তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত নূরুল ইসলাম বিএসসি। প্রচলিত পেশীশক্তি আর দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি থেকে ভিন্ন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির এ নেতা ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন।
চট্টগ্রাম: নূরুল ইসলাম বিএসসি চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, নেতাকর্মীদের একটি অংশের উপর দৃশ্যত নিয়ন্ত্রণ আছে তার। এক সন্ধ্যায় নগরীর খুলশীতে বিএসসি’র সঙ্গে আলাপের শুরুতেই প্রথম প্রশ্নটি ছিল, সাংসদ হতে না পেরে রাজনীতিতে কি কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন ?
উত্তর দেন বিএসসি- মোটেই না, আমি রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়িনি। একজন রাজনীতিকের সফলতা শুধুু মন্ত্রী-এমপি হওয়ার উপর নির্ভর করেনা। মানুষ আমাকে ভালবাসে, মানুষ আমাকে শ্রদ্ধা করে, তাদের মনের মণিকোঠায় আমি স্থান পেয়েছি-একজন রাজনীতিকের জন্য এর চেয়ে বড় কোন প্রাপ্তি হতে পারেনা।
একবার নি:শ্বাস নিয়ে আবারও বলেন বিএসসি, আমি তো রাজনীতি ছেড়ে দিইনি। আমি রাজনীতিতে আছি, রাজনীতিতেই থাকব। আমি নগর আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট। পদ-পদবির জন্য আমি রাজনীতি করিনা। ভাল কাজের মাধ্যমে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমি রাজনীতি করি।
যত ভাল কাজ করলে শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী হবে, রাজনীতিতে থেকে সব ভাল কাজ আমি করতে চাই, বলেন বিএসসি।
তিনি বলেন, দলীয় প্রধানের নির্দেশ মেনে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি সরে না দাঁড়ালে নির্বাচন হত কিনা সন্দেহ আছে। আমি দলের জন্য ত্যাগ করেছি। নির্বাচনের পর আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাকে বাহবা দিয়েছেন। দলের জন্য আমি যে স্যাক্রিফাইস করেছি, তাতে নেত্রী অত্যন্ত খুশি।
তিনি বলেন, ‘আমি হতাশ নই। আমি কখনও হতাশ হইনা। আমার অবস্থানে আমি সন্তুষ্ট। ’
বিএসসি’র পরিচ্ছন্ন ইমেজকে প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের কেউ নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন কিনা এমন প্রশ্ন ছিল তার কাছে। উত্তরে বিএসসি বলেন, খালি চোখে এটা মনে হতে পারে। তবে আমি এমনটা মনে করিনা। উদ্দেশ্যমূলকভাবে কেউ আমাকে দলে কোণঠাসা করতে চাইছে, এমনটাও মনে করিনা।
তিনি বলেন, আমি জেনেবুঝে কখনও অন্যায় করিনা, মিথ্যা কথা বলিনা। পাঁচ বছরে কত প্রকল্প, কত গম-চাল আমার হাত দিয়ে গেছে। কিন্তু কেউ এক কেজি চাল আমার ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবেনা। আমি নিজের টাকায় মসজিদ, মন্দিরে, পাড়ায় পাড়ায় ডিপটিউবওয়েল বসিয়ে দিয়েছি। আমার নির্বাচনী এলাকার কোথাও পানির জন্য কাউকে রাস্তায় নামতে হয়না।
মহিউদ্দিনের (নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি) সঙ্গে সম্পর্ক কেমন জানতে চাইলে বিএসসি বলেন, সম্পর্ক খুবই চমৎকার। মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। দলের কারও সঙ্গেই আমার কোন বিরোধ নেই। সবার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক আছে।
দলীয় কর্মসূচীতে যান না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শরীর খারাপ থাকায় বেশ কিছুদিন সাংগঠনিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারিনি। এবার থেকে নিয়মিত অংশ নেব। সামনে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, শোক দিবসসহ সাংগঠনিক বেশকিছু কর্মসূচী আছে। সেগুলো পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আলাপকালে নিজ থেকে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতার প্রসঙ্গ তুলেন নূরুল ইসলাম বিএসসি। তার সবচেয়ে বড় অতৃপ্তি আছে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি দিতে না পারায়। বিএসসি বলেন, ‘প্রতিবছর জলাবদ্ধতার কারণে কাপাসগোলা, চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের দু’হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়। এ সমস্যা জরুরি ভিত্তিতে সমাধান দরকার। ’
তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন একার পক্ষে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিডিএ, ওয়াসা, জনপ্রতিনিধিরা সবাই মিলে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে দেখা যাবে কিনা এমন প্রশ্নও ছিল তার কাছে। জবাবে তিনি বলেন, সময় বলবে মেয়র নির্বাচন করব কিনা। সময় ও সুযোগ অনুকূলে থাকলে তখন বিবেচনা করব।
বিএসসি বলেন, আমি শুধু একটি বিষয় আশ্বস্ত করতে চাই, আমি রাজনীতি করে যাব। মানুষ অতীতের মত তাদের বিপদে-আপদে আমাকে তাদের পাশে পাবে। মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষের জন্য যিনি রাজনীতি করেন তার হারাবার কিছু নেই, আমারও হারাবার কিছু নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ঘণ্টা, জুন ০৩,২০১৪
চট্টগ্রাম প্রতিদিন
রাজনীতিতে আছি, রাজনীতিতে থাকব: বিএসসি
তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর ও রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।