চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীর বহ্দ্দারহাটে ফ্লাইওভার ট্র্যাজেডির দায় থেকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি পেয়ে গেল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ)। ঘটনা তদন্তে গিয়ে পুলিশ সিডিএ’র কোন ত্রুটিই খুঁজে পায়নি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মকর্তার উপর সব দায় চাপিয়ে দেয়া পুলিশের অভিযোগপত্র চূড়ান্তভাবে বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, ফ্লাইওভার ধসের ঘটনায় দেয়া অভিযোগপত্র আজ (রোববার) বিচারের জন্য প্রস্তুত করে বিচারিক আদালত মহানগর দায়রা জজের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন সিএমএম।
চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, মামলার নথি আসার পর অাসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের উদ্যোগ নেব। দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাতে মামলার বিচার শুরু হয় সেই পদক্ষেপ নেব। ফ্লাইওভার ধসের মত এতবড় একটি মর্মান্তিক ঘটনার বিচার হোক, সেটা সবাই চায়।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর নগরীর বহদ্দারহাটে সিডিএ’র নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের ১২ ও ১৩ নম্বর স্পেনের তিনটি গার্ডার ভেঙে পড়ে ১৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় অর্ধশতাধিক।
এ ঘটনায় ২৬ নভেম্বর সিডিএ’র তিন কর্মকর্তা, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার এন্ড পারিশা ট্রেড সিস্টেমসের (জেভি) ১০ জন এবং বেসরকারী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএআরএম অ্যাসোসিয়েটস এন্ড ডিপিএম'র ১২ জনসহ মোট ২৫ জনকে আসামী করে নগরীর চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এস আই আবুল কালাম আজাদ।
মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রেজাউল করিম। ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর তিনি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারভুক্ত ২৫ আসামীর মধ্যে ১৮ জনকে বাদ দিয়েছেন। এদের মধ্যে সিডিএ’র তিন কর্মকর্তাও আছেন। এরা হলেন, ফাইওভারের তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ'র নির্বাহী প্রকৌশলী এ এ এম হাবিবুর রহমান, সিডিএ'র সহকারী প্রকৌশলী তানজিব হোসেন ও উপসহকারী প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন মীর আক্তার এন্ড পারিশা ট্রেড সিস্টেমস (জেভি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাকসহ তিনজন। পরমর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মতিন সহ ১২ জনকে আসামীর কারও বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা কোন অভিযোগের প্রমাণ পাননি।
অভিযোগপত্রে এজাহারবর্হিভূত একজনসহ মোট ৮ জনকে আসামী করা হয়। এরা হলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার এন্ড পারিশা ট্রেড সিস্টেমসের (জেভি) পক্ষে তৎকালীন প্রকল্প ব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিন, সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার মনজুরুল ইসলাম, সাইট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জলিল, আমিনুর রহমান, আব্দুল হাই, মো.মোশাররফ হোসেন রিয়াজ, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ার শাহজাহান আলী এবং এজাহারে নাম না থাকা রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত এজাহারভুক্ত আসামী গিয়াস উদ্দিন, মনজুরুল ইসলাম, আব্দুল জলিল, আমিনুর রহমান, আব্দুল হাই, মো.মোশাররফ হোসেন রিয়াজ, শাহজাহান আলী এবং রফিকুল ইসলাম মিলে সিডিএ কর্তৃপক্ষ এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অনুমতি না নিয়ে এবং ওইদিনের অনুমোদিত কর্মপরিকল্পনার বাইরে গিয়ে ২৪ নভেম্বর শনিবার ছুটির দিনে সন্ধ্যার পর শ্রমিকদের দিয়ে নির্মাণ কাজ চালাচ্ছিলেন।
এতে আরও বলা হয়, ফ্লাইওভার নির্মাণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, মানব জীবন বিপন্ন হবার সম্ভাবনা আছে জানা স্বত্ত্বেও সতর্কতা অবলম্বন না করে এবং নিরাপত্তামূলকভাবে গার্ডার নির্মাণের সময় জনসাধারণের চলাচলে কোন ব্যারিকেড না দিয়ে নির্মাণ স্থান অরক্ষিত রেখে এবং আলোর ব্যবস্থা না করে কাজ করছিলেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, তদন্তকালে সিডিএ’র তিন কর্মকর্তাসহ ১৮ আসামীর বিরুদ্ধে কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তরা বিনা অনুমতিতে কাজ করায় তাদের আসামী করা হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য দুর্ঘটনার পর ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ সেনাবাহিনীর তত্তাবধানে সম্পন্ন হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর জনসাধারণের চলাচলের জন্য ফ্লাইওভার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ঘণ্টা, মার্চ ০৯,২০১৪