ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দু’মাস বন্ধ শাহ আমানত

দুর্ভোগে চবি’র সাধারণ শিক্ষার্থীরা

বিপ্লব পার্থ, চবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৪
দুর্ভোগে চবি’র সাধারণ শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১২ জানুয়ারি শিবির-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে শিবিরের এক নেতা নিহতের পর বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ববৃহৎ শাহ আমানত হল।

সংঘর্ষের ঘটনার পর দুই মাস পরও হলটি খুলে দেওয়া হয়নি।

ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল কর্তৃপক্ষ বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় হল খুলে দেয়া হচ্ছে না।
তবে শিগগির হলটি খুলে দেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।

ছাত্র শিবির-ছাত্রলীগের কিছু সংখ্যক কর্মীর জন্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলার কারণে সর্ববৃহৎ হলটি বন্ধ থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তারা হলটি দ্রুত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

জানা যায়, গত ১২ জানুয়ারি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলে ছাত্রলীগ ও শিবিরের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে শাহ আমানত হল ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মামুন হায়দার নিহত হন। এছাড়া সংঘর্ষে উভয় সংগঠনের অন্তত ৩০ জন কর্মী হয়।

ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিষ্টার (তথ্য) ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য শাহ আমানত হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ১৫ জানুয়ারি আমানত হল খুলে দেওয়ার দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয় ছাত্র শিবির।

একই দিনে ক্যাম্পাস থেকে শিবিরকে বিতাড়িত করা এবং শাহ আমানত হল খুলে দেওয়ার দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

কর্তৃপক্ষ বন্ধ হল খুলে না দিলেও হলটি নিজেদের দখলে নিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দুই সংগঠন। গত ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশ শাহ আমানত ও শাহজালাল হলের সামনে বেশ কিছু নেতাকর্মী নিয়ে শোডাউন দিয়েছে। তবে কৌশলী ভূমিকায় রয়েছে ছাত্র শিবির।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শাহ আমানত হলে আট শতাধিক সিট রয়েছে। তবে এসব সিটের বিপরিতে তিনগুণের বেশি ছাত্র হলে থাকেন। এ হিসেবে অন্তত আড়াই হাজার শিক্ষার্থী দুর্ভোগে পড়েন।

দুই মাস পরও হল খুলে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, গুটি কয়েক ছাত্রের জন্য সবাইকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

তিনি জানান, হলে অবস্থানকারী অনেক ছাত্রের পরীক্ষা চলছে। আশপাশের কটেজগুলোতেও কোন কক্ষ খালি পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় এসব শিক্ষার্থীরা কিভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে তা কৃর্তৃপক্ষের  ভেবে দেখা উচিত।

কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই বন্ধ হল খুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি অভিযোগ করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে বলেন, দীর্ঘ দিন হল বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দুর্বলতার পরিচয়। শিগগির হল খুলে দেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি।

শাহ আমানত হল খুলে দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মো.আলমগীর টিপু। তবে বহিরাগতদের হলে অবস্থান করতে না দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'শাহ আমানত হল খুলে দেওয়ার জন্য গত ১৫ জানুয়ারি আমরা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।  

শাহ আমানত হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনসুর বাংলানিউজকে বলেন,'অনেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা শুরু হয়েছে। হল বন্ধ থাকায় তাদের সমস্যা হচ্ছে। ‘

হল খুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই খুলে দেওয়া হবে হল। ' একই কথা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিরাজ উদ দৌলাহ।

তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি দুই মাসেও:
ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে একই ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন ও সহকারী প্রক্টর মোহম্মদ অহিদুল আলমকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে তা নির্দিষ্ট করে না দিলেও শিগগির প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয় কমিটিকে।

ঘটনার দু'মাস পার হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি কমিটি। তদন্তের কাজ শেষ না হওয়াতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তদন্তের কাজ শেষ না হওয়াতে এখনো পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন দিবেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়:১৯৪০ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।