চট্টগ্রাম: এফএমসি ডকইয়ার্ডে নির্মিত আরও একটি ফিশিং ট্রলার সফলভাবে সি-ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে। এফবি স্বর্ণালী অপি নামের এ ট্রলারটির টানা চারদিনের ট্রায়াল চলাকালে কোনো ধরণের ত্রুটি ধরা পড়েনি।
এটি দেশে তৈরি কারিগরি ত্রুটিমুক্ত দ্বিতীয় ফিশিং ট্রলার। ইতিপূর্বে গতমাসে সফলভাবে সি-ট্রায়াল সম্পন্ন করা এফবি সিএমএল লাবিবা ছিল এফএমসি নির্মিত দেশের প্রথম ত্রুটিমুক্ত ফিশিং ট্রলার।
দেশে ফিশিং ট্রলার নির্মাণের সফলতার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে নতুন সংযোজন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আর বিদেশমুখীতা নয়, এবার দেশে তৈরি ট্রলারেই আহরিত হবে দেশের মৎস্যসম্পদ। দেশে তৈরি ট্রলারের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। এতে দেশের অর্থ দেশেই থাকবে এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও সমৃদ্ধ হবে।
এফবি স্বর্ণালী অপি ১ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা সি-ট্রায়াল চালায় বঙ্গোপসাগরে। এ সময় জাহাজটি পরিচালনা করেন মালিক প্রতিষ্ঠানের স্কিপার কামরুল ইসলাম ও প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম।
সি-ট্রায়ালের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে স্কিপার কামরুল জানান, বিদেশ থেকে আমদানি করা ট্রলারে প্রাথমিকভাবে যে সমস্ত ত্রুটি থেকে যায় এফএমসি ডকইয়ার্ডে তৈরি ট্রলারের সি-ট্রায়ালে মেজর কোনো ত্রুটি পাইনি। ট্রলারটির স্ট্যাবিলিটি, ম্যানুভারিং ভাল। আরও ভাল ইঞ্জিন পারফরমেন্স। ফিশিং ইক্যুইমেন্ট আপডেট এবং মডার্ন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ফিশিং ট্রলার নির্মিত হচ্ছে বড় গর্বের বিষয়। এই সাফল্যের মাধ্যমে এফএমসি দেশের শিপ বিল্ডিং খাতকে আরেক এগিয়ে নিয়ে গেছে।
প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, চারদিন চালিয়ে দেখেছি-ট্রলারটির সার্বিক গুণগত মান আমদানি করা ট্রলার থেকেও ভাল। ট্রায়ালে বড়ধরণের কোনো ত্রুটি ধরা পড়েনি। তবে কিছু কারেকশন আছে। সাধারণত: ট্রায়ালের পর কারেকশন করতে হয়। তিনি জানান, আমদানি করা জাহাজে অনেক জটিলতা থাকে। ট্রলার তৈরিতে নবীন হলেও বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান তাদের সক্ষমতা দেখাতে পেরেছে। এটা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য শুভকর।
এফএমসি ট্রল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহিবুল্লাহ মোরশেদ জানান, ট্রায়াল চলাকালে ট্রলারটির ট্রলিংকালে (মাছধরার সময়) স্রোতের অনুকূলে ১০৫০ আরপিএম (রোটেশন পার মিনিট)-এ সাড়ে চার নটিক্যাল মাইল ও প্রতিকূলে সাড়ে তিন নটিক্যাল মাইল স্পিড পাওয়া গেছে। স্বাভাবিক রানিং স্পিড ১২৫০ আরপিএম-এ অনুকুলে ১৫ নটিক্যাল মাইল ও প্রতিকূলে ১০ নটিক্যাল মাইল। তিনি জানান, ট্রলারটি ঝড়, তুফান ও ঢেউয়েও ট্রল পরিচালনায় সক্ষম। তিনি জানান, এফবি স্বর্ণালী অপি আগামী যেকোনো দিন থেকে বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য শিকারে বঙ্গোপসাগরে যেতে পারবে।
এফএমসি ডকইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: ইয়াছিন চৌধুরী জানান, ২৫০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই ফিশিং ট্রলারটি এক হাজার ৩৬০ অশ্বশক্তি সম্পন্ন। এতে সংযুক্ত আছে বিশ্বখ্যাত ক্যাটারপিলার ইঞ্জিন, ৫৫০ কিলোওয়াট ক্যাটারপিলার জেনারেটর, জার্মানির ভক কোম্পানির ফ্রিজিং সিস্টেম, উচ্চ প্রযুক্তির হাল সোনারসহ অত্যাধুনিক নেভিগেশনাল সিস্টেম ও ইলেকট্রো মেকানিক্যাল উইন্স। তিনি জানান, বিদেশ থেকে সংগৃহীত ট্রলারের তুলনায়ও এটি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন। এ ট্রলারের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ আমদানি করা ট্রলারের চেয়েও কম।
ট্রলারটির মালিক প্রতিষ্ঠান ঢাকার স্বর্ণালী ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
এফএমসি ডকইয়ার্ডের নির্বাহী পরিচালক পঙ্কজ দত্ত জানান, বিদেশ থেকে ফিশিং ভ্যাসেল আমদানিতে রয়েছে বিশাল শুভংকরের ফাঁক। ক্যাপিটাল মেশিনারি হিসেবে ফিশিং ভ্যাসেল আমদানি করে বিপুল পরিমাণ শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়। সরকারের উচিত এ খাতে শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়ে দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করা। এর মাধ্যমে ফিশিং ট্রলারের ক্ষেত্রে বিদেশমুখীতা কমে যাবে।
উল্লেখ্য, এফএমসি শিপ বিল্ডিং জগতে নবীন হলেও কন্টেইনার ভ্যাসেল, ট্যাংকার, ড্রেজার, ক্রুজ ভ্যাসেল, ফেরি, টাগ বোট, পন্টুন, স্লিপার নির্মাণসহ সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিটি শাখায় সফলতা দেখিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘন্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৪