চট্টগ্রাম: তিনদিনের টানা বৃষ্টি শেষে পানি নেমে যাওয়ায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জীবনযাত্রা।
সোমবার সকাল থেকে পানি নামতে শুরু করে।
টানা বৃষ্টিপাত বন্ধ হওয়ায় সকালেই নগরীর চকবাজার, কাতালগঞ্জ, বাদুড়তলা, বহদ্দার হাট, চান্দগাঁও, মাদারবাড়ি, নাসিরাবাদ এলাকার পানি সরে যায়। তবে, আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকা, মুরাদপুর সুন্নিয়া মাদ্রাসা এলাকা, বাকলিয়া ও পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি রয়ে গেছে বলে এসব এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডকে ভাগ করে প্রকৌশল ও পরিচ্ছন্ন বিভাগ খাল, নালা-নর্দমায় সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা নিরসনের জন্য কাজ করছেন।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমেদ এবং সচিব রশিদ আহমদ, মেয়রের একান্ত সচিব মো. মনজুরুল ইসলাম, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ শফিকুল মান্নান ছিদ্দিক, প্রকৌশল বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু ছালেহ, প্রকৌশল বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম, প্রকৌশল বিভাগ-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এয়াকুব নবী, প্রকৌশল বিভাগ-৪ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম, প্রকৌশল বিভাগ-৫ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন, যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সামসুল হুদা ছিদ্দিকী, বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহফুজুল হক এসব কাজের তদারকি করছেন।
সকাল থেকে মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম জলাবদ্ধতার কারণ নিরূপন, জলাবদ্ধতা নিরস ও সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা অপসারণের লক্ষ্যে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড, বেড়িবাঁধ ও স্লুইচ গেইট এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। এসময় স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ শুনেন তিনি।
ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড, ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড, ৯ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ৩৭ নম্বর মনিরনগর ওয়ার্ড, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড ও ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড।
অন্যান্য এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে এয়ারপোর্ট এলাকা, পতেঙ্গা থেকে উত্তর কাট্টলী পর্যন্ত বেড়িবাঁধ এলাকা ও স্লুইচ গেইট।
পরিদর্শনকালে স্থানীয় জনগণ ছোট আকারের স্বল্প সংখ্যক স্লুইচ গেইট দিয়ে নগরীর বিপুল পরিমাণ পানি নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে না বলে মেয়রের কাছে তাদের অভিমত প্রকাশ করেন।
তারা অভিযোগ করেন, জোয়ারের সময় স্লুইচ গেইট বন্ধ রাখা এবং ভাটার সময় স্লুইচ গেইট খুলে দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও দায়িত্বশীল কর্মচারীগণ তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাসময়ে পালন করেন না। তা ছাড়া কয়েকটি স্লুইচ গেইটের গেইটগুলো কার্যকর নেই।
এসময় মেয়র পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীকে তলব করে স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগের বিষয়টি অবহিত করেন।
মেয়র বলেন, ‘নাগরিক জীবনের সুযোগ সুবিধা, ভাল-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের উপর। পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, চট্টগ্রাম বন্দর, রেলওয়ে সহ সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা নিয়ে জনগণের সমস্যা রোধ করতে হবে। সেবার ক্ষেত্রে দায়িত্ব সম্পাদনে কোন ধরনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিবেচনা উচিত নয়। ’
এদিকে, সোমবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে ছেদ পড়লেও ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে বলে জানিয়েছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। এছাড়া, চট্টগ্রাম বন্দরকেও ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, উত্তর বঙ্গোপাসগরে মৌসুমী বায়ু প্রবল থাকার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি জানান, রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায়, উত্তর বঙ্গোপাসগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমুহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
পানিবন্দীদের ত্রাণ বিতরণ করলেন মেয়র
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নগরীর পানিবন্দী দুর্গতদের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন।
দুপুরে নগরীর উপকূলীয় ওয়ার্ড সমুহে এ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চাল, ময়দা, ছোলা ও চিনি।
ত্রাণ বিতরণকালে মেয়র ভারী বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি এসময় বলেন, ‘সুখ-দুঃখে বিপদে-আপদে সুদিন ও দূর্দিনে আপনাদের পাশে থাকতে চাই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৪