ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চবি ছাত্রলীগ

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে

বিপ্লব পার্থ,চবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৪
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। গত এক বছরে ছাত্রলীগের একের পর এক বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের লাগাম টেনে ধরতে এবার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয় সফর করছেন।



আগামীকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এ সফরে সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমসহ সংগঠনের বেশ ক’জন নেতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সফর করবেন।

সাংগঠনিক সফরে কর্মী সম্মেলনকে ফলাওভাবে দেখানো হলেও মূলত: এ সফরে ছাত্রলীগের নামে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় মূখ্য।
এছাড়া, একইসঙ্গে সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি নিয়েও পর্যবেক্ষণ ও আলাপ-আলোচনা করা হবে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে সারা দেশে বিতর্কিতদের বহিষ্কার, অছাত্রদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠন ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সংগঠন যখন প্রশংসা কুড়াচ্ছে, তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিভিন্ন কার্যক্রমে বিব্রত হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাই সাংগঠনিক সফরে আসছেন তারা, সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক এক সাধারণ সম্পাদককে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা, সংগঠনের সভাপতিসহ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে অসাংগঠনিক আচরণ, পরীক্ষার হলে তালা, সাংবাদিকদের লাঞ্ছনা, দোকানদারকে পিটুনিসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে সূত্র দাবি করেছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও ওই সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, সফরটি মূলত: সংগঠনের কাজ তরান্বিত করার জন্য।

তিনি বলেন, ‘সফরে প্রথমে কর্মী সম্মেলন এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে আলোচনা হবে। কমিটি নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গেও বসার চিন্তা ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে এক নেতার গলায় জুতার মালা দেওয়াসহ ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের বিষয়েও আলোচনা হবে। ’

এর আগে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‍আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একটি দল। কিন্তু কোনো কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় থেমে থাকেনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কোনো বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। বরং আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

২০১১ সালের ২৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হয়। এক বছর মেয়াদী এ কমিটি মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। নতুন কমিটি গঠনের তোড়জোড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গ্রুপিং রাজনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠে। এর জের ধরে ক্যাম্পাসে একটি গ্রুপ খোদ বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মামুনুল হককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে। একইভাবে সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদসহ বেশ কিছু সিনিয়র নেতা বিয়ে কিংবা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় অভিভাবক সংকটে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ফলে সম্প্রতি গ্রুপিং আরো বেপরোয়া আকার ধারণ করে।

এছাড়া, ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে বেশ কিছু নেতাকর্মী জড়িয়ে পড়েছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সহ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসির হায়দার করিম বাবুলকে লাঞ্ছিত করে ভিএক্স গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এসময় ‍ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে জুতার মালা পড়ানো হয় তাকে।

 এ ছাড়া গত ২২ ফেব্রুয়ারি শাহ জালাল হলে এক ব্যবসায়ীকে ধরে এনে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় এক ছাত্রলীগ নেতা।

পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি না পাওয়ায় চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, ২৩ মার্চ নৃবিজ্ঞান বিভাগ, গত বছরের ১৪ নভেম্বর উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার হল এবং ২০১২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ।

গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যলয়ের মূল ফটকে তালা দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে গত বছরের ১৮ মার্চ ও ১৫ মে এবং ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ৯ জুলাই ও ২৪ আগস্ট ক্যাম্পাসের মূল ফটকে তালা লাগায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে ফুল দিতে গেলে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এসব শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই প্রগতিশীল অবস্থানের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।

১৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার দিন ভর্তিচ্ছু চার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই করে ছাত্রলীগ নামধারী কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী। একইদিন পিটিয়ে আহত করা হয় ক্যাম্পাস ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতিকে।

চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলোয়াড় কোটায় ছাত্র ভর্তি নিয়ে বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠে বেশ ক’জন ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেনে সিট দখল নিয়েও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথাও আলোচনায় আসে বার বার।

গত ৩ মার্চ ছাত্রলীগের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে যৌথ সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের নামে বিভিন্ন সময় যারা অপকর্ম করেছে তাদের অপরাধের বিবরণসহ তালিকা আমাদের কাছে আছে। অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের পরবর্তী কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।