ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সাংবাদিক মোয়াজ্জেমুল হকের

‘জীবনের বাঁকে বাঁকে’ ‘নন্দিত বেদনা’ ও আত্মনাশের সাতকাহন’

ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪
‘জীবনের বাঁকে বাঁকে’ ‘নন্দিত বেদনা’ ও আত্মনাশের সাতকাহন’

চট্টগ্রাম: সাংবাদিক মোয়াজ্জেমুল হকের দুটি উপন্যাস ও একটি গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে। অমিতাভ প্রকাশন থেকে তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘জীবনের বাঁকে বাঁকে’ ‘নন্দিত বেদনা’ ও তার প্রথম গল্পের বই ‘যাপিত জীবনে আত্মনাশের সাতকাহন।

’    

 

‘জীবনের বাঁকে বাঁকে’ বইটির ভূমিকায় মোয়াজ্জেমুল হক লিখেছেন, বইটিতে সুমন-অঞ্জলি নামের দুই যুবক-যুবতির প্রেম কাহিনী ও তাদের বিয়োগান্ত পরিণতির কথা আছে। তাদের প্রেম পেয়েছিল বিশাল ক্যানভাস।

আছে নাহিয়ান নামের আরেক যুবকের স্ত্রী হারানোর ট্রাজেডি ও নতুন অবলম্বন খুঁজে  পাওয়ার কথা। এছাড়াও আরো কয়েক পরিবারের কাহিনীসহ আছে সমাজ জীবনের নানা চালচিত্র। দীর্ঘ এ জীবনে আমার দেখা নানা অভিজ্ঞতাও বইটিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সমাজে এ ধরণের ঘটনা অহরহ জন্ম হচ্ছে। বলা যেতে পারে এ বইটি তারই এক প্রতিচ্ছবি। ’

 

‘নন্দিত বেদনা’ বইটির প্রধান চরিত্র হাসান ও চৈতী। পূর্ণ যৌবনে ওরা প্রেমে পড়ে। পরে সামাজিকভাবেই তাদের বিয়ে হয়। সংসার জীবনে নানা ঘাত-প্রতিঘাত শেষে চৈতীর অকাল মৃত্যু বিয়োগান্তক একটি ঘটনা। হাসান তার প্রিয় সন্তানদের অনাগত ভবিষ্যত বর্ণহীন বেদনায় নিমজ্জিত না করতে বাকি জীবন বিপত্নীক থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। চৈতীর মৃত্যুর নেপথ্যে আমাদের দেশে অপরাজনীতির সহিংসতার কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত যে তাজা প্রাণ ঝরে যায় তারই একটি প্রতিচ্ছবি। লেখক সেটিই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন মাত্র। সমাজের অন্যান্য নানা বাস্তব চিত্রও উঠে এসেছে এ বইয়ে।

 

মোয়াজ্জেমুল হক বলেন, এ বইতে যুদ্ধাপরাধ প্রসঙ্গটি এসেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে আমারও রয়েছে আকুণ্ঠ সমর্থন। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি। দেখেছি সে সময়ে পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতার কতো চিত্র। আমি রাজাকার- আল বদর বাহিনীর দৌরাত্ম্য ও মুক্তিকামী জনতার উপর ওদের নির্যাতন দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে লক্ষ্য করেছি। স্বাধীনতাকামীদের খুঁজে বের করে পাক হায়েনাদের হাতে তুলে দিতেও দেখেছি। পাক-বাহিনীও তাদের এদেশীয় দোসরদের পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনাবলীর কথা আমার স্মৃতি থেকে কখনো মুছবে না। তাই আলবদর, আলশামস, রাজাকার বাহিনী ও এর সদস্যদের প্রতি আমার ঘৃণা থাকবে আমৃত্যু। তাদের কৃত কর্মকাণ্ডের বিচার আমিও চাই কায়মনোবাক্যে। এ বয়সে এসে আমি অনুভব করি সে সময়কার বিষাক্ত পরিবেশের কথা।

 

তিনি বলেন, সংবাদপত্রে কাজ করি শুধু জীবিকা নির্বাহের জন্য নয়, আমার বিশ্বাসের দর্শন এবং গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নেয়াও আমার অন্যতম একটি ব্রত। আমি যে কাগজে গত বিশ বছর যাবত কাজ করছি সে কাগজের মূল নীতিও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের নীতি আদর্শকে এগিয়ে নেয়া। সাংবাদিকতায় এটা আমার বিশাল একটি প্লাস পয়েন্ট। এবইয়ে আমার নানা ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

 

‘যাপিত জীবনে আত্মনাশের সাতকাহন’। বইটি লেখকের প্রথম গল্পের বই। বর্তমান সময়ে আত্মহত্যা প্রবণতা কেবলই বাড়ছে। বাংলাদেশ জার্নাল অব মেডিসিন গেল বছর(২০১৩) এক গবেষণা রিপোর্টে বলেছে, লোক চক্ষুর অন্তরালে বাংলাদেশে আত্মহত্যার মহামারি চলছে। রিপোর্টটির অর্থ বিধ্বংসী। পৃথিবীতে যে কটি ধর্ম আছে এর প্রায় সবকটিতেই এ ধরণের কর্মকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ কাজকে পাপাচার বলেও আখ্যা দেয়া হয়েছে। আর আইনের চোখেতো অপরাধ। তাই এ ধরণের মৃত্যুকে অপমৃত্যু বলা হয়ে থাকে আইনী ভাষায়। আত্মহত্যার প্রচেষ্টা গ্রহণকারীকে একজন অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করারও আইন রয়েছে। কিন্তু এরপরও এ প্রবণতা থেমে নেই। বরঞ্চ প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে।

 

মোয়াজ্জেমুল হক বলেন, গল্পগুলো কল্পিত হলেও আত্মহত্যার বিভিন্ন চিত্র নিয়ে সমাজের বাস্তব ঘটনাবলীর চিত্রই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এ বইয়ের শেষ গল্পটি একেবারে শতভাগ সত্য এবং চট্টগ্রামের একটি উপজেলায় সংঘটিত। অভিভাবকরা তাদের এ বন্ধনকে মানবে না- এই চিন্তায় প্রেমিক যুগল আত্মহত্যা করলো। প্রেমিকার মায়ের দু’টি শাড়ি গলায় ও শরীরে পেঁচিয়ে গাছের ঢালে তারা ঝুললো। তাদের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী কবরও হলো লাগোয়া। আত্মহত্যার এ ঘটনা বর্তমান সময়ে প্রেম-ভালোবাসার জগতে অচিন্তনীয় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। আমি ব্যক্তিগতভাবে সকল আত্মহত্যাকারীদের প্রতি সহমর্মি। আত্মহত্যার মতো অপমৃত্যুর হাত থেকে সব বয়সীদের রক্ষা করা গেলে দেশ ও জাতিই উপকৃত হবে। তবে আমার এ গল্পগুচ্ছ অনেকের ভালো না লাগতেও পারে। তারপরও আমি আত্মহত্যার নানা চিত্র তুলে ধরেছি যা এ সমাজে ঘটেই চলেছে। বর্তমানে এ প্রবণতা বাড়ছে বলেই এসব নিয়ে লেখার ইচ্ছা জেগেছে। ’

 

সাংবাদিক মোয়াজ্জেমুল হক। জন্ম ১৯৫৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ায়। বাবার চাকরিসূত্রে বেড়ে উঠা রাঙ্গামাটিতে। কলেজ জীবনে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের ঘোর সমর্থক ছিলেন। সাংবাদিকতায় আসার পর অবিভক্ত বাংলাদেশ ফেডারেল(বিএফইউজে), চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন(সিইউজে), চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক হাউজিং সোসাইটি ও চিটাগাং রিপোর্টার্স কাউন্সিল(সিআরসি) এর বিভিন্ন পর্যায়ে থেকে সাংবাদিকতার উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

 

১৯৮১ সালে সাংবাদিকতায় তার হাতে খড়ি চট্টগ্রামের দৈনিক নয়া বাংলায়। এর পাশাপাশি দৈনিক জমানায়ও তিনি কাজ করেছেন। নয়াবাংলায় দীর্ঘ প্রায় একযুগ কাজ করেছেন। শেষ দিকে তিনি এ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সালে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন দৈনিক জনকণ্ঠে। বর্তমানে তিনি দৈনিক জনকণ্ঠের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ও চট্টগ্রাম অফিসের ব্যুরো প্রধান। মোয়াজ্জেমুল হকের প্রথম উপন্যাস ‘কতো যে স্বপ্ন মুকুলেই ঝরে যায়’ পাঠক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।