চট্টগ্রাম: আসন্ন বর্ষায় সম্ভাব্য পাহাড় ধ্বস ও প্রাণহাণি রোধে ১৫ সদস্যের পুর্নবাসন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করবে।
বৃহষ্পতিবার সকালে বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির দ্বাদশ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় জানানো হয়, সদস্যদের সুপারিশের ভিত্তিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (রাজস্ব) এস এম আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটি ঝুঁকিপূর্ণ পাহড়গুলো চিহ্নিত করে পুর্নবাসনের জন্য বসবাসকারীদের তালিকা তৈরী করবে।
এছাড়া কমিটি অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে আগাম উচ্ছেদ কার্যক্রম, দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যাচাই ও প্রস্তুত, দুর্যোগ প্রবণ এলাকা চিহ্নিতকরণ এবং পূণর্বাসনের স্থান নির্ধারণ করবে।
বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালক মো. জাফর আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস এম আবদুল কাদেরসহ সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, রেলওয়ে, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘জুন মাসের ৬-৭ তারিখের দিকে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির পরবর্তী সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় পূণর্বাসন কমিটি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় চিহ্নিত করে পুর্নবাসনের প্রক্রিয়াসহ প্রতিবেদন জমা দিবেন। এর আলোকে সভায় পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করা হবে। ’
তিনি বলেন,‘সকলের সহযোগিতা পেলে প্রাণহানি শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনা যাবে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের বসতিগুলো সরাতে আমরা শীঘ্রই মাইকিং, লিফলেট, মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করবো। ’
এসময় সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য লোক দেখানো পদক্ষেপ ছেড়ে জনমুখী কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন বিভাগীয় কমিশনার। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বসতিগুলোকে সরানো হচ্ছে। পরবর্তীতে এসব পাহাড় দখল করে যারা অবৈধ বসতি গড়ে তুলছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করবো। ’
সভায় জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন,‘দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আমি বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো পরিদর্শন করেছি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্বের নেতৃত্বে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাও অপসারণ চলছে। প্রাণহানি রোধে যা করতে হয় করবো। ’
জাফর আলম বলেন, ‘ স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারদের কারণে পাহাড়গুলোতে অবৈধ বসতি স্থাপিত হচ্ছে। অবৈধ বসতি স্থাপন রোধ করা না গেলে কেবল সাময়িক পূণর্বাসনের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ’
তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সারা বিশ্বে আমাদের সুনাম রয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকা কিংবা জাপানে যে পরিমাণ প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয় আমাদের তার চেয়েও কম। প্রতি বছর আমাদের দুর্যোগকালিন মৃত্যুর হার কমছে। সকলের আন্তরিকতা প্রকাশ পেলে একে শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব। ’
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. ইয়াহিয়া বলেন, ‘ ৪১টি ওয়ার্ডে আমাদের ৭ হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। তাদেরকে এ বিষয়ে তিন দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ছোট ও মাঝারি আকারের দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সরঞ্জাম রয়েছে। বড় দুর্যোগ হলে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। ’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মাহবুব উল আলম বলেন,‘বসতিগুলোকে পাহাড়ের কিছুটা দূরে পূণর্বাসন করা দরকার। না হয়, প্রতিবছরই দেখা যায় তারা আবার পাহাড়ে ফিরে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। ’
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে প্রবল বর্ষণে ১২৭ জনের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হয়। কমিটি পাহাড় ধ্বস ও সম্ভাব্য প্রাণহানি রোধে প্রতিবছর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৪