ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিলবোর্ডে ঢাকা পড়েছে বন্দরনগরীর সৌন্দর্য

আবদুল্লাহ আল মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৪
বিলবোর্ডে ঢাকা পড়েছে বন্দরনগরীর সৌন্দর্য ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: নগরীর ব্যস্ততম মোড় জিইসি। সড়কের একপাশে বহুতল মার্কেট, অন্য পাশে সবুজের হাতছানি।

দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায় ব্যস্ত পথিকের। কিন্তু মাঝখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ ফুট দীর্ঘ বিলবোর্ড।
বিলবোর্ডটির ফাঁক গলে উঁকি দিচ্ছে সবুজ গাছপালা। এই নীতিমালা বহির্ভূত বিলবোর্ডটি স্থাপন করেছে অ্যাডওয়ে পাবলিসিটি নামের একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা। বিলবোর্ডটির অবৈধ অংশ অপসারণে চিঠি দিলেও পাত্তা দিচ্ছে না বিজ্ঞাপনী সংস্থাটি।

শুধু এ বিলবোর্ডটি নয়। এধরণের কয়েক’শ বিলবোর্ডের নিচে ঢাকা পড়েছে নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

একদিকে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আবারও একের পর এক অবৈধভাবে বিলবোর্ড স্থাপন করে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের কাছে যেন অসহায় নগর কর্তৃপক্ষ।

নগরীর বিলবোর্ড ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তাদের বিরুদ্ধে আইনী কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারায় অবৈধ বিলবোর্ড স্থাপন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে জানান কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা।

কর্পোরেশনের বিলবোর্ড স্থাপন নীতিমালা অনুযায়ী, ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ৪০ ফুটের বেশি বিলবোর্ড কোন অবস্থায় স্থাপন করা যাবে না। এছাড়া একই স্থানে পাশাপাশি সাইনবোর্ড স্থাপনার ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচ ফুট জায়গা উন্মুক্ত রাখতে হবে। কিন্তু এসব নীতিমালার তোয়াক্কা করেন না বিলবোর্ড ব্যবসায়ী ও বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো।



কর্পোরেশন সূত্র জানায়, নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ৪০ ফুট বিলবোর্ড স্থাপনের অনুমতি নেয় ১ নাম্বার সিডিএ এভিনিউ এলাকার কমার্স ভিউ কমপ্লেক্সের (দ্বিতীয় তলা) অ্যাডওয়ে পাবলিসিটি নামের একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা। কিন্তু সংস্থাটি বিলবোর্ড স্থাপন করেছে ১২০ প্রস্থ ও ২০ দৈর্ঘ্য ফুট। বিশাল এ বিলবোর্ডটির নিচে ঢাকা পড়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। গত ১০ মার্চ বিলবোর্ডটির অবৈধ অংশ অপসারণের চিঠি দেয় কর্পোরেশন। প্রায় আড়াই মাস পার হলেও অবৈধ অংশ অপসারণ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।

অ্যাডওয়ে পাবলিসিটির কর্মকর্তা জুবের আলম বাংলানিউজকে বলেন,‘এ ধরণের কোন চিঠি আমরা পাইনি। সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন নিয়ে নীতিমালা অনুযায়ী বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। ’

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর নাসিরাবাদ সানমার ওশান সিটির সামনে একটি, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের সামনে একটি, রেয়াজউদ্দিন বাজারের মুখে একটি, নিউমার্কেট এলাকায় তিনটি, গোলপাহাড় মোড়ে একটি, চট্টগ্রাম কলেজের সামনে একটি, চকবাজার প্যারেড মাঠের পাশে একটি এবং ওয়াসা মোড়ে একটি, শেখ মুজিব রোডের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগীয় কার্যালয়ের সামনে একটি, জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সামনে প্রায় ছয়টি অবৈধভাবে ইউনিপোল বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।



এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত ২১৫টি বিজ্ঞাপনী সংস্থাসহ বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের জায়গায় ঝুলছে কয়েক’শ অবৈধ বিলবোর্ড। এগুলোর নিছে ঢাকা পড়েছে নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ঘূর্ণিঝড় কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এগুলো দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারী অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে সিটি কর্পোরেশন। ২০১২ সালের তালিকা অনুযায়ী নগরীতে অবৈধ বিলবোর্ডের সংখ্যা ২০৮টি। ওই বছর সিটি কর্পোরেশন বিল বোর্ড উচ্ছেদ করে মাত্র ২৭টি। ২০১৩ সালে বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয় ৩৫টি। ২০১৪ সালে ৪ মাস পার হলেও মাত্র দুটি বিলবোর্ড উচ্ছেদ করেছে সিটি কর্পোরেশন। দু’বছরে মোট ৬২টি অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করেছে তারা।

অন্যদিকে দু’বছরে বিলবোর্ড ব্যবসায়ীরা নগরীর বিভিন্ন সড়কে অবৈধভাবে বিলবোর্ড স্থাপন করেছে ১৫৯টি । বর্তমানে নগরীতে অবৈধ বিলবোর্ডের সংখ্যা ৩০৫টি।

করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরীতে সিটি করপোরেশন অনুমোদিত বিলবোর্ডের সংখ্যা ছয় হাজার ১৫৯টি। এসব বিলবোর্ড ভাড়া দিয়ে বছরে আয় হয় মাত্র সোয়া দুই কোটি টাকা।



সিটি কর্পোরেশনের বিজ্ঞাপন ও প্রমোদ কর বিভাগের প্রধান পরিদর্শক আবুল মনসুর বাংলানিউজকে বলেন,‘অঅনুমোদিত অংশ অপসারণের জন্য বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা যদি অপসারণ না করে তাহলে আমরা অপসারণ করবো। ’

অবৈধ বিলবোর্ড স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘যারা অবৈধভাবে বিলবোর্ড স্থাপন করে তাদের বিরুদ্ধে কর্পোরেশন কোনো আইনী ব্যবস্থা নিতে পারে না। ‌আমরা অবৈধ বিলবোর্ডগুলো চিহ্নিত করে ম্যাজিস্ট্রেটকে দিই। তিনি অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করেন। ’

সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া শিরিন বাংলানিউজকে বলেন,‘একই সঙ্গে আরো উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানোর কারণে বিলবোর্ড উচ্ছেদ কিছুদিন বন্ধ ছিলো। তবে কয়েকদিনের মধ্যে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। অবৈধ বিলবোর্ড স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় একদিকে আমরা উচ্ছেদ করলেও অন্যদিকে তারা স্থাপন করে যাচ্ছে। ’

তিনি বলেন,‘সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যে কারও মালিকানাধীন জায়গায় বিলবোর্ড স্থাপন করতে হলে করপোরেশন থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানই এ ধরনের অনুমতি নেয়নি। তাদের জায়গায় গিয়ে উচ্ছেদের এখতিয়ারও আমাদের নেই। অবৈধ বিলবোর্ড সরিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।