চট্টগ্রাম: ‘যে পয়েন্টে কাভার্ড ভ্যান লোড হবে সেই পয়েন্ট থেকে বিশেষ সিল ছাড়া কোন কাভার্ড ভ্যান পণ্য নিয়ে বের হতে পারবে না। ’ দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর থেকে পণ্য চুরি রোধে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়।
ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তখনই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর ১০ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ফলে দিন দিন চট্টগ্রাম বন্দরে চুরির ঘটনা বেড়েই চলেছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে চুরি যাওয়া পণ্যের ভাগ চট্টগ্রাম বন্দরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও পান। ফলে চুরি বন্ধে কঠোর কোন পদক্ষেপ নেন না তারা।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বন্দর এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
বন্দরের অভ্যন্তরে চুরির ঘটনা রোধ করা না গেলে চট্টগ্রাম বন্দর ইমেজ সংকটে পড়বে বলেও মনে করছেন তারা।
এদিকে সম্প্রতি চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি।
গত ১২ মে দুপুর একটার পর সাতঘণ্টার মধ্যে বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় একটি কনটেইনার থেকে প্রায় এক কোটি টাকার জিন্সের কাপড় চুরির ঘটনা ঘটে।
ঢাকার ওনার্স গ্রুপ চীন থেকে এই কাপড় আমদানি করে। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এই গ্র“পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পরে ১৪ মে নগরীর টেরি বাজার থেকে কাপড়গুলো উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ধরণের চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার।
সংগঠনের সহ-সভাপতি মাহবুব চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিটি মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান বরাবর দেওয়া হয়।
মাহবুব চৌধুরী ক্ষব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরের কর্মকর্তারা চুরির ভাগ পান বলেই চুরি রোধে কোন ব্যবস্থা নেন না। এমনকি মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সিদ্ধান্ত পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।
তাদের স্বার্থ না থাকলে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে না কেন? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
মেট্রোপলিটন চেম্বারের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়,‘ দীর্ঘদিন ধরে বন্দর থেকে মালামাল চুরি হচ্ছে। যা সম্প্রতি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্দরে জাহাজ ভেড়ার পর থেকে পণ্য ডেলিভারি পর্যন্ত এফসিএল কন্টেইনার বা শেড থেকে বিভিন্নভাবে পণ্য চুরি হচ্ছে। ‘
বন্দরের অভ্যন্তরে চুরি রোধে ২০০৪ সালের মন্ত্রাণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে পয়েন্টে কাভার্ড ভ্যান লোড হবে সেই পয়েন্ট থেকে বিশেষ সীল করা ছাড়া কাভার্ড ভ্যান মালামাল নিয়ে বের না হওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলেই এ ধরণের চুরি বন্ধ হবে।
বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে বন্দরের ভারপ্রাপ্ত সচিব মহিবুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ না থাকলে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, যে কোন অভিযোগের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, চুরির ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে না পারলে চুরি বন্ধ হবে না।
বন্দরের ব্যবস্থাপনা জোরদার করে জবাবদিহিতা বাড়ানো জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়:২১৫০ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৪