ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ইউএসটিসির বিরুদ্ধে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৭ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৪
বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ইউএসটিসির বিরুদ্ধে ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: নগরীর বেসরকারি চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএসটিসি)বিরুদ্ধে বেসরাকরি বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে  আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা।



সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘নিয়মানুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হবে ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে। দেশে বিদ্যমান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী নূন্যতম ৯ থেকে সর্বোচ্চ ২১ সদস্যের সমন্বয়ে ট্রাস্টি বোর্ড গঠিত হওয়ার কথা।
কিন্তু, ইউএসটিসি ট্রাস্টি মাত্র ৬ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত। নিয়ম না মেনে গঠিত এ বোর্ড থেকেও এক জন সদস্য ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন, দুইজন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ’

‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৩১ (১), ৩২ (১), ৩৩ (১) ধারা মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলর নিযুক্ত কোন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার নেই। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ট্রাস্টি বোর্ডকে অনুরোধ করলেও তারা তা কার্যকর করেনি। ’

‘ইউএসটিসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩১, ৩২ এবং ৩৩ এর লঙ্ঘন করে উপাচার্য, উপা-উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগ দিয়েছে। এসব ধারায় এসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে চ্যান্সেলরের কাছে প্রস্তাব পেশ করতে বলা হয়েছে। চ্যান্সেলর নিযুক্ত উপাচার্য না থাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া সনদপত্রের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ‘

বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটও আইন মেনে গঠিত হয়নি বলে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘বেসরাকরি বিশ্ববিদ্যালয় ‍আইন ২০১০ এর ১৭ (১) ধারা অনুযায়ী সিন্ডিকেটে ১২ জন সদস্য থাকার কথা। কিন্তু ইউএসটিসিতে সিন্ডিকেট ১০ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত। সিন্ডিকেটে সরকার মনোনীত কোন সদস্য নেই। কর্তৃপক্ষের নিকটতম আত্মীয়-স্বজন ও আজ্ঞাবহ ব্যক্তিদের নিয়েই এ সিন্ডিকেট গঠন করা হয়েছে। ’

‘আইনের ১৪ ধারা মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান কমিটি, শিক্ষক নিয়োগ কমিটি, শৃঙ্খলা কমিটি থাকার কথা। কিন্তু কাগজে-কলমে এসব কমিটি থাকলেও বাস্তবে কোন কার্যক্রম নেই। ’

বিশ্ববিদ্যালয় আইন না ‍মানায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত হুমকির মুখে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৪০ (১) ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদান করা বাধ্যতামূলক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন নম্বর পান না। ’

‘চিকিৎসা অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমএন্ডডিসি) এর রেজিস্ট্রেশন থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিবিএস ২৪ তম ব্যাচের আংশিক এবং ২৫, ২৬, ২৭তম ব্যাচের প্রায় এক হাজারেরও বেশী ছাত্রছাত্রীর কোন রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই। এর ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাশ করা শিক্ষার্থীরা সকল প্রকার যোগ্যতা স্বত্ত্বেও দেশে ও বিদেশে চিকিৎসক হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন না। একইসঙ্গে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কোর্সে ভর্তি হওয়া ও সরকারি চাকুরিতে যোগদানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। ’

ইউএসটিসিতে কর্মরতদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরতে গিয়ে বলা হয়, ‘বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয় আইনের  ৪৩ ধারায় কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বেতন কাঠামো ও চাকুরি প্রবিধানমালার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইউএসটিসিতে কোন বেতন কাঠামো ও চাকুরি প্রবিধান মালা নেই। যার কারণে কর্তৃপক্ষ কোন ধরণের কারণ দর্শানো ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া ছাড়াই যখন খুশী যে কাউকে চাকুরিচ্যুত করেন। ’

‘ইউএসটিসিতে মাসিক বেতন ছাড়া কোন পেনশন, গ্র্যাচুয়িটি বা অন্য কোন সুযোগ সুবিধা নেই। সরকার জুলাই ২০১৩ থেকে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। মাতৃত্বকালিন সবেতনে ৬ মাসের ছুটি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল যাদের চাকুরি বয়স তিন বছরের উর্ধে তাদের ৩ মাসের সবেতন ছুটি দেওয়া হয়। অন্যদের বেলায় কোন ছুটির ক্ষেত্রে বেতন দেওয়া হয় না। ’

‘১৯৯৮ সালে একটি সার্ভিস রুল প্রণয়ণ করা হয়েছিল। তা এখনো পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় এর বেতন কাঠামো অমানবিক ও অসম্মানজনক। ’

বিশ্বাবিদ্যালয় আইনকে প্রতিটি ক্ষেত্রে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আইনের ৯ (৪) ধারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে গঠিত সাধারণ তহবিলে সকল অর্থ জমা করার বিধান থাকলেও ইউএসটিসির সকল অর্থ জমা হয় জনসেবা ফাউন্ডেশনের নামে একটি ফাউন্ডেশনের তহবিলে। ’

‘আইনের ৪৪ (৪) ধারায়, প্রতি আর্থিক বছরের ৩০ শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ববর্তী আর্থিক বৎসরের আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং সংরক্ষিত তহবিল ও সাধারণ তহবিলের হিসাব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও সরকারের নিকট প্রেরণ করার কথা, কিন্তু বিগত কয়েক বৎসর যাবত তা করা হচ্ছে না। বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ড সম্প্রতি এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর একটি নোটিশও জারি করেছে। ’

বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বাইরেও ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ সরকারি কোন প্রজ্ঞাপন ও নিয়ম মানছে না বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন বক্তারা। তারা বলেন, ‘দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এর ভর্তি পরীক্ষা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারাদেশে একই দিনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু ইউএসটিসিতে তা না করে আলাদাভাবে পরীক্ষা নিয়ে দুর্নীতির মহোৎসব চলে। ’

সংবাদ সম্মেলনে এছাড়াও শিক্ষক সংকটসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। এসময় ইউএসটিসিতে বিদ্যমান অচলাবস্থা নিরসনের জন্য ৭টি দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান করেন বক্তারা। দাবিগুলো হলো- রাষ্টপতি অনুমোদিত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগ, চাকুরি বিধিমাল প্রণয়ন, শিক্ষার্থীদের বিএমডিসি ও আইবি সনদ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, শিক্ষক ও চিকিৎসক সংকট দূর করে ক্লাসরুম, লেকচার গ্যালারিসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত, ভর্তি বাণিজ্য রোধ এবং মাতৃত্বকালীন ৬ মাসের সবেতন ছুটির নিশ্চয়তা প্রদান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাক-কান-গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কামাল উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন ‍বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ডা. এ এইচ এম ইছহাক চৌধুরী, ডা. কাজী রফিকুল হক, ডা. মোকাদ্দেস আক্তার বেগম, ডা. এম আরিফুজ্জামান, ড. কাজী আহমেদ নবী, ডা. বদিউল আলম, ডা. দিদারুল আলম, ডা. প্রকাশ কুমার চৌধুরী, অধ্যাপক সৈয়দ শহীদুল্লাহ চৌধুরী, রমা বড়ুয়া, ড. কিশোর মজুমদার, ডা. কামরুল হাসান, ডা. এ বি এম মোহাম্মদ আলী, ডা. মাহবুবুল আলম, ডা. এস এম মাহবুবুল কদির, আনোয়ারুল ইসলাম বাপ্পী প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে এছাড়াও বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীসহ বিএমএর তিন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, চাকুরি বিধিমালা প্রণয়নসহ বিভিন্ন দাবিতে গত ১৮ মে থেকে ইউএসটিসিতে শিক্ষক-চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন। আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।