মিরসরাই: মাত্র দু’বছর আগেও নিজের বলতে কিছুই ছিলো না রুনা বেগম ও লাতু মিয়া দম্পতির। মানুষকে ‘বড়লোক’ বানানোর লোভ দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ এই দম্পতি।
পাহাড়ে কাঠ কেটে, দৈনিক মজুরি খেটে পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন চলতো লাতু মিয়ার। কখনও জ্বিনের বাদশা, কখনও জ্বিনের মেয়ে, কখনো গুপ্ত ধনের মালিক পরিচয় দেওয়ার পর এখন তাদের বাড়িতে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন দালান।
রোববার দুপুরে প্রতারণা করতে গেলে রুনা বেগম (৪০) এবং পারভীন আক্তার (২৬) নামে তার এক সহযোগিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২টি দেব মূর্তি, ৮টি তামার পাতিল ও দুইটি মোবাইল সেট জব্দ করে পুলিশ।
মিরসরাই উপজেলার আমবাড়িয়া এলাকায় এ ঘটে।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ ভূইয়া বাংলানিউজকে বলেন, নিজেদের জ্বিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে রুনা বেগম ও তার সহযোগী পারভীন মানুষের সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারনা করছে বলে স্থানীয়দের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সকালে আমাবাড়িয়া একালায় এক মহিলাকে স্বর্ণের দেব মুর্তি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করতে গেলে এলাকাবাসী তাদের আটক করে থানায় সোপর্দ করে। এ বিষয়ে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ জানায়, আটককৃত রুনা বেগমের বাড়ি উপজেলার মিঠাছড়া এলাকার গড়িয়াইশ গ্রামে। এছাড়া, পারভীন আক্তার ফেনীর দমদমা এলাকার কাটাছড়া গ্রামের রুবেল হোসেন ওরফে নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী।
স্থানীয়রা জানায়, আটকৃত রুনা বেগম নিজেকে জ্বিনের বাদশা দাবি করে অলৌকিক ক্ষমতা বলে রোগ মুক্তি, সমস্যা সমাধান, গুপ্ত সম্পদ (স্বর্ণের পাতিল, কলসিসহ মূল্যবান সম্পদ) প্রাপ্তির মাধ্যমে বড়লোক হওয়ার লোভ দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির সাথে প্রতারনার মাধ্যমে লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
আমবাড়িয়া এলাকার ভুক্তভোগীরা জানান, রুনা রোগ মুক্তি ও গুপ্তধন প্রাপ্তির কথা বলে ওই গ্রামের আইতুন নেচার ব্যাংক ঋণের টাকা ও তার দুই মেয়ের কাছ থেকে মোট ৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে, তিনি (আইতুন নেছ) প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বুঝতে পেরে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে তার সন্তানদের অমঙ্গল করা হবে ও তাদেরকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয় কথিত ওই ‘জিনের বাদশা’।
আইতুন নেছা জানান, রুনা বেগমকে দেওয়া টাকার ঋন মেটাতে তিনি শেষ সম্বল স্বামীর ভিটে মাটি বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
একই এলাকার আব্দুল মান্নান জানান, গুপ্তধন প্রাপ্তির লোভ দেখিয়ে তার স্ত্রীর কাছ থেকে নগদ নব্বই হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় এ চক্রটি। পরে ওই টাকা ফেরত চাইলে স্বর্ণ বলে তামার পাতিল, কলসী ধরিয়ে দেয় রুনা।
একইভাবে প্রতারণার মাধ্যমে হাজী জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা, একই গ্রামের এক প্রবাসীর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক মহিলার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় কথিত ওই জীনের বাদশা।
মিরসরাই থানার সেকেন্ড এসআই আক্কাস আলী বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কথিত জিনের বাদশা রুনা বেগম প্রতারনার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার দায় স্বীকার করেছে। তার সাথে একটি প্রতারক চক্র কাজ করছে বলেও জানিয়েছে। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের পর তদন্তের মাধ্যমে বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৪