চট্টগ্রাম: ১৯৯৫ সালে প্রণীত মাস্টার প্ল্যানে না থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রামে একের পর এক ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। কয়েক মাসের মধ্যে শুরু হবে আরও একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ।
তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দাবি, যানজট নিরসনে মাস্টার প্ল্যানে ফ্লাইওভার নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম আয়োজিত ‘চট্টগ্রামের ট্রাফিক সমস্যা ও ফ্লাইওভার নির্মাণের যথার্থতা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া।
এসময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক সিকান্দার খান, সহ-সভাপতি স্থপতি বিধান বড়ুয়া, অধ্যাপিকা সুরাইয়া ইসলাম, প্রকৌশলী দেলোওয়ার মজুমদার, শাহরিয়ার খালেদ।
সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন,‘উড়াল সেতুর যৌক্তিকতা প্রমাণ করার জন্য ‘মাস্টার প্ল্যান এবং ড্যাপ’ এর কিছু খণ্ডিত উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছে চউক। ড্যাপ ও মাস্টার প্ল্যানে যানজট নিরসণে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন না করে তারা ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে। ’
সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ড্যাপ এ সাবলীলভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে তিন নাম্বারে বলা হয়েছে, যানবাহনের চাপের উপর সমীক্ষার ভিত্তিতে চউক দুই নম্বর গেইট ও জিইসি মোড় অন্তর্ভুক্ত করে ফ্লাইওভার নির্মাণ বিবেচনা করতে পারে। এ উদ্দেশ্যে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিস্তারিত সমীক্ষার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ৫.২ কিলোমিটার মুরাদপুর-লালখানবাজার দৈর্ঘ্য প্রস্তাবিত ফ্লাইওভারটি এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যা পুনঃপরীক্ষার দাবি রাখে। ’
তিনি বলেন,‘অগ্রাধিকার ভিতিত্তে অন্য ৭টি সুপারিশ বাস্তবায়ন না করে ৩নং ধারায় শর্তসাপেক্ষে ফ্লাইওভার নির্মাণ বিবেচনা করতে বলেছে তা নির্মাণে চউক এত উৎসাহী কেন তা বোধগম্য নয়। ’ মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার ৫.২ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার মাস্টার প্ল্যান ও ড্যাপে নেই বলে দাবি তার।
প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ফুটপাত, ট্রাফিক সিগন্যাল, লেইন মার্কিং, ট্রাফিক আইন প্রয়োগ ও ভবন নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া যতই সড়ক সম্প্রসারণ ও ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হোক যানজট নিরসণ সম্ভব নয়। যানজট নিরসনে সাশ্রয়ী কাজগুলো না করে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণে চউক কেন এত উৎসাহী তা বোধগম্য নয়।
মাস্টার প্ল্যান ও ড্যাপের সুপারিশগুলো শুধুমাত্র খণ্ডিতভাবে ব্যবহার না করে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ১৯৯৫ সালে প্রণীত মাস্টার প্ল্যান ও ড্যাপ এ নির্দেশিত মৌলিক বিষয়গুলো কেন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তার ব্যাখা দেওয়া হোক। এছাড়া নির্মিত ও নির্মিয়মান ও নির্মিতব্য সকল ফ্লাইওভারের ফিজিবিলিটি স্টাডি জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানান তিনি।
এদিকে মাস্টার প্ল্যান ও ড্যাপের সুপারিশ অনুযায়ী ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে বলে দাবি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের।
চউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আবু ঈসা আনসারী বাংলানিউজকে বলেন, ড্যাপ ও মাস্টার প্ল্যানে ২নং গেইট ও জিইসি মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের বিষয়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে। এখানে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। সে অনুযায়ী ফিজিবিলিটি স্টাডি করে মুরাদপুর-লালখানবাজার ফ্লাইওভার বাস্তবায়ন করছে চউক।
প্রসঙ্গত ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর একনেকের সভায় মুরাদপুর-লালখান বাজার ফ্লাইওভার প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। চার লেনবিশিষ্ট ফ্লাইওভারের মোট দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬২ কোটি ২১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৬ এর জুন পর্যন্ত। গত ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয়। ২০১৪ সালের ১৫ মে দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়। এতে চারটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাকযোগ্য ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, জুন ২, ২০১৪