আসছে, জাকির আত্মহত্যা করেনি। তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় জেল সুপার, জেলারসহ ৯জনের বিরুদ্ধে গত ৮ জুন আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করে তার পরিবার। মামলার আরজিতে কারা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আদালত নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনারকে দায়িত্ব দেন।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কুসুম দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, তদন্ত আগেই শুরু করেছি। আজ (মঙ্গলবার) কারাগারে গিয়েছিলাম। আমরা কারা কর্মকর্তা, কয়েদি-হাজতিসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তদন্তের প্রয়োজনে পরে আবারও যাব।

পুলিশ ও কারা কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধানকারী পুলিশের টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিঁড়ির রেলিংয়ের সঙ্গে গামছা ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করা সম্ভব কিনা তারা মূলত সেটি অনুসন্ধানের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ‘ঝুলন্ত’ জাকিরকে প্রথম যে কারারক্ষী দেখেছেন মো.আলমগীর নামে ওই কনস্টেবলের ১৬১ ধারায় জবানবন্দি নিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এছাড়া আরও তিনজন কয়েদি যারা সার্বক্ষণিকভাবে জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকত তাদেরও ১৬১ ধারায় জবানবন্দি নিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

এছাড়া অনুসন্ধানকারী পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনার দিনের বন্দি রেজিস্ট্রার বই, কয়েদি জাকিরের দায়িত্ব সম্পর্কিত নথিপত্র, হাসপাতালে তার চিকিৎসার নথিপত্র সবকিছু পর্যালোচনা করেন এবং নথিগুলোর ফটোকপি সংগ্রহ করেন।

পরিদর্শনের শেষদিকে জেল ‍সুপার মো.ছগীর মিয়া, জেলার নেছার আহমেদ মুকুল, ডেপুটি জেলা জাহিদ হোসেনসহ অভিযুক্ত কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে তাদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার মামলার বাদি ও জাকিরের ছোট ভাই ইয়াকুব কায়সার নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে এসে জবানবন্দি দেবেন।

জাকিরকে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা হলেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নেছার আহমেদ মুকুল, কারা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা.মোস্তাফিজুর রহমান, সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগীর মিয়া, সুবেদার আনজু মিয়া ও হুমায়ন কবির, প্রধান কারারক্ষী মোহাম্মদ হোসেন ও আব্দুর রশিদ, কারারক্ষী মো.আলমগীর ও জিয়াবুল ইসলাম।

একই মামলায় ঘটনার সময় দায়িত্বরত ডেপুটি জেলারসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

জেলহাজতে পরস্পরের যোগসাজশে নির্যাতনের মাধ্যমে জাকিরকে হত্যার অভিযোগে দন্ডবিধির ৩০২, ২০১, ২০৩, ২০৪/৩৪ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

জাকির হোসেন কর্ণফুলী থানার একটি অপরহণ মামলায় ১৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ছিল। তার কয়েদি নম্বর ৮৩৮৫/এ।

জাকিরের মৃত্যুর পর দু’জন কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দু’জন প্রধান কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। দু’জন সুবেদারকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কারারক্ষী দু’জন হলেন, জিয়াবুল ইসলাম ও মো.আলমগীর। প্রধান কারারক্ষীরা হলেন, মোহাম্মদ হোসান এবং আব্দুর রশিদ।

স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়া দুজন হলেন, সুবেদার আনজু মিয়া এবং হুমায়ন কবির।

এছাড়া ঘটনা তদন্তে ডিআইজি প্রিজন এবং জেল সুপার পৃথক দু’টি কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটিগুলো জাকিরের মৃত্যু আত্মহত্যাজনিত বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদন ‍দাখিল করেছে তাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ঘণ্টা, জুন ২৪,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।