ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জিএমডিএসএস প্রকল্প

টাকার বিনিময়ে প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন!

মো.মহিউদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৫ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৪
টাকার বিনিময়ে প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন!

চট্টগ্রাম: কোটি টাকার বিনিময়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নৌ-মন্ত্রণালয়ের অধীন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের পরিচালক পদে পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে।

ফলে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে বিদেশি অর্থায়নে গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস সেফটি সিস্টেম (জিএমডিএসএস) প্রকল্পটি ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।



নৌ পরিবহন মন্ত্রণায়ল গত ২৩ ডিসেম্বর সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন সরকারকে এ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

এ প্রকল্পে জনবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু আগ মুহুর্তে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় গত রোববার তড়িঘড়ি করে চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন সরকারকে সরিয়ে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের শিপ সার্ভেয়ার নৌ প্রকৌশলী নাজমুল হককে পদায়ন করা হয়।
যিনি এ প্রকল্পের বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন।

অন্যদিকে নাজমুল হক নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। এমনকি জাহাজে না গিয়ে সার্ভে রিপোর্ট দেওয়ার মতো অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের একাধিক তদন্ত কমিটি তার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন।  

এ ধরণের একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে বিদেশি অর্থায়নে একটি প্রকল্পের পরিচালক করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এ ধরণের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হবে। কারণ তার দুর্নীতির বিষয়টি আইএমও পর্যন্ত পৌঁছেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোরিয়ান সরকারের অর্থায়নে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ৩৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধিন প্রকল্পের টাকা লুটে নিতে উঠেপড়ে লেগেছেন অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার নৌ সচিব ও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদন ছাড়াই প্রকল্পের নতুন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। কোটি টাকার বিনিময়ে প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মো. জাকিউর রহমান ভূঁইয়া তখন দেশে ছিলেন না জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন করা হয়েছে। এরআগে অন্য একজন কর্মকর্তা এ প্রকল্পের কাজ করছিল। মূলত তিনিই এ প্রকল্পের পরিচালকের যোগ্য।  

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস সেফটি সিস্টেম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি পতাকাবাহী সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজ বিশ্বের যে কোন প্রান্তে বিপদে পড়লে তা এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাৎণিকভাবে সংকেত ও বার্তা পাওয়া যাবে। বর্তমানে বাংলাদেশ অন্য কোন বন্ধু দেশের মাধ্যমে এইসব সংকেত সংগ্রহ করছে।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই প্রকল্পের একটি অংশ হচ্ছে ইনট্রিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (আইএমএনএস)। প্রকল্পের এই অংশ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশি সমুদ্র সীমায় কোন জাহাজ দুর্ঘটনা হলে তা তাৎনিকভাবে সনাক্ত করা যাবে। ২০০৭ সালে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। এতে কোরিয়ান সরকার প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিতে  চুক্তিবদ্ধ হয়। চলতি বছরের ১১ মার্চ একনেকে তা পাশ হয়।

জানা গেছে, জিএমডিএসএস প্রকল্পটি জাহাজের নেভিগেশন এবং নেভিগেশনাল এইড বিষয়ক প্রকল্প হওয়ায় এর ডিপিপিতে (ডেভেলপম্যান প্রজেক্ট প্রপোজাল) জনবল নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির সভায় একজন চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ারকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগের অনুমোদন দেয়।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সরকার দেশের সাতটি উপকূলীয় এলাকায় যোগাযোগ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ সময়:২১৩৫ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।