ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অকার্যকর চাকসু, তবুও চলছে টাকা আদায়!

বিপ্লব পার্থ, চবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০১ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১৪
অকার্যকর চাকসু, তবুও চলছে টাকা আদায়!

চট্টগ্রাম : ২২ হাজার শিক্ষার্থীর অধিকার আদায়ের প্লাটফর্ম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)। দু’যুগ ধরে নির্বাচন বন্ধ রয়েছে।

নির্বাচনের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষসহ কেউই যেন আন্তরিক নন। ১৯৯০ সালে ছাত্র ঐক্য নেতা ফারুকুজ্জামান নিহত হওয়ার পর বন্ধ করে দেয়া হয় চাকসু কার্যক্রম।
অথচ চাকসু পরিচালনার জন্য প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাকসু নির্বাচনে কোন বাধা নেই। কিন্তু কেন এ নির্বাচন হচ্ছে না তা জানা নেই কারোরই।

বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ বাংলানিউজকে বলেন,‘ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সহমর্মিতা ও সহানুভূতি থাকলে চাকসু নির্বাচন দেয়া সম্ভব। তবে নির্বাচনের ব্যাপারে ছাত্র সংগঠনগুলোকেই ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। ’

দীর্ঘদিন ছাত্র-ছাত্রীদের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া চর্চার প্রাণ কেন্দ্রটি রয়েছে অকার্যকর। বর্তমানে এটি কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের বিয়ে ও আক্বিকার জন্য চাকসু ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।   এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর চাকসুর নির্বাচন হয় মাত্র ছয় বার। প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। পরের বছর ১৯৭১ সালে হয় দ্বিতীয় নির্বাচন। এর পর ১৯৭৩ ও ১৯৮০ সালে হয় পরবর্তী দু’টি নির্বাচন। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

চাকসুর প্রথম ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং সর্বশেষ ভিপি হন মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।

তবে ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর ছাত্র ঐক্য নেতা ফারুকুজ্জামান হত্যার পর পর চাকসুর কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিবিরের বিরুদ্ধে তাকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

চাকসু সুত্র জানায়, কার্যক্রম না থাকলেও চাকসু কেন্দ্রে নিয়োজিত আছেন পরিচালক ও সহকারী পরিচালকসহ ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। সর্বশেষ কমিটির ২৪ বছর অতিবাহিত হলেও এই কমিটিকে এখনও বিলুপ্ত ঘোষণা করেনি প্রশাসন।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিবছর চাকসুর পেছনে ৬ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও তার প্রকৃত হিসাব মেলা ভার।

এদিকে চাকসু নির্বাচন না হওয়ায় বন্ধ হয়ে আছে হল সংসদের নির্বাচনও। ফলে হলের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে রয়েছে বন্ধ্যাত্ব। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে প্রশাসনে শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি থাকবে। আর এতে করে ছাত্রদের মৌলিক দাবিগুলো প্রশাসন থেকে সহজে আদায় করা যাবে বলে মনে করছেন ছাত্র-ছাত্রীসহ সংশিষ্টরা।

অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কাজী নুসরাত জাহান বাংলানিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চাকসু নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্রনেতাদের মধ্যে হানাহানির মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা সাধারন শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ নয়। ’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল চাকসু নির্বাচন চাই। তবে এর আগে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এবং সবার সহাবস্থান ও প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা তৈরি হওয়া দরকার। ’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো.আলমগীর টিপু বাংলানিউজকে বলেন,‘ছাত্রলীগ স্বাধীনতার স্বপক্ষের ছাত্রসংগঠন হিসেবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছে। তাই ছাত্রলীগ সব সময় গনতন্ত্রের পক্ষে। স্বাধীনতা বিরোধীদের দোসর শিবিরের কারণে চাকসু নির্বাচন হচ্ছে না। ’

তিনি শিবিরের দখলে থাকা হল গুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য মুক্ত করে চাকসু নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান।

সর্বশেষ নির্বাচিত ভিপি মো.নাজিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আশির দশকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে চাকসু। ১২ টি ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ছাত্রঐক্যের ব্যানারে আমি ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। এ নিরর্বাচনের মাধ্যমে আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম।

পরবর্তীতে গনতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এসেও দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন না হওয়াটা  দু:খজনক। এর ফলে আগামীতে দেশ নেতৃত্ব সংকটে পড়বে। যেহেতু চাকসু নির্বাচন ব্যয়বহুল তাই সরকারকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি অবিলম্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ গুলোর নির্বাচনের দাবি জানান।

বাংলাদেশ সময় : ১১২৯ ঘন্টা, মার্চ ২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।