ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চবি ছাত্রদলের কমিটি শীঘ্রই, পদপ্রত্যাশীদের তদবির

বিপ্লব পার্থ, চবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৬ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৪
চবি ছাত্রদলের কমিটি শীঘ্রই, পদপ্রত্যাশীদের তদবির

চট্টগ্রাম : সাংগঠনিক গতি আনতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শীঘ্রই নতুন কমিটি ঘোষণা করবে ছাত্রদল। তিন বছর অকার্যকর থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান তিন সদস্যের আংশিক কমিটি  বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সংসদ।

সংগঠনের দায়িত্বশীল সূত্র কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি দেওয়ার কথা ছিল।
এখন আমরা মুক্তি পেয়েছি। শীঘ্রই চবি ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করা হবে। ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রদের নিয়েই নতুন কমিটি হবে। ’

ছাত্রদল সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ২৯ মার্চ ছাত্রদল চবি শাখার মাত্র তিন সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সংসদ। আমিনুল ইসলাম তৌহিদকে সভাপতি, নেছারুল ইসলামকে জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও সাইফুদ্দিন সালাম মিঠুকে সাধারণ সম্পাদক করে এ কমিটি গঠন করা হয়। এরপর সেই বছরের সেপ্টেম্বরে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্নাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয় তিনজনের আংশিক কমিটি।

কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়ার পর নানা সমস্যা দেখা দেয়। সাংগঠনিক সম্পাদক নোয়াখালীর না দিলে এ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হবে না বলে হুংকার দেন তৎকালীন বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ঢাকার বাসায় কেন্দ্রীয় সভাপতি সম্পাদক ও এ্যানীর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয় চবি ছাত্রদলের। কিন্তু চবি ছাত্রদল নেতারা নোয়াখালীর কাউকে সাংগঠনিক সম্পাদক করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
   
এ কারণে চবি ছাত্রদলের কমিটি বিগত সাড়ে তিন বছরেও অনুমোদন পায়নি। এ নিয়ে সংগঠনটিতে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। দ্বিধান্বিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। সংগঠনটির নানা কর্মকান্ডে ফুটে ওঠেছে এ চিত্র। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অভিভাবকহীনভাবে চলছে ছাত্রদলের কর্মকান্ড। অনেকটা অদৃশ্য হয়ে আছে ছাত্রদল।  

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ২০১১ সালে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কেন তা অনুমোদন করা হয়নি জানিনা। মামলা, অত্যাচার সহ্য করে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমরা চাই ছাত্রদের দিয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হোক। ’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু, সহ-সভাপতি নেছারুল ইসলাম নাজমুল এবং কে আলম(খোরশেদ আলম) ও নেতা নুরুল হুদা সোহেলের নেতৃত্বে  চারটি গ্রুপে বিভক্ত রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার  বিভিন্ন কর্মসূচী আলাদাভাবে পালন করেছে গ্রুপগুলো।

সারাদেশের ন্যায় চবিতেও সরকারবিরোধী নানা আন্দোলনে ছাত্রদলকে তেমন মাঠে দেখা যায়নি। তবে সাধারণ সম্পাদক সাইফূদ্দিন সালাম মিঠু ও কে আলমেকে মহানগর বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে মাঝে মধ্যে সক্রিয় দেখা যেতো।

কয়েকজন কর্মী নিয়ে ছবি তুলে প্রেস রিলিজের রাজনীতি করার অভিযোগও রয়েছে এ কমিটির বিরুদ্ধে।

আগামী কমিটিতে কারা পাচ্ছেন এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা প্রশ্নের সঞ্চার হয়েছে। নেতাকর্মীরা বলছেন, নেতৃত্বে যারাই আসুক, তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং পরীক্ষিত নেতা হন।

সংগঠন সূত্র জানায়, ছাত্রদলের নতুন কমিটিকে কেন্দ্র করে ফের অছাত্র ও সুবিধাবাদীরা ‘তদবির’ শুরু করেছেন। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয় এমন ব্যক্তিও আছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চবি ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি নেছারুল ইসলাম নাজমুল ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষে পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে ২০০০-২০০১ সেশনে ফের রসায়ন বিভাগে ভর্তি হয়ে ২০০৮ সালের বিএসসি (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেন।

কিন্তু নির্দিষ্ট গ্রেড পয়েন্ট অর্জন করতে না পারায় মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারেননি তিনি। তাই ছাত্রত্ব ধরে রাখতে বাধ্য হয়ে ২০১০ সালে চট্টগ্রামের বেসরকারি সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ওই বিভাগে তার পরিচিতি নম্বর ৪৪৪ই০-১৬ বলে সার্দান বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়েও তিনি ছাত্রদল চবি শাখার ‘সভাপতি’ পদে লবিং করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানায়।

অন্যদিকে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি প্রার্থী সাইফুদ্দিন সালাম মিঠুও বিশ্ববিদ্যালয়ের  ছাত্র নন। তিনি ২০০০-২০০১ সেশনে গণিত বিভাগে ভর্তি হন। এরপর ২০০৪-০৫ সেশনে এমএসসি ভর্তি হয়ে দু’বার ইয়ার ড্রপ দিয়েছেন। তাছাড়া ২০১৪ সালে তিনি বিয়েও করেন।

সভাপতি প্রার্থী খোরশেদ আলম ২০০৪/০৫ সেশনে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হন। এরপর ২০১১ সালে মাষ্টার্সে ভর্তি হন কে আলম। সে হিসেবে তারও ছাত্রত্ব থাকার কথা নয়। একই অবস্থা নুরুল হুদা সোহেলেরও। ২০০০/০২ সেশনে ভর্তি হয়েও শেষ করতে পারেননি অনার্স।

এর বাইরে ‍যারা শীর্ষ পদের জন্য তদবির করছেন তাদের অনেকেরই ছাত্রত্ব নেই বলে অভিযোগ করেছেন খোদ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

ছাত্রদল নেতারা জানান, সম্মেলনের মধ্যদিয়ে কমিটি গঠনের নিয়ম থাকলেও নানা জটিলতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে অধিকাংশ নেতা-কর্মী দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার দাবি জানালেও অনেক ‘অছাত্র-বিবাহিত এবং বয়স্ক’ নেতারা আহ্বায়ক কমিটি হোক এটাই চান। আর কমিটিতে স্থান পেতে নিজ নিজ জায়গা থেকে ছাত্রদলের অনেক নেতা-কর্মীই ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও ‘তদবির’ করছেন বলে দলের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এদিকে চট্টগ্রামের বাইরের কাউকে কমিটির মূল পদে দিলে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রদল নেতা বাংলানিউজকে জানান।

তিনি বলেন, ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি দেওয়ার ৩০ মিনিটের ভিতর সাধারণ সম্পাদককে রক্তাক্ত করা হয়েছিল এবং কিছুদিন পূর্বে পাবনায় নতুন কমিটি ঘোষনার পর সভাপতি সম্পাদককে গুলি করে বিদ্রোহীরা। এ অবস্থা চবিতেও হতে পারে।

এ ব্যপারে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব বলেন,আমরা জানি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ‍অন্ত কোন্দলে জর্জরিত। আমরা চাই ছাত্রত্ব আছে এমন নেতাদের দিয়ে নতুন কমিটি হোক।

চট্টগ্রামের কাউকে মূলপদে না দিলে সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। সব কিছু চিন্তা করে কমিটি দিব।

বাংলাদেশ সময় : ১০৫৬ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।