ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলবে পথশিশুরাও: ড. আতিউর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৪
১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলবে পথশিশুরাও:  ড. আতিউর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: পথ শিশুরাও ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, সুবিধাবঞ্চিত পথ শিশু, যাদের কেউ নেই।

তারাও ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে। যেখানে তারা কষ্টার্জিত টাকা সঞ্চয় করে রাখবে।
কয়েকদিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

শনিবার সকালে নগরীর আগ্রাবাদ বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি হাইস্কুল মাঠে  বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজনে ‘স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্সে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, জীবনে যখন প্রথমে কোনো ব্যাংকের শাখা দেখলাম, খুব অবাক হয়েছিলাম। ইচ্ছে হয়েছিল ভেতরে যাওয়ার, সেখানে কি হয় তা দেখার। কিন্তু তখন পারিনি। কারণ, ব্যাংক ছিল শুধুই বড়দের! প্রথম ষাটের দশকে স্কুল ব্যাংকিংয়ে সঙ্গে পরিচিত করে হাবিব ব্যাংক। তাও ছিল ২১ কিলোমিটার দূরে।

তিনি বলেন, প্রকৃতির নিয়মে আমি বড় হলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লাম। গবেষণা করলাম সাধারণ ও অতি দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ খোঁজার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালনের সৌভাগ্য হলো। তবে, ভুলতে পারিনি শৈশবের সেই অতৃপ্তি, সেই অদম্য কৌতুহল না মেটাবার আক্ষেপ। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার পরপরই ব্যাংকগুলোকে স্কুল ব্যাংকিং চালু করার নির্দেশনা দিই।

ড. আতিউর রহমান বলেন, দারিদ্র্য নিরসন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জাতীয় লক্ষ্যার্জনে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবাভুক্ত করতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি(ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন) এবং আর্থিক শিক্ষা(ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি) এ দু’টি কর্মসুচির ওপর কয়েক বছর ধরেই গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্যে আর্থিক সেবাবঞ্চিত জনসাধারণকে অর্থনীতির মূল স্রোতে নিয়ে আসার কোনো বিকলপ নেই।   এ ক্ষেত্রে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যদি ছোটবেলা থেকেই নিজেদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তোলে নিজেদের আর্থিক ভিতকে মজবুত করে তুলতে পারে তা একদিকে যেমন ব্যক্তির ভবিষ্যৎ সুদৃঢ় করবে, অন্যদিকে টেকসই করতেও কার্যকর ভুমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

২০১০ সালের ২ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমে দেশের ৪৭ ব্যাংকে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই লাখ ৮৬ হাজার হিসাব খুলেছে শিক্ষার্থীরা। এসব হিসাবে তিনবছরে তিনশ চার কোটি টাকা জমা হয়েছে বলে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আর ৯৬ হাজার কোটি টাকা জমা হলে তারা নিজেরাই একটা ব্যাংক খুলতে পারবে।

গভর্নর বলেন, স্কুল ব্যাংকিং বিষয়ে গত বছরই আমরা বিস্তারিত নীতিমালা জারি করেছি। এর ফলে এখন মাত্র একশ টাকায় ৬-১৮ বছর যে কোনো স্কুল শিক্ষার্থী ব্যাংক হিসাব খুলতে পারছে। এসব হিসাবে কেবলমাত্র সরকারি  ছাড়া অন্য কোনো সার্ভিস চার্জ বা ফি আরোপ করা হয় না। এসব হিসাবের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাসিক বেতন ও অন্যান্য ফি সংগ্রহ করতে পারবে। বৃত্তি, উপবৃত্তির টাকাও এসব হিসাবে জমা করা যাবে।

ড. আতিউর রহমান বলেন, একটি দেশের জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‌আমরা সে স্থিতিশীল আর্থিক খাত তৈরি করতে পেরেছি। বিশ্বমন্দায় যখন পাশ্ববর্তী দেশও আর্থিক সংকটে পড়েছে তখনও আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশেরও বেশি। ডিপোজিট যেমন বাড়ছে তেমনি আমরা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগও বাড়িয়েছি।   ৯০ হাজার কোটি টাকা এসএমই খাতে লোন দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এখন থেকে মাত্র ১০ শতাংশ সুদের ঋণ সুবিধায় ডেলের কম্পিউটার (ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ) কিনতে পারবেন ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা ও শিক্ষার্থীরা। আর মাত্র ২০ শতাংশ এককালীন অর্থ বা ডাউন পেমেন্ট দিয়ে তারা এ কম্পিউটার কিনতে পারবেন। নারী উদ্যোক্তারা ই কমার্সের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম কামাল ভূঁইয়া, বিশেষ অতিথি ছিলেন রুপালী ব্যাংকের মহা ব্যবস্থাপক দেবাশীষ চক্রবর্তী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ নওশাদ আলী চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক অধ্যাপক হান্নানা বেগম।

অনুষ্ঠান শেষে নৃত্য পরিবেশন করেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের শিল্পীরা। ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও। এছাড়া শিক্ষার্থীদের স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলার মেলায় ব্যাংকের ৫২টি স্টল অংশ নেয়। মেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক’শ শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।