চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে পরিবহন সংকট। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম শাটল ট্রেনে পর্যাপ্ত বগি না থাকা, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বাস সার্ভিস না থাকায় এ সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে পরিহণ সংকট নিরসন হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, দু’টি শাটল ট্রেনের মাধ্যমেই মূলত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে যাতায়াত করে। শাটল ট্রেন দু’টি ক্যাম্পাস ও শহরে প্রতিদিন মোট ৭ বার যাওয়া আসা করে।
প্রতিটি শাটল ট্রেনে নয়টি করে বগি রয়েছে। প্রত্যেকটি বগিতে মাত্র ৮০জন করে শিক্ষার্থী বসতে পারে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য খুবই অপ্রতুল।
এছাড়া, প্রতিটি বগিতে প্রায় ৪৮টি আসনই ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত বগিভিত্তিক সংগঠনগুলোর দখলে থাকে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই সব আসনে বসার সুযোগ পায় না। বসলেই বাধে সমস্যা।
আসন সংকটের কারণে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে, দরজায় এবং ইঞ্জিনের সামনে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করে। এধরণের পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাও ঘটেছে। তবুও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
রাতে সাড়ে আটটার পর চট্টগ্রাম নগরী থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার আর কোন ট্রেন নেই। এ সময়টাতে একসময় শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বাস নগরী থেকে নির্ধারিত থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। ফলে, রাতে শহর থেকে ক্যাম্পাসে যেতে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য কোন বাস বরাদ্দ নেই। শিক্ষার্থীদের একটা অংশ তাই বিশ্ববিদ্যালয় রুটে চলচলকারি বেসরকারি পরিবহন সার্ভিস তরী’র মাধ্যমে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু, ২০১৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর থেকে ‘তরী’ ক্যাম্পাস স্টেশন পর্যন্ত যায় না, প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের এক নম্বর গেইট এলাকায় নামিয়ে দেয়। ওই এলাকা থেকে অটোরিক্সায় করে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে যেতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নগরী থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন। বাকিদেরও টিউশনিসহ নান কারণে প্রতিদিন নগরীতে যাতায়াত করতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অনেকেই শহরে গিয়ে টিউশনী করি। যদি কোনভাবে শাটল ট্রেনের সিডিউল মিস করি তবে হলে ফিরে আসা খুব কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। রাত আটটার পর ট্রেন নেই, আবার তরীও ক্যাম্পাসে না আসায় দুর্ভোগ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাতে দু’একটি বাসের ব্যবস্থা করলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কিছুটা কমতো।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘পরিবহণ সংকট নিরসনের জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। চাইলে তো আর সঙ্গে সঙ্গে সমস্যার সমাধান করা যায় না, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৪