ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সংবর্ধনায় মিশনারি স্কুলের এসএসসি উত্তীর্ণদের মিলনমেলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৯ ঘণ্টা, জুন ২, ২০১৪
সংবর্ধনায় মিশনারি স্কুলের এসএসসি উত্তীর্ণদের মিলনমেলা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ঘড়ির কাঁটায় বিকেল ৩টা। নগরীর পাথরঘাটায় সেন্টপ্লাসিডস স্কুলের সুবিশাল মাঠজুড়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো কয়েক’শ শিক্ষার্থী ব্যান্ডের তালে তালে এগিয়ে যাচ্ছেন।

স্কুলের দোতলা থেকে সেই শিক্ষার্থীদের উপর ছিটানো হচ্ছে ফুলের পাঁপড়ি।

শিক্ষার্থীরা একে একে ঢুকছেন স্কুলের সুবিশাল মিলনায়তনে।
সেখানে মঞ্চে চলছে বাঙালীর চিরায়ত ঢোলবাদন। ঢোলবাদন শেষে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা তাদের অগ্রজদের বরণ করে নিল গান আর নাচের মধ্য দিয়ে।

চট্টগ্রাম কাথলিক ডায়োসিসের প্রতিষ্ঠিত পাঁচটি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবীদের সোমবার বিকেলে মিলন মেলা বসেছিল কাথলিক ধর্মপ্রদেশের শিক্ষা কমিশন আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। কারিতাস ফরমেশন অফ ইয়ুথ এ-টিচারস প্রোগ্রামের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত ওই সংবর্ধনায় চারশ’রও বেশি শিক্ষার্থীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ তুলে দেয়া হয়।

পাঁচটি স্কুল হচ্ছে, নগরীর পাথরঘাটার সেন্ট প্ল্যাসিডস হাই স্কুল, সেন্ট স্কলাসটিকাস হাই স্কুল, দিয়াঙের মরিয়ম আশ্রম হাই স্কুল, নোয়াখালীর ব্রাদার আন্দ্রে হাই স্কুল এবং বান্দরবানের ডন বস্কো হাই স্কুল।

চট্টগ্রাম কাথলিক ডায়োসিসের বিশপ মজেস কস্তা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কথাসাহিত্যিক প্রফেসর ড.হরিশংকর জলদাস।

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তুমি পড়ো, পড়লে তুমি জানতে পারবে। যারা এ পর্যন্ত এসেছে তারা পড়েছে, জেনেছে। আমাদের সময়ে পড়তাম কাঁচা ঘরে, পড়া হতো পাকা। এখন পড়া হয় পাকা ঘরে, কিন্তু পড়া হয় কাঁচা। বুকে বই জড়িয়ে স্কুলে যেতাম আমরা। এখন লম্বা ফিতার স্কুল ব্যাগে করে বই চলে যাচ্ছে হাঁটুর নীচে। ছাত্র চলে, সাথে সাথে কাঁধের বই আর সামগ্রী লাথি খেতে খেতে স্কুলের দিকে এগিয়ে যায়। পায়ের নীচে বই এখন শুধু বাহ্যিকভাবে নয়, বই এর মর্যাদাও সত্যিই এভাবে পায়ের নীচেই চলে গিয়েছে।

তিনি বলেন, বই যেন এখন পশ্চাৎপদ দেশের সামগ্রী। পড়া হয় দুই প্রকার। একটি হলো পাশ করার জন্য, অপরটি হলো নিজেকে আলোকিত করার জন্য। সত্যিইতো আলোকিত করার মত আমাদের কাছে কি আছে?

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন, খাগড়াছড়ির সচিব  মোহাম্মদ মাহ‍াবুবুর রহমান বলেন, কিছু একটা হতে হবে জীবনে। জীবনে কিছু একটা হও, কিন্তু জীবনের আদি পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করোনা। অনেক বড় কেউ হতে না পারলেও যারা তোমাদের সারা জীবন শিক্ষা দিয়েছেন, তারা অনেক মহান মানুষ। তাদের মত হও, তাহলেও জীবনের সার্থকতা।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতি চট্টগ্রাম কাথলিক ডায়োসিসের বিশপ মজেস কস্তা বলেন, তোমাদের উদ্দেশ্যে তিনটি কথা বলতে চাই। জীবনে কৃতজ্ঞ থাকবে। সবাইকে ধন্যবাদ বলতে শিখবে। আমরা কেউ স্বতঃসিদ্ধ নই। আমরা সবাই জীবনে ভুল করি। তাই বিনম্রভাবে আমাদের বলতে শিখতে হবে- আমি দুঃখিত। কারও জীবনের উপরে আমাদের কোন অধিকার নেই। কাউকে চাকর বা অধীনস্থ মনে করতে পারিনা। মানুষ হিসেবে আমরা সবাই সমান। তাই কারো কাছ থেকে কিছু যদি আমরা চাই আমাদের বলতে শিখতে হবে দয়া করে আমাদের জন্য কাজটি করেন।  

বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের গান, নাচ, জাদুশিল্পী রাজিব বসাকের জাদুসহ বিভিন্ন পরিবেশনায় পুরো অনুষ্ঠানটি উপভোগ্য হয়ে উঠে। গান, নাচ, কথামালায় পুরো স্কুল প্রাঙ্গন পরিণত হয় শিক্ষক, শিক্ষিকা আর শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায়।

উলেখ্য চট্টগ্রাম কাথলিক ডায়োসিসের পরিচালনাধীন ও প্রতিষ্ঠিত মোট ৯টি স্কুল থেকে ২০১৪ সালে ১ হাজার ২৫৩ জন ছাত্র-ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়েছে। এর মধ্যে ৪০৫ জন পেয়েছে জিপিএ ৫। নয়টি স্কুলে পাশের হার গড়ে ৯৮ দশমিক ২৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।