ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি আধুনিক শক্তিশালী ও সক্ষম ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে রুপান্তরের কাজ চলছে। বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে ঐকান্তিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের নেভাল বার্থে চীন থেকে কেনা যুদ্ধ জাহাজ আবু বকর ও আলী হায়দারের নামফলক উন্মোচন ও কমিশনিং অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী জাহাজ দুটির অধিনায়কদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং জাহাজ দুটির নামফলক উন্মোচন করেন।
কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধবহর বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌবাহিনীর নিজস্ব বিমানঘাটিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়সমূহ গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেন। বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা ও দূর্যোগ মোকাবেলায় জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে আধুনিক নৌবাহিনীর স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি তা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, জাতিরজনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সদ্য সংযোজিত আবু বকর ও আলী হায়দার যুদ্ধজাহাজ দুটিকে একই নামে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে যা দেশের সম্পদ রক্ষা, নিজ জলসীমায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং বিশ্ব শান্তি রক্ষায় আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পাশাপাশি দেশের সার্বভৌমত্ব, সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা রক্ষা ও চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালনের জন্য নৌবাহিনীর সদস্যদের কঠোর পরিশ্রম ও কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামস্থ নৌ ঘাঁটি বানৌজা ঈসাখানে এসে পৌঁছালে নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবীব এবং কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল রিয়ার এডমিরাল এম আখতার হাবীব তাঁকে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথিকে নৌবাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী গার্ড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় নৌবাহিনীর ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুযায়ী শীপস বেল বাজানো ও পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এরপর তিনি নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ যুদ্ধজাহাজ সমুদ্র জয় এবং বানৌজা আবু বকর এ আরোহন করেন এবং জাহাজের বিভিন্ন সমরাস্ত্র পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সেনা ও বিমান বাহিনীর প্রধানগণ, দেশী বিদেশী কূটনীতিক, সামরিক ও অসামরিক উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
নৌবহরে সংযোজিত ‘জিয়াংহু-৩’ ক্লাসের মিসাইল ফ্রিগেট দুটি দৈর্ঘ্যে ১০৩.২২ মিটার এবং প্রস্থে ১০.৮৩ মিটার যা ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২৬ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম। আধুনিক ক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ দুটি বিমান বিধ্বংসী কামান, জাহাজ বিধ্বংসী মিসাইল এবং সমুদ্র তলদেশে সাবমেরিনের অবস্থান সনাক্তকরনসহ সুনির্দিষ্ট টার্গেটে আঘাত হানতে সক্ষম।
এর ফলে নৌবাহিনীর সক্ষমতা বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের বর্ধিত বিশাল জলসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বিস্তৃত সমুদ্রের বিপুল মৎস্য ও খনিজসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজতর হবে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত বিস্তৃর্ণ সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চল এবং বন্দর এলাকাসমূহে নিরাপত্তা তথা দেশের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে সদ্য সংযোজিত জাহাজসমূহ বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।
উল্লেখ্য, গত ০৯ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে চীনে জাহাজ দুটিকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে যুক্তরাজ্যের রাজকীয় নৌবাহিনী হতে সংগৃহীত দুটি জাহাজ একই নামের ‘আবু বকর’ ও ‘আলী হায়দার’ গত ২২ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে ডি-কমিশনিং করা হয়। সদ্য কমিশনকৃত জাহাজ দুটি পূর্বের ‘আবু বকর’ ও ‘আলী হায়দার’ নামে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৪
** যুদ্ধজাহাজের কমিশনিং করলেন প্রধানমন্ত্রী