ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণা

বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে নূরজাহান গ্রুপ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৪
বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে নূরজাহান গ্রুপ

চট্টগ্রাম: ব্যাংকের কাছ থেকে মোটা অংকের ঋণ নিয়ে পরিশোধের নামে প্রতারণার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠান নূরজাহান গ্রুপ। প্রায় ১০১ কোটি টাকার চেক প্রতারণার দায়ে ইতোমধ্যে ফেঁসেছেন নূরজাহান গ্রুপের দু’কর্ণধার জহির আহম্মেদ ও টিপু সুলতান।



মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এস এম মুজিবুর রহমানের আদালতে পাঁচটি চেক প্রতারণার মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে আদালত ৯ মার্চ থেকে এসব মামলায় পর্যায়ক্রমে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুরও আদেশ দিয়েছেন।
এর ফলে পাঁচটি মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন দু’ভাই জহির ও টিপু।

পাঁচটি মামলার মধ্যে দু’টি মামলায় নূরজাহান গ্রুপের মেরিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে জহির আহম্মেদ এবং পরিচালক হিসেবে টিপু সুলতান আসামী।

বাকি তিনটি মামলায় একই গ্রুপের মেসার্স জাসমিয়া ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে টিপু সুলতান আসামী হিসেবে আছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, নূরজাহান গ্রুপের দু’টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে খেলাপি ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রায় শত কোটি টাকার চেক প্রতারণার অভিযোগে মামলা আছে। এসব মামলায় আজ (মঙ্গলবার) অভিযোগ গঠন হয়েছে। ৯ মার্চ থেকে ধারাবাহিকভাবে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর পাহাড়তলী থানার ফৌজদারহাট শিল্প এলাকায় জহুর আহমেদ স্টেডিয়াম সংলগ্ন নূরজাহান গ্রুপের মেরিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের নামে কমার্স ব্যাংক থেকে ৫৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়। এ ঋণ পরিশোধের অংশ হিসেবে ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল মার্কেন্টাইল ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার বিপরীতে পাঁচ কোটি টাকার একটি চেক দেন। ওই বছরের ১২ জুলাই চেকের বিপরীতে কমার্স ব্যাংকের পক্ষ থেকে টাকা উত্তোলন করতে গেলে ‘অপর্যাপ্ত তহবিলের’ জন্য চেক ডিজঅনার হয়।

এরপর কয়েক দফা লিগ্যাল নোটিশ দিয়েও ঋণগ্রহীতার সাড়া পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে ২০১২ সালের ১৮ জুলাই তারা ঋণ পরিশোধে অস্বীকার করে। এ অবস্থায় কমার্স ব্যাংকের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখার ফার্স্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার বেলায়েত হোসেন বাদি হয়ে ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট জহির আহম্মদ ও টিপু সুলতানকে আসামী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

একইভাবে ওই ৫৫ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধের অংশ হিসেবে ২০১২ সালের ২১ মার্চ কমার্স ব্যাংককে ৬ কোটি টাকার একটি চেক হস্তান্তর করেন জহির ও টিপু। একই বছরের ২১ জুন চেকটি মার্কেণ্টাইল ব্যাংকে জমা দেয়ার পর সেটি ডিজঅনার হয়। তাদের নোটিশ দেয়া হয় ওই বছরের ১২ জুলাই। কিন্তু ১৫ জুলাই এসে তারা ঋণ পরিশোধে অস্বীকার করেন।

এ ঘটনায় কমার্স ব্যাংকের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখার ফার্স্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার বেলায়েত হোসেন বাদি হয়ে ২০১২ সালের ২৩ আগস্ট জহির আহম্মদ ও টিপু সুলতানকে আসামী করে আদালতে আরও একটি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে সোনালী ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের বিপরীতে ২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ৮০ কোটি টাকার মার্কেণ্টাইল ব্যাংকের একটি চেক প্রদান করেন মেসার্স জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান। পরদিন চেকটি জমা দেয়ার পর সেটি ডিজঅনার হয়। তাকে নোটিশ দেয়া হয় ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর টিপু সুলতান টাকা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানান।

এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ কর্পোরেট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বাদি হয়ে ২০১২ সালের ৮ অক্টোবর হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ও ১৪০ ধারায় টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন।

এছাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে নেয়া ঋণের বিপরীতে ২০১২ সালের ২০ জুন ও ২৬ জুন আলাদাভাবে পাঁচ কোটি টাকা করে মোট দশ কোটি টাকার দু’টি চেক প্রদান করেন নূরজাহান গ্রুপের মেসার্স জাসমিয়া ভেজিটেবল অয়েলের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান। একই বছরের ৫ আগস্ট চেক দু’টি সোনালী ব্যাংকে জমা দেয়ার পর সেগুলো ডিজঅনার হয়।

তাকে নোটিশ দেয়া হয় ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট। একই বছরের ২৮ আগস্ট টিপু সুলতান টাকা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানান। ২০১২ সালের ৮ অক্টোবর সোনালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ কর্পোরেট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বাদি হয়ে টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে আদালতে দু’টি মামলা দায়ের করেন।

মহানগর পিপি কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, এসব মামলায় জহির ও টিপু সুলতান বর্তমানে জামিনে আছেন।

এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি চেক প্রতারণার অভিযোগে দায়ের হওয়া পৃথক চারটি মামলায় জহির আহম্মেদ ও টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরদিন তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৪

** চার শিল্পপতির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।