ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

কর ও অনুদান নির্ভর আরেকটি বাজেট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৪
কর ও অনুদান নির্ভর আরেকটি বাজেট ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: উন্নয়ন অনুদান ও বকেয়া কর আদায়কে আয়ের মূল খাত দেখিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মোট ১ হাজার ১৯৫ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে কর্পোরেশনের এ বাজেটকে অভিলাষি ও গতানুগতিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অর্থনীতিবিদরা।



রোববার নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে বাজেট ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম মনজুর আলম।

প্রস্তাবিত বাজেটে তিন ধরনের কর বাবদ মোট আয় ধরা হয়েছে ৪৩৭ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
এর মধ্যে বকেয়া কর ও অভিকর খাতে সর্বোচ্চ ২২৯ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার টাকা আয় ধরা হয়েছে।

হাল কর ও অভিকর খাতে ১২৩ কোটি ২৫ লাখ ৬৯ হাজার এবং অন্যান্য কর বাবদ ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় ধরা হয়েছে।

প্রসঙ্গত,গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) তিন ধরনের করে মোট আয় ধরা হয়েছিল ৪০০ কোটি ৫৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুসারে ওই তিন ধরনের আয়কর বাবদ চসিকের আয় হয়েছে ২৩৯ কোটি ৩৪ লাখ  টাকা। সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল বকেয়া কর খাতে ২০২ কোটি ৫৪ লাখ ২২ হাজার টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৭৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বাজেটে উন্নয়ন অনুদান খাতে ৫৯০ কোটি টাকা আয় দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে ৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা আয় ধরা হয়। ঘোষিত বাজেটে নগরের উন্নয়ন খাতে সর্বোচ্চ ৫৭২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। গত অর্থবছরের (২০১৩-১৪) বাজেটে উন্নয়ন খাতে ৫৪৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও খরচ হয়েছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ১০ হাজার  টাকা। এবারের বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে বেতন, ভাতা ও পারিশ্রমিক খাতে ১৫৯ কোটি ৬৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।

বাজেট বক্তৃতায় সিটি মেয়র মনজুর আলম বলেন,কর্পোরেশনের আয়ের প্রধান উৎস পৌর কর। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে, চিটাগং স্টিল মিল ও সিজেকেএসের কাছে পাওনা ১২৫ কোটি ৬৮ লাখ ৩২ হাজার টাকা। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা পৌর কর আদায় হলে নগর উন্নয়ন কাজ আরো জোরদার হবে। জনগণের প্রত্যাশিত সেবা এবং ‍অবশ্য করণীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসমূহ নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন।

জলাবদ্ধতা নিরসনে কোন পরিকল্পনা নেই

টানা বৃষ্টিতে তিনদিন ধরে পানিবন্দী চট্টগ্রামবাসী। মানবেতর জীবন যাপন করছে নগরীর নিচু এলাকার লোকজন। অথচ জলাবদ্ধতা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের বাজেটে কোন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ নেই। জলাবদ্ধতা নিরসনে কত টাকা খরচ করা হয়েছে তাও উল্লেখ করা হয়নি। শুধু মাত্র ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে দায় এড়ালেন নগর পিতা।

মেয়র এম মনজুর আলম বলেন, পানি যাবে কোথায়? কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ের নামে ৫০০ ফুটের চেয়ে বেশি নদী ভরাট করে ফেলা হয়েছে। তাই জোয়ারের পানি ওভার ফ্লো হয়ে নগরীতে ঢুকে পড়ছে। ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানের বাস্তবায়ন ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসন কোনভাবেই সম্ভব না।

তিনি বলেন, বহদ্দার হাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খননের জন্য ২৯৭ কোটি টাকার প্রকল্প চেয়েছি সরকারের কাছে। এরমধ্যে ৭০ শতাংশ টাকা সরকারি তহবিল থেকে। ৩০ শতাংশ কর্পোরেশন অর্থায়ন করবে। তিন বছর ধরে এ প্রকল্পের জন্য সরকারের কাছে ধরণা দিয়েছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তা পাইনি। এটি বাস্তবায়ন হলে বহদ্দারহাট এলাকায়  জলাবদ্ধতা আর হবে না।

এসময় সরকারের কাছে ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের দাবি জানান মেয়র।

নির্বাচনী ইশতেহারে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক ‍গুরু এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার করেছিলেন মেয়র এম মনজুর আলম। চার বছরেও জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারেননি তিনি। তবে এর দায়ভার নিতেও রাজি নন।

মেয়র বলেন, আমাদের বড় প্রাপ্তি হচ্ছে আগে তিন চারদিন ধরে পানিবন্দী থাকতো নগরবাসী। এখন বৃষ্টি বন্ধ হলেই পানি নেমে যাচ্ছে। ১৫ বছর আগে যে প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল তা এখন নেই। জলাশয় ও খালের আয়তন কমে আসছে। ১০০মিলিমিটারের কম বৃষ্টি হলে পানি নেমে যাবে। এর বেশি হলে কয়েক ঘণ্টা জলজট হবে। কোন কোন জায়গায় জোয়ারের পানির কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন ছাড়া স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়।

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক সিকান্দার খান বলেন, নতুন খাল খনন না করলেও নালা-নর্দমা সচল ও রক্ষণাবেক্ষণ করা কর্পোরেশনের দায়িত্ব।

জলাবদ্ধতা নিরসনে কি কাজ করা হয়েছে। কি করা হয়নি। সামনে কি করা হবে তা স্পষ্ট বলা উচিত ছিল।

বাজেট আর বাস্তবায়নে মিল নেই

রোববার নতুন অর্থবছরের বাজেটের পাশাপাশি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ৪৯৮ কোটি ৩৫ লাখ ৭ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়। ওই অর্থবছরে মোট এক হাজার ১০৬ কোটি ৩০ লাখ ৭হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ। বাস্তবায়ন না হলেও আরো ৯০ কোটি টাকা বেশি রেখে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মেয়র এম মনজুর আলম বলেন, গত অর্থবছরে সরকারি বরাদ্দ যা পাওয়ার কথা ছিল তা পাইনি। তবুও ৪৫ শতাংশ অর্জন করেছি।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অধ্যাপক সিকান্দার খান বাংলানি‌উজকে বলেন, বাস্তবায়নের সঙ্গে মিল রেখে বাজেট করতে হবে। যদি তা না হয় তাহলে এটাকে আমরা বলি অভিলাষি বাজেট। এটা জনগণের সঙ্গে একধরণের প্রতারণাও বটে। মেয়রের শেষ বছরের বাজেট হিসেবে বাস্তবের সঙ্গে মিল রেখে চমক থাকার কথা ছিল। সেটা নেই। এটি গতানুগতিক বাজেট হয়েছে।

বাজেটে উন্নয়ন অনুদান খাতে ৫৯০ কোটি টাকা আয় দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে ৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা আয় ধরা হয়। ঘোষিত বাজেটে নগরের উন্নয়ন খাতে সর্বোচ্চ ৫৭২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। গত অর্থবছরের (২০১৩-১৪) বাজেটে উন্নয়ন খাতে ৫৪৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও খরচ হয়েছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ১০ হাজার  টাকা। এবারের বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে বেতন, ভাতা ও পারিশ্রমিক খাতে ১৫৯ কোটি ৬৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।

বাজেট অধিবেশনে চসিকের অর্থ ও সংস্থাপনবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমদ,সচিব রশিদ রশিদ আহমদ, অতিরিক্ত প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।