ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সাঈদীর রায়

গুজব-উত্তেজনা ছড়ানোর মিশন নিয়ে মাঠে জামায়াত-শিবির

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৪
গুজব-উত্তেজনা ছড়ানোর মিশন নিয়ে মাঠে জামায়াত-শিবির ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম(ফাইল ফটো)

চট্টগ্রাম: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার আগেভাগেই বিভিন্ন আবেগধর্মী গুজব ছড়িয়ে মানুষকে উত্তেজিত করার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত-শিবির। শিক্ষা শিবির, কোরআন ক্লাশ, উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন কৌশলী কর্মসূচীর মাধ্যমে জামায়াত-শিবির ছড়াচ্ছে নানা ধরনের বিভ্রান্তি।



এক্ষেত্রে নগরের চেয়েও গ্রামে বিশেষ করে জামায়াত অধ্যুষিত সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, ফটিকছড়িতে তারা বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জামায়াত-শিবিরের এ কৌশলের তথ্য পেয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারাও।
তবে ঝটিকা কর্মসূচী হওয়ায় এসব কর্মকান্ড মোকাবেলায় পুলিশ কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেনা।

জামায়াত-শিবির দাবি করেছে, শিক্ষা শিবির-কোরআন বৈঠকে তারা ইসলামের আলোকে নৈতিক বিষয়গুলো প্রচার করছে। এখানে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় কিংবা রাজনৈতিক কোন বিষয় নিয়ে কোন আলোচনা হচ্ছেনা।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, গুজব ছড়িয়ে তান্ডব সৃষ্টি জামায়াত-শিবিরের পুরনো কৌশল। সাঈদীর রায় নিয়ে কিছু কিছু এলাকায় তার গুজব ছড়াচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। তবে তা ব্যাপক আকারে নয়। অধিকাংশ এলাকাতেই তারা এ ধরনের কোন কর্মসূচী পালন করতে পারছেনা।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, স্কুল-কলেজে শিবিরের তেমন কোন কর্মকান্ড নেই। বিভিন্ন মাদ্রাসায় তারা গোপনে বৈঠক করছেন বলে বিচ্ছিন্ন কিছু খবর পেয়েছি। আর জামায়াত থানায় কিংবা ওয়ার্ডে যেসব মিছিল-সমাবেশ করছে তা অনেকটাই ঝটিকা আকারে।  

নগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, সাঈদীকে ফাঁসি দেয়া হলে এমনিতেই মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কবর রচনা হবে। আর চট্টগ্রামে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের কারণে সাঈদী সাহেবের জনপ্রিয়তা এমনিতেই বেশি। তাকে ফাঁসি দিলে মানুষ ঘরে বসে থাকবেনা।

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। এ রায়কে কেন্দ্র করে সারাদেশে ব্যাপকভাবে সহিংস তান্ডব চালায় জামায়াত-শিবির। এসব তান্ডবে জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত সশস্ত্র ক্যাডারদের পাশাপাশি হাজার হাজার সাধারণ মানুষও অংশ নেয় বলে অভিযোগ আছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাঈদীর রায় ঘোষণার পর চট্টগ্রামে তারা মসজিদের মাইক ব্যবহার করে জামায়াত-শিবির বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে মানুষকে উত্তেজিত করে তুলে। তারা কখনও সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে, আবার কখনও শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে-তাকে ধরতে হবে, কখনও এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ আলেম-ওলামাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে এ ধরনের বিভিন্ন বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়। এতে সাধারণ মানুষ উত্তেজিত ও অতি উৎসাহী হয়ে নাশকতায় যোগ দেয়।

এরপর কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের পর জামায়াত-শিবিরের ফেসবুক পেজ থেকে হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফীকে গ্রেপ্তারের গুজব সৃষ্টি করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবার সাঈদীর রায়কে ঘিরে আগেভাগেই একই মিশনে মাঠে নেমে গেছে জামায়াত-শিবির। বিভিন্ন কর্মসূচীতে তারা বলছেন, ভারতের নির্দেশে সাঈদীকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে, যেভাবে হোক সাঈদীকে ফাঁসি থেকে বাঁচাতে হবে, সাঈদীকে আটকে রাখা যাবেনা, তিনি হঠাৎ জনগণের মাঝে ফিরে আসবেন। এছাড়া সাঈদীর প্রয়াত পুত্র, বৃদ্ধা মা, অসুস্থ স্ত্রী নিয়েও বিভিন্ন কথাবার্তা বলে মানুষেকে ‍উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে জামায়াত-শিবির।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে সাঈদীভক্ত ধর্মভীরু কিছু মানুষ আছে। এলাকাগুলোতে জামায়াত-শিবিরের টিম হঠাৎ হাজির হয়ে মসজিদে কিংবা কারও উঠানে ঝটিকা বৈঠক করছে। সেখানে উত্তেজনাকর কথাবার্তা বলে আবার সরে যাচ্ছে। গত একমাস ধরেই তারা এ কৌশলে কার্যক্রম চালাচ্ছে।

নগর পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত সরকারী অনুদানভুক্ত মাদ্রাসার পাশাপাশি কওমী মাদ্রাসাগুলোকে পুলিশ নজরে রেখেছে। এরপরও শিবির বিভিন্ন সময়ে কোরআন ক্লাশের নামে এসব মাদ্রাসায় ঢুকে পড়ছে। নগরীর চন্দনপুরায় এবং বাকলিয়ায় এ ধরনের তথ্য পেয়ে পুলিশ দু’বার দু’টি মাদ্রাসায় তল্লাশি চালিয়েছে।

নগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ আমাদের কোন কর্মসূচী পালন করতে দিচ্ছেনা। এমনকি আমাদের দলীয় কার্যালয়ে পর্যন্ত যেতে দিচ্ছেনা। এরপরও আমরা বিভিন্ন ছোটখাট কর্মসূচীর মাধ্যমে আমাদের যে বার্তা তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।

দক্ষিণ জেলা ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক আজাদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, পাড়া-মহল্লায় ‘কোরআনের ক্লাশ’ কর্মসূচী পালন করছি। সেখানে রাজনৈতিক কোন বক্তব্য দিচ্ছিনা। সাঈদীর রায়ের পর আমাদের কি প্রতিক্রিয়া হবে এগুলো কেন্দ্র থেকে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। এগুলো কখনও পূর্বনির্ধারিত থাকেনা। তবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত না থাকলেও সাধারণ মানুষের কাছে আমরা সত্যিটা তুলে ধরছি।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, জেলার সব থানার ওসিদের ডেকে জামায়াত-শিবির যাতে গুজব ছড়ানোর জন্য মসজিদকে ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দিয়েছি। এক্ষেত্রে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতা চেয়েছি। তাদের মসজিদের তালিকা করে মোবাইল নম্বরসহ ইমামের তালিকা করতে বলেছি।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শিবিরের যেসব পুরনো মেস আছে, নতুনভাবে যেসব মেস তারা তৈরি করেছে সেগুলোতে রেইড দিচ্ছি। তাদের সহিংসতা সৃষ্টির ধরণ নিয়ে আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে মোকাবেলার কৌশল নির্ধারণ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।