ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রেসালত মাহফিল

রাজনৈতিক বক্তব্য দেবেনা, রাজপথে আসবেনা হেফাজত !

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৪
রাজনৈতিক বক্তব্য দেবেনা, রাজপথে আসবেনা হেফাজত !

চট্টগ্রাম: প্রায় এক বছর পর চট্টগ্রামে বড় কোন সমাবেশ করতে যাচ্ছে নানা কারণে আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। ১১ এপ্রিল থেকে দু’দিনব্যাপী নগরীর লালদিঘী ময়দানে শানে রেসালত মাহফিলের অনুমতি পেয়েছে হেফাজত।

 

মাহফিল থেকে রাজনৈতিক উসকানিমূলক কোন বক্তব্য দেয়া হবে না এবং রাজপথে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করাসহ ৯ দফা শর্ত মেনে নেয়ার পর হেফাজতকে মাহফিল এবং মাইক ব্যবহারের ‍অনুমতি দিয়েছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু ধর্মীয় অনুষ্ঠান, আমরা আশা করব হেফাজতে ইসলাম কোন ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য দেবে না।
আগের মত রাজপথে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচলে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না বলে তারা আমাদের কথা দিয়েছেন। ৯টি শর্তে তাদের রেসালত মাহফিলের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বাংলানিউজকে বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। আমরা কখনোই রাজনৈতিক বক্তব্য দিইনি। আমরা সকল ধর্মের মানুষের ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণের জন্য আইন প্রণয়নের কথা বলি। রেসালত সম্মেলনেও একই কথা বলব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১১ ও ১২ এপ্রিল প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রেসালত মাহফিল চলবে। মাহফিলে হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফী প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন।

মাহফিলের প্রচার চালানোর জন্য হেফাজতকে আজ (বুধবার) এবং কাল (বৃহস্পতিবার) মাইক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে নগর পুলিশ।

শানে রেসালত মাহফিলের অনুমতি চেয়ে মার্চের মাঝামাঝিতে হেফাজতে ইসলামের নগর শাখার সভাপতি তাজুল ইসলাম নগর পুলিশের কাছে আবেদন করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ হেফাজতকে অনুমতি দেয়ার জন্য ৯টি শর্ত জুড়ে দেয়।

শর্তগুলো হচ্ছে, মাহফিলে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে সুইপিং করে কোন বিস্ফোরক ও ক্ষতিকর দ্রব্য নাই মর্মে নিশ্চিত করতে হবে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আবেদনকারী ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন।

মাহফিলে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং লোকজন যাতে নির্বিঘ্নে মাহফিলে প্রবেশ ও বের হতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা।

মাহফিলের প্রবেশ পথেই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যান্ত্রিক ও শারিরীকভাবে দর্শনার্থীদের তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে।

অগ্নি দুর্ঘটনার রোধ করতে বাধ্যতামূলকভাবে ফায়ার এক্সটিংগুইসার রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানের অনুমতির বিষয়ে সরকারি বিধি অনুযায়ী অন্য কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন অথবা অনাপত্তি প্রয়োজন থাকলে অবশ্যই তা নিতে হবে।

আযান ও নামাজের সময় মাইক প্রচারের সীমাবদ্ধতা বজায় রাখতে হবে। রাজনৈতিক উসকানিমূলক কোন বক্তব্য কিংবা ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কোন বক্তব্য দেয়া যাবেনা।

রাষ্ট্রবিরোধী, সামাজিক, নৈতিকতা বিরোধী এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সৃষ্টি করে এমন কার্যকলাপ করা যাবেনা।

মাহফিলকে কেন্দ্র করে কোন রাস্তা, রাজপথ, যানবাহন চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবেনা।

মাহফিলস্থলে ‍অবশ্যই আইনশৃঙ্খলার অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।

সূত্র জানায়, ৯টি শর্ত হেফাজতে ইসলাম লিখিতভাবে মেনে নেয়ার পর তাদের শানে রেসালত মাহফিলের ‍অনুমতি দিয়েছে নগর পুলিশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, শাপলা চত্বরের সহিংসতা, মামলা, নিজেদের ভেতর গ্রুপিংসহ নানা কারণে এমনিতেই হেফাজতের আর আগের তেজ নেই। আশা করছি রেসালত মাহফিলকে ঘিরে তারা কোন অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করবে না। এরপরও আমরা সতর্ক থাকব।

গত বছরের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের অবস্থান কর্মসূচীতে ব্যাপক সহিংসতার পর সংগঠনটির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। এরপর তাদের কর্মকাণ্ড মূলত হাটহাজারীতে বড় মাদ্রাসাকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে।

এর মধ্যে গত ডিসেম্বরে নগরীতে রেসালত সম্মেলনের অনুমতি চেয়ে তারা কর্মসূচী স্থগিত করতে বাধ্য হয়। সংগঠনে চাঙ্গা ভাব আনতেই চার মাস পর ফের রেসালত মাহফিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ডিসেম্বরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ছিল। হরতাল-অবরোধে আমরা সমস্যায় ছিলাম। হেফাজতের কর্মসূচীতে নিরাপত্তা দেয়ার মত পরিস্থিতি ছিলনা। সেজন্য তখন অনুমতি দিইনি।

হেফাজতের ঝিমিয়ে পড়ার বিষয়টি নাকচ করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বাংলানিউজকে বলেন, ৫ মে ঢাকায় যে সহিংসতা হয়েছে সেটা ছিল আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমাদের উপর অহেতুক দায় চাপানো হয়েছিল। মানুষ সেটা বিশ্বাস করেনি। রেসালত মাহফিলে আল্লামা শফী হুজুরের বয়‍ান শোনার জন্য লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে।

এদিকে হেফাজতে ইসলামের রেসালত সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার ভোর থেকে নগরীর লালদিঘী ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় তিন’শ পুলিশ মোতায়েন করা হবে। নগরীর প্রত্যেক প্রবেশপথসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটেও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এছাড়া র‌্যাব সদস্যরাও মাহফিলের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।