চট্টগ্রাম: মৌসুমি বায়ূর প্রভাবে টানা বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে।
টানা বৃষ্টিতে শনিবারও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে পানিতে।
শনিবার সকালেও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে আছে নগরীর অক্সিজেন, হামজারবাগ, মুরাদপুর, আতুরার ডিপো, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, কাতালগঞ্জ, নাসিরাবাদ, বায়োজিদ, ষোলশহর দু’নম্বর গেট, চকবাজার, পাঁচলাইশ, ডিসি রোড, খাজা রোড, চান্দগাঁও, মোহরা, বাকলিয়া, চাক্তাই, রাজাখালি, দেওয়ানবাজার, আগ্রাবাদ, ছোটপুল, বড়পুল, সিডিএ, হালিশহর, পাহাড়তলী, সরাইপাড়া, সাগরিকা, কাঁচারাস্তার মাথা ও পতেঙ্গার নিম্নাঞ্চল।
নগরীর পশ্চিম বাকলিয়া আতুরার দোকান এলাকার বাসিন্দা তাহেরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবারও বাসায় পানি ঢুকেছে। খাট-সোফা, বিছানাপত্র পর্যন্ত পানির নিচে ছিল। পরে মেশিন লাগিয়ে পানি বের করেছি। শনিবার সকালে আবারও পানি ঢুকে গেছে বাসায়।
তবে শনিবার পানির পরিমাণ শুক্রবারের চেয়ে কিছুটা কম বলে জানান এ গৃহিণী।
চান্দগাঁও খাজা রোড এলাকার বাসিন্দা মুস্তফা নঈম বাংলানিউজকে বলেন, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, খাজা রোডসহ কয়েক কিলোমিটার এলাকা হাঁটু থেকে কোমড় পানির নিচে চলে গেছে। অনেকে রাস্তায় জাল ফেলে মাছ ধরছেন।
নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, মোহরা এলাকায় কর্মস্থল অভিমুখী লোকজনকে ভ্যানে চড়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঘণ্টায় ২০ মিলিমিটারের উপরে বৃষ্টি হলে জলজট রোধ করা সম্ভব নয়। এমনিতে খাল এবং নালায় কোন ময়লা-আবর্জনা নেই। জলজটমুক্ত নগরী গড়তে হলে নতুন খাল খননের কোন বিকল্প নেই।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অনেকে সঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছাতে না পারায় নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ অঘোষিতভাবে বন্ধ আছে। নগরীর পশ্চিম বাকলিয়া এলাকায় সরকারী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সব শ্রেণীকক্ষ, অফিস, সামনের মাঠ শুক্রবার সকাল থেকে পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির কারণে শনিবার সকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কলেজে গিয়ে ঢুকতে পারেননি।
টিচার্স ট্রেনিং কলেজের এক শিক্ষক বাংলানিউজকে জানান, পানির কারণে ঢুকতে না পারায় কলেজে ক্লাশ-পরীক্ষাসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ আছে।
নগরীর অপর্ণাচরণ সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা গৌরি নন্দিতা বাংলানিউজকে বলেন, সকালে স্কুলে ফোন করে জানতে পেরেছি পানির কারণে অনেক ছাত্রী স্কুলে আসতে পারেননি। এজন্য আজ (শনিবার) দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা হচ্ছেনা।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২১১ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ায় এধরণের ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে তিনি জানান।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবাণীতে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত মৌসুমী লঘুচাপের প্রভাবে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এতে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমুহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমুহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে নদী বন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সতর্কবার্তায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমুহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৪