ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দম্পতির অস্বাভাবিক মৃত্যু

ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় পুলিশ ও পরিবার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৪
ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় পুলিশ ও পরিবার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানার পূর্ব ফিরোজ শাহ এলাকায় একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী’র মৃত্যুর রহস্য জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে পুলিশ। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে যাবার পরও দু’জনের মৃত্যু তাদের স্বজন এবং এলাকার লোকজনের কাছে রহস্য হিসেবে রয়ে গেছে।



তবে পুলিশ বলেছে, নিহতদের সুরতহাল রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি। দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা কিংবা হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়ার কোন আলামতও পাওয়া যায়নি।


নগরীর আকবর শাহ থানার ওসি আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, সুরতহাল রিপোর্টে তাদের খুন করার কোন আলামত পাওয়া যায়নি। এখন ময়নাতদন্ত রিপোর্ট কি আসে সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশন‍ার (পশ্চিম) এস এম তানভির আরাফাত বাংলানিউজকে বলেন, স্বামী-স্ত্রীকে খুন করা হয়েছে এমন কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা এমন কোন ক্লুও পাইনি। শুধুমাত্র তাদের পরিবার ধারণার উপর ভিত্তি করে কিছু অভিযোগ তুলেছে। এখন ময়নাতদন্ত রিপোর্টে কি আসে সেটা দেখব। সেখানে যদি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছু আসে তাহলে তদন্ত হবে।

গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ভোরে পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনির বিশ্ব ব্যাংক আবাসিক এলাকার এক নম্বর সড়কের এম-ব্লকে রাজিব চৌধুরী ও তার স্ত্রী সঞ্চিতা শীল চৌধুরীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। রাজিব পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনি সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এবং স্ত্রী চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে খাদ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিদর্শক পদে কর্মরত ছিলেন।  

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে তাদের গৃহপরিচারিকা সুপ্তি পাল পুলিশকে জানান, রাজিব বাড়ির আঙিনায় একটি প্লাস্টিকের চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে গাছ থেকে পূজার ফুল তুলছিলেন। ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে একটি গামারি গাছ থেকে ফুল হাতে ছিঁড়ে স্টিলের বাটিতে নিচ্ছিলেন সঞ্চিতা।

এসময় হঠাৎ ছাদের আড়াই ফুট লম্বা সীমানা দেয়াল ভেঙ্গে নিচে পড়ে যান সঞ্চিতা। দেয়ালের ভাঙ্গা ইট এসে পড়ে রাজিবের মাথায়। রাজিব তখন আঙিনায় পড়ে থাকা ফুল কুড়াচ্ছিলেন। এ ঘটনা দেখতে পেয়ে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠেন সুপ্তা। এরপর স্থানীয় লোকজন দ্রুত জড়ো হন। আহতদের সিএনজি অটোরিক্সায় করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।  

তবে সুপ্তির বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয় দাবি করে সঞ্চিতার ভাই তড়িৎ শীল বলেন, আমার বক্তব্য হচ্ছে, যদি ছাড় থেকে পড়ত তাহলে শুধু মাথায় জখম হত। আমার বোনের হাতের রগ কাটল কিভাবে ? রাজিব দাদার পায়ের রগ কাটা কেন ? মনে হচ্ছে কেউ পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে খুন করেছে।  

রাজিবের ছোট ভাই অভিজিৎ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলে সবকিছু পরিস্কার হবে। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক, কারা এতবড় ঘটনা ঘটাল। আমরা তো আর ভাইকে ফিরে পাবনা। ভাই হত্যার বিচার চাই।  

আকবর শাহ থানার ওসি আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে জানান, দম্পতির মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হত্যাকাণ্ডের বিষয় এলে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।

তবে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যাকাণ্ড দাবি করা হলেও থানায় এ বিষয়ে কোন অভিযোগ করা হয়নি বলে জানান ওসি।

নিহত রাজিব শীল ফটিকছড়ি উপজেলার পাঁচপুকুরিয়া গ্রামের মৃত আদেশ চৌধুরীর ছেলে। আর সঞ্চিতার বাবার বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের সরকারহাট এলাকায়। তাদের আট বছর ও তিন বছর বয়সী দু’মেয়ে আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।