ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

উপজেলা নির্বাচন

আস্থাহীনতায় কমেছে ভোটার উপস্থিতি

মো. মহিউদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৪
আস্থাহীনতায় কমেছে ভোটার উপস্থিতি

চট্টগ্রাম: দশম জাতীয় সংসদের পর বুধবার প্রথম দফা উপজেলা নির্বাচন শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় এ নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুব কম।

ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারা দুপুরের পরে ভোটার উপস্থিতিও বাড়ার আশা করলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।  

বুধবার উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হলেও ভোট কেন্দ্রগুলো ছিল ফাঁকা।
সাড়ে ৮টার দিকে কম সংখ্যক ভোটারদের ভোট দিতে দেখা গেছে। ভোটারদের উপস্থিতি সংখ্যা কম দেখে সারাদিন প্রার্থীরা ছিল অনেকটা হতাশ।  

সাধারণ ভোটার ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন আস্থাহীনতার কারণেই ভোটারদের আগ্রহ কমেছে।
 
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাটহজারীতে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফলে এখানে ভোট গ্রহণ হয়নি। অনেকেই মনে করেছিলেন উপজেলা নির্বাচনে ভোটারদের সরব উপস্থিতি থাকবে। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। উপজেলা নির্বাচনেও ভোটারদের তেমন কোন আগ্রহ দেখা যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলাকায় দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন না করা এবং বিজয়ী হওয়ার পর প্রার্থীরা সাধারণ মানুষের পাশে না থাকার কারণে স্থানীয় নির্বাচনে আগ্রহ হারাচ্ছে সাধারণ ভোটাররা।

তারা বলছেন, ভোটাররা চায় তাদের জীবন মান উন্নয়ন। যে কোন পরিস্থিতিতে পাশে চান জন প্রতিনিধিদের। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের পাশে পান না জনগণ। ফলে নির্বাচন নিয়ে কোন উৎসাহ ছিল না তাদের।

ভোটের প্রতি আস্থা নেই!
ভোটের প্রতি আস্থা হারানোর কারণেই কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। তারা বলছেন, ভোট দিলেও যা না দিলেও তা। ভোট দিয়ে কিছুই হয়নি।

বুধবার ভোট গ্রহণ চলাকালে হাটহাজারী উপজেলা বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার ও সাধারণ মানুষদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।

বুধবার সকালে সাড়ে ৯টায় হাটহাজারী উপজেলার ১নম্বর ফরহাদবাদ ইউনিয়নের ইউছুফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব শাহাব মিয়ার সঙ্গে।

ভোটারদের উপস্থিতি কম কেন জানতে চাইলে অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এ বৃদ্ধ। তিনি বলেন, ভোটের প্রতি মানুষের এখন আর আস্থা নাই। ভোট দিলে যা না দিলেও তা। দেশে কোন শান্তি নাই।

প্রার্থীর কেন্দ্রে উপস্থিতি বেশি
হাটহাজারী উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১০৬টি। দিনভর সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রই ছিল ফাঁকা। তবে ভিন্ন চিত্র ছিল প্রার্থীদের কেন্দ্রে। প্রার্থীদের নিজ নিজ কেন্দ্রে অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি।

দুপুর ১টায় উপজেলার চারিয়া বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সেখানে প্রায় সাড়ে ৮শ ভোট কাস্ট হয়েছে। এই কেন্দ্রের ভোটার হেফাজত সমর্থিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির।

একই সময়ে অন্যান্য অনেক কেন্দ্র ছিল যেখানে ৩০০ ভোটও কাস্ট হয়নি।   

এমন চিত্র দেখা গেছে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যক্ষ মো.ইসমাইলের কেন্দ্রেও। বুধবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে আলমপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় এক হাজার ৩০০ ভোট কাস্ট হয়েছে সেখানে।

ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো.গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, দুই হাজার ৫২৫ ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৩২৫ জন পুরুষ ও এক হাজার ২৩৯ জন নারী ভোটার।

নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত- হেফাজত!
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল মনছুরের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। ফলে হাটহাজারী উপজেলার ভোটাররা শেষ পর্যন্ত ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে ধারণা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াই হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই দলীয় প্রার্থীর মধ্যে। চেয়ারম্যান পদে বিএনপি প্রার্থী মাহবুবুল আলম বিজয়ী হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে হেফাজত সমর্থিত মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত সমর্থিত মনোয়ারা বেগম বিজয়ী হতে পারেন।  

হাটহাজারীতে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।