চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামকে অপসারণের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন শ্রমিক লীগের নেতারা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাকে অপসারণ করা না হলে আগামী ১ মে নগরীর লালদিঘী মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বৃহত্তর চট্টগ্রামে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার সকালে সংগঠনের উদ্যোগে সিডিএ ঘেরাও কর্মসূচিতে বক্তারা এ আল্টিমেটাম দেন। সকাল সাড়ে দশটা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলে।
সিডিএ চেয়াম্যানের পদ থেকে আবদুচ ছালামের অপসারণ, সিডিএ কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানের চাকুরিচ্যুতি এবং ১০ নেতার বদলী আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে শ্রমিক লীগ এ কর্মসূচির ডাক দেয়।
ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে শ্রমিক লীগ নেতারা বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের নামে আবদুচ ছালাম হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। তার অযোগ্যতার কারণে লিংক রোড প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা যায়নি। নিজের অপকর্মের জন্য লজ্জিত না হয়ে এখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তিনি তৎপর হয়ে উঠেছেন। এরই অংশ হিসেবে প্লট বরাদ্দ নীতিমালা লঙ্ঘন করে মন্ত্রী-এমপি ও তার আত্মীয়স্বজনকে ৬০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ছালামকে ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী দলের ষড়যন্ত্রকারী উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, তিনি কখনোই আওয়ামী লীগ করেননি। আওয়ামী লীগের নামে সিডিএকে জামায়াত-শিবির কর্মীদের ঘাঁটিতে পরিণত করেছেন। চান্দগাঁও এলাকায় ৩ দশমিক ৩০কাঠা খেলার মাঠের জায়গা ১ টাকা টোকেন মূল্যে জামায়াত-শিবির নেতাদের সমিতির নামে বরাদ্দ দিয়েছেন তিনি।
বক্তারা বলেন, সিডিএ চেয়ারম্যান কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানকে শ্রম আইনের ১৮৭ ধারা লংঘন করে করা হয়েছে। বদলি আদেশের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় শ্রম আইনের ২২৮ ধারা অমান্য করে তাকে গত ১৩ মার্চ হাবিবুর রহমানকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। জামায়াত-শিবিরকে সিডিএতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে এ ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
শ্রমিক নেতাদের দাবি, দুর্নীতির মাধ্যমে অযোগ্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ায় বহদ্দারহাটে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যুর দায় ছালামকে নিতে হবে।
ঘেরা কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবদুল আহাদ, নগর শ্রমিক লীগের সভাপতি বখতেয়ার উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহাবুবুল হক চৌধুরী এটলী, সিডিএ কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, ওয়াসা কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন চৌধুরী, আমিন জুট মিলস্ ওয়াকার্স ইউনিয়নের সভাপতি মহব্বত আলী, চসিক শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম, নগর শ্রমিক লীগ নেতা আবু হোসেন আবু, ঘাট গুদাম শ্রমিক নেতা আব্দুল খালেক, আগ্রাবাদ হকার্স সমিতি সাধারণ সম্পাদক রশির আহমদ, বন্দর শ্রমিক লীগ নেতা মো. আলমগীর প্রমুখ।
বহিরাগতদের নিয়ে পাল্টা সমাবেশ
সিডিএর প্রবেশমুখে সড়কে সমাবেশের মধ্য দিয়ে চলে শ্রমিক লীগের ঘেরাও কর্মসূচি। এসময় ছালামের পক্ষে সিডিএর অভ্যন্তরে বহিরাগতদের নিয়ে পাল্টা সমাবেশ করে সিডিএর কয়েকজন কর্মচারী।
ছালামের পক্ষে এ কর্মসূচিতে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কে বি এম শাহজাহান ও চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রফিকুল আলম বাপ্পীর নেতৃত্বে নগরীর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে দেখা যায়।
সমাবেশে ছালাম অনুসারীরা বলেন, নগর উন্নয়নে আবদুচ ছালামের কর্মকাণ্ডে ঈর্ষান্বিত হয়ে স্বার্থান্বেষী মহল তাকে অপসারণের চেষ্টা করছেন।
এসময় সিডিএ শ্রমিক লীগ নেতা হাবিবুর রহমানকে দুর্নীতিবাজ ও ষড়যন্ত্রকারী বলে উল্লেখ করেন।
কর্মসূচি চলাকালে এছাড়াও শ্রমিক লীগ নেতাদের লক্ষ্য করে অশ্লীল স্লোগান ও গালিগালাজ করে ছালাম অনুসারীরা।
পাথর ছোড়াছুড়ি
পাশাপাশি পাল্টাপাল্টি সমাবেশ চলাকালে ছালামের পক্ষের কয়েক জন শ্রমিক লীগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে পাথর নিক্ষেপ করলে উভয় গ্রুপের মধ্যে তুমুল পাথর ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। পরে, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় আহত হন এক পুলিশ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৪