ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা সনদ

ফেঁসে যাচ্ছেন বন্দর সিবিএ সভাপতি মমতাজ

মো.মহিউদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৪
ফেঁসে যাচ্ছেন বন্দর সিবিএ সভাপতি মমতাজ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে দুই বছর চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন আলোচিত-সমালোচিত শ্রমিক নেতা চট্টগ্রাম বন্দর সিবিএ’র সভাপতি মমতাজ উদ্দিন। তার ‘বিতর্কিত’ মুক্তিযোদ্ধা সনদটি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।



এরই মধ্যে বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট পদে মমতাজের চাকরি কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন উচ্চ  আদালত। এতে আদেশ পৌঁছানোর চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবার দিতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে আদালত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে মমতাজ উদ্দিনের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাখ্যাও চেয়েছেন।

বিচারপতি কাজি রেজাউল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসাইন গঠিত হাইকোর্টের একটি যৌথ বেঞ্চ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এ রুল জারি করেন। ২৮ এপ্রিল রুলের নোটিশ রিট আবেদনকারীর কাছে পৌঁছেছে।

তবে এখনও এ সংক্রান্ত কোন নোটিশ পাননি বলে জানিয়েছেন বন্দর সিবিএ’র সভাপতি মমতাজ উদ্দিন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সবকিছু যাচাইবাছাই করেই বন্দর কর্তৃপক্ষ আমার চাকুরির মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। আমার পেছনে কিছু লোক লেগে আছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে।  

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মমতাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে অতিরিক্ত দুই বছর চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির অভিযোগ এনে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার কমান্ডার মো.সাহাবউদ্দিন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা মমতাজ উদ্দিনের। অবসরে গেলে তিনি স্বভাবতই সিবিএ'র সভাপতির পদ হারাতেন। এই সুযোগ বহাল রাখতে তিনি আকস্মিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ব্যবহার শুরু করেন।

মমতাজ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় দুই বছরের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেন। এজন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের দেওয়া একটি মুক্তিযোদ্ধা সনদ তিনি বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করেন।

১২ জানুয়ারি ২০০১ সালের তারিখে নেওয়া তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এ সনদপত্রে লেখা আছে, মোঃ মমতাজ উদ্দিন, পিতা মরহুম আবদুর রশিদ, গ্রাম কেশুয়া, থানা চন্দনাইশ, জেলা চট্টগ্রাম, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিস্বাক্ষরিত এই সনদপত্রের ক্রমিক নম্বর ৫৪৪৭৭।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্দরে এ পর্যন্ত নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রত্যায়িত ৮৪জন মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র নিয়েছেন। সেখানে মমতাজ উদ্দিন নামে কোন মুক্তিযোদ্ধা নেই।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর সরকার গেজেট করে চট্টগ্রাম বন্দরের  সকল ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে। পরে সরকারি নির্দেশে ২০১০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ সিবিএ গঠন করা হয়। ২৫ সদস্য  বিশিষ্ট এ পরিষদের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২ বছর। কিন্তু ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

এর আগে গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এবং বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদকারীদের চাকরিচ্যুতির হুমকির অভিযোগে লিগ্যাল নোটিশ পেয়েছিল বন্দর কর্মচারী পরিষদ(সিবিএ, রেজিস্ট্রেশন নম্বর-২৫৩৯)।   

এছাড়া এক-এগারোর সময় অনিয়ম দুর্নীতির জন্য কারাগারে গিয়েছিলেন এ শ্রমিক নেতা। মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেখিয়ে চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির পর থেকেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ উঠে মমতাজের বিরুদ্ধে। বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও বন্দর কর্তৃপক্ষ মমতাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা। অভিযোগ রয়েছে, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জাল সনদে চাকরির সুযোগ দিতে তিনি কর্মকর্তাদের বাধ্য করেছেন।

তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপর দলীয় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন মমতাজ উদ্দিন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০,২০১৪ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।