ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মাস্টারদা সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা সঠিক ধারণা দেননি: শামসুজ্জামান খান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৪
মাস্টারদা সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা সঠিক ধারণা দেননি: শামসুজ্জামান খান শামসুজ্জামান খান

চট্টগ্রাম: খ্যাতিমান লোকসাহিত্য গবেষক ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেছেন, ‘ঐতিহাসিকরা সূর্য সেন ও তার সাথীদের টেররিস্ট আখ্যা দিয়েছিলেন। অথচ এসব সূর্য সন্তানেরা অল্প বয়সেই গোটা দেশের মুক্তির জন্য, মানবতা ও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আত্মদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।



শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘পিপলস রিপাবলিক আর্মি গঠনের বিষয়টি গভীর ভাবে চিন্তা করলে বিপ্লবীদের দূরদর্শিতা, চিন্তার পরিপক্বতা সহজেই অনুধাবন করা যায়। তাদের বোধ ছিল গভীরে, দেশপ্রেম ছিল প্রখর।
জীবনের বিনিময়ে তারা মুক্ত স্বাধীন গণতান্ত্রিক মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তারা নতুন প্রজন্মকে, সাধারণ মানুষকে যেভাবে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তার জুড়ি মেলা ভার। ’

বৃহষ্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে ‘চিরঞ্জীব বিনোদ বিহারী চৌধুরী সম্মাননা গ্রন্থ’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিনোদ বিহারী চৌধুরী নাগরিক স্মরণসভা পরিষদ, চট্টগ্রাম এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বইটি প্রকাশকে জাতীয় কর্তব্য পালন আখ্যা দিয়ে শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘বিনোদ বিহারী চৌধুরীর ভেতর অহর্নিশ তাড়না ছিল মানব কল্যাণের জন্য। তিনি কখনো নিজের সম্পর্কে বাড়িয়ে কিছু বলেননি। মুক্তিযুদ্ধের পর সমাজে মূল্যবোধের ধ্বস নেমেছে। মৌলিক চিন্তা, শান্তি-স্বস্তি নেই। বিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যে এগোচ্ছে জাতি। বিনোদ বিহারী ছিলেন অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠস্বর। ’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ইমেরিটাস আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিপ্লব বা যুব বিদ্রোহ নিয়ে উঁচুমানের বস্তুনিষ্ট কোনো গবেষণা এ পর্যন্ত হয়নি। তবে বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের কাহিনি লিপিবদ্ধ করে গেছেন। অন্যদিকে, বিরোধী-বিদ্বেষীরাও যা খুশি লিখেছে। তাই নিরপেক্ষ বিশ্লেষণধর্মী ইতিহাস রচনা প্রয়োজন যাতে পটভূমি থেকে এ বিপ্লবের সূদুরপ্রসারী ফল উঠে আসবে। ’

স্বাগত বক্তব্যে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘বিনোদবিহারীর জন্মশতবার্ষিকীতে তিন দিনব্যাপী সেমিনার, আলোচনাসহ বর্ণাঢ্য আয়োজনে উপমহাদেশের একশত বছরের রাজনীতির চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। সেসব ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট, স্মৃতিচারণা, সাক্ষাৎকার একজায়গায় করার লক্ষ্যে এ প্রকাশনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সাহিত্য প্রকাশ বিনোদ বিহারীর চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে এটি প্রকাশ করেছে। ’

তিনি বলেন, ‘বিনোদ বিহারী আমাদের সামনে চলন্ত ইতিহাস ছিলেন। ত্রিকালদর্শী ঐতিহাসিক ব্যক্তি তিনি। তিনি নিজে স্বল্পতুষ্ট ছিলেন, স্বাবলম্বী মানুষ ছিলেন। আমাদের সমাজে দৃষ্টান্ত দেওয়ার মতো মানুষ কম। তাকে প্রাসঙ্গিকতা করে রাখতে, তরুণ প্রজন্মের সামনে তার আদর্শ তুলে ধরতে স্থায়ী কিছু করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এ লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ’

কবি-সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদলের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম মুস্তফা, ইতিহাসবিদ-গবেষক আহমেদ মমতাজ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফিরোজ, বিনোদ বিহারীর জীবন নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘অগ্নিপুরুষ’ এর নির্মাতা এমএ আবদুল্লাহ, সম্পাদনা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক শিমুল বড়ুয়া, মুক্তিযোদ্ধা অমল কান্তি নাথ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।