ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দেশের ইতিহাসে প্রথম

এফএমসি বানাল ত্রুটিমুক্ত ফিশিং ট্রলার

চট্টগ্রাম প্রতিদিন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৪
এফএমসি বানাল ত্রুটিমুক্ত ফিশিং ট্রলার

চট্টগ্রাম: সফলভাবে ফিশিং ট্রলার নির্মাণের মধ্য দিয়ে দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেড। উদীয়মান এ খ্যাতের উদ্যোক্তারা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জাহাজ নির্মাণের সকল শাখায় সফলতা দেখিয়ে আসলেও কারিগরি ত্রুটিমুক্ত ফিশিং ট্রলার নির্মাণের সাফল্য এই প্রথম।



এফএমসি ডকইয়ার্ড নির্মিত এফবি সিএমএল লাবিবা নামের মিডওয়াটার ফিশিং ট্রলারটি গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত টানা দুইদিনের সি-ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে। সি-ট্রায়াল শেষে ট্রলারটি এখন বাণিজ্যিক মৎস্য শিকারের জন্য প্রস্তুত।
 

শিপ বিল্ডিং বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, এফবি সিএমএল লাবিবাই হচ্ছে দেশে নির্মিত সর্বপ্রথম সফল ফিশিং ট্রলার। সি-ট্রায়ালে দেখা গেছে এটির নির্মাণ প্রক্রিয়া সফল ও ত্রুটিমুক্ত। ট্রায়াল চলাকালে সাগরের ঢেউজনিত বৈরিতা চলাকালে স্্েরাতের বিপরীতে ট্রলারটিতে ৯০০ আরপিএম (রোটেশন পার মিনিট)-এ ৫ নটিক্যাল মাইল ট্রল স্পিড পাওয়া গেছে। এ স্পিড পেতে সাধারণত ১ হাজার ৪০০ আরপিএম পর্যন্ত উঠাতে হয়। তাছাড়া ১১৫০ আরপিএম-এ ১৪ কিলোনট গতি বেগে চলার সফলতাও দেখিয়েছে ট্রলারটি। এতে কম সময়ে কম খরচে ফিশিং গ্রাউন্ডে আসা যাওয়া করতে পারবে। তিনি জানান, ট্রলারটি ঝড়, তুফান ও ঢেউয়েও ট্রল পরিচালনায় সক্ষম।

বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী শাহজাহান আরও জানান, বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণের প্রধান উপকরণ ফিশিং ট্রলারের উৎস এখনও বিদেশ নির্ভর। থাইল্যান্ড, চীন, কোরিয়া ও জাপান থেকে এদেশে ফিশিং ট্রলারের যোগান দেয়া হয়। এফবি সিএমএল লাবিবা নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো আর বিদেশমুখীতা নয়, এবার দেশে তৈরি ট্রলারেই দেশের মৎস্যসম্পদ আহরিত হবে। তিনি বলেন, দেশে তৈরি ট্রলারের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। এতে দেশের অর্থ দেশেই থাকবে এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও সমৃদ্ধ হবে।

মৎস্যশিকারে প্রায় ২৫ বছরের অভিজ্ঞ, মালিক প্রতিষ্ঠানের স্কিপার মো. ইলিয়াছ মিয়াও এই ফিশিং ট্রলারের ট্রায়াল ভয়েস পরিচালনা করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, দীর্ঘ চাকরি জীবনে থাইল্যান্ড, চীন, কোরিয়া, জাপানের তৈরি ফিশিং ট্রলার পরিচালনা করেছি। কিন্তু দেশে তৈরি এই ট্রলারে যে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছি তা অন্যান্য দেশে তৈরি ট্রলারে অনুভব করিনি। বাংলাদেশ ফিশিং ট্রলার নির্মাণ জগতে নবীন হলেও লাবিবা প্রমাণ করেছে আমরাও সফল। তিনি জানান, আমাদের দেশের উদ্যোক্তাদের উচিত বিদেশ নির্ভরতা পরিহার করে দেশীয় বিল্ডারের মাধ্যমে ট্রলার তৈরি করা।

এফএমসি ডকইয়ার্ডের চেয়ারম্যান মির্জা আইয়ুব বেগ জানান, ২৫০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই ফিশিং ট্রলারটি এক হাজার ৩৬০ অশ্বশক্তি সম্পন্ন। এতে সংযুক্ত আছে বিশ্বখ্যাত ক্যাটারপিলার ইঞ্জিন, ৫৫০ কিলোওয়াট ক্যাটারপিলার জেনারেটর, জার্মানির ভক কোম্পানির ফ্রিজিং সিস্টেম, উচ্চ প্রযুক্তির হাল সোনারসহ অত্যাধুনিক নেভিগেশনাল সিস্টেম ও ইলেকট্রো মেকানিক্যাল উইন্স। তিনি জানান, বিদেশ থেকে সংগৃহীত ট্রলারের তুলনায়ও এটি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন। মানে ভাল এবং অপারেশনেও সহজ-তা প্রমাণিত হয়েছে প্রথম ট্রায়ালেই। এ ট্রলারের রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম।

জানা গেছে, ট্রলারটির মালিক প্রতিষ্ঠান ঢাকার আপন ইমপোর্ট সেন্টার লিমিটেড।

মালিক প্রতিষ্ঠানের স্কিপার ইলিয়াছ মিয়া জানান, আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে ট্রলারটি বঙ্গোপসাগরে বাণিজ্যিক মৎস্য শিকার শুরু করবে। ইতিমধ্যে এ ট্রলারের জন্য লোকবল নিয়োগসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

চট্টগ্রামের আরেক শীর্ষস্থানীয় মৎস্য আহরণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও অভিজ্ঞ স্কিপার এমএম মোরশেদ জানান, ট্রলার আমদানি খাতে দেশ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা চলে যায়। এতোদিন দেশে নির্মিত ফিশিং ট্রলারের প্রতি মানুষের আস্থা সংকট ছিল। এখন এফএমসি নির্মিত ট্রলারের সফল ট্রায়ালের পর আস্থা ফিরে এসেছে।

এফএমসি ডকইয়ার্ডের নির্বাহী পরিচালক পঙ্কজ দত্ত জানান, বিদেশ থেকে ফিশিং ভ্যাসেল আমদানিতে রয়েছে বিশাল শুভংকরের ফাঁক। ক্যাপিটাল মেশিনারি হিসেবে ফিশিং ভ্যাসেল আমদানি করে বিপুল পরিমাণ শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়। সরকারের উচিত এ খাতে শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়ে দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করা। এর মাধ্যমে ফিশিং ট্রলারের ক্ষেত্রে বিদেশমুখীতা কমে যাবে।

এফএমসি ডকইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: ইয়াছিন চৌধুরী জানান, তাদের শিপইয়ার্ডে আরও চারটি ফিশিং ট্রলার নির্মানাধীন রয়েছে। কার্যাদেশের প্রক্রিয়া চলছে তিনটির।

এফএমসি শিপ বিল্ডিং জগতে নবীন হলেও কন্টেইনার ভ্যাসেল, ট্যাংকার, ড্রেজার, ক্রুজ ভ্যাসেল, ফেরি, টাগ বোট, পন্টুন, স্লিপার নির্মাণসহ সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিটি শাখায় সফলতা দেখিয়েছে ইতিমধ্যেই।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ঘণ্টা, মার্চ ১১,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।